মহা বিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ: ফখরুল
প্রকাশ : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:৪০
মহা বিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ: ফখরুল
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ মহা বিপর্যয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।


মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।


তিনি বলেন, মহা বিপর্যয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক সংকট কেটে যাওয়ার কোন লক্ষণ নেই। বরং সংকট আরো ঘনীভূত হচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রায় সবকটি সূচকই আরো দুর্বল ও প্রকট হয়ে উঠেছে। অসহনীয় মূল্যস্ফীতি, নজিরবিহীন ডলার সংকট, ডলারের বিনিময়ে টাকার অভূতপূর্ব অবমূল্যায়ন, ব্যাংকিং ও আর্থিক অব্যবস্থাপনা, অপরিণামদর্শী ভ্রান্ত নীতি, অদক্ষ ও দলকানা নীতি বৈষম্য, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, বিদেশে অর্থপাচার, ঋণ প্রাপ্তির অপর্যাপ্ততা, সুশাসনের অভাব, সামাজিক-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আয় বৈষম্য এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রহীনতা বর্তমান অর্থনৈতিক নৈরাজ্যের মূল কারণ।


'সরকার অবশেষে বিরাজমান অর্থনৈতিক দুর্যোগের কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে কঠিন শর্তে আইএমএফ এর নিকট থেকে ঋণ নিচ্ছে। বলতে গেলে সরকার এখন ব্যাংক থেকে ধার করে এবং আইএমএফ এর ঋণের উপর ভর করেই চলছে।'


মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান বাংলাদেশে চারিদিকে শুধু হাহাকার, নাই আর নাই। সমগ্র দেশটিই যেনো এক ‘নাই’-এর রাজ্যে পরিণত হয়েছে। এই হাহাকার অবশ্য সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট ও সুবিধাভোগী নব্য ধনীদের জন্য নয়। সেই কুখ্যাত গোষ্ঠী সম্মিলিতভাবে সাধারণ মানুষের রক্ত চুষে দিব্যি ভালো আছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তারা দেদারসে অর্থ লোপাট করছে। ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে।


"অর্থ পাচার করে বিদেশে গাড়ি বাড়ি ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। সিঙ্গাপুরসহ দেশে দেশে শ্রেষ্ঠ ধনীর তালিকাভুক্ত হচ্ছে। দেশে-বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছে। আর অন্যদিকে গরীব আরও গরীব হচ্ছে। মানুষ সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে। বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, করোনা উত্তরকালে প্রায় চার কোটি মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছে। এক রিপোর্টে বলা হয়েছে বর্তমানে ৪২ শতাংশ মানুষ দরিদ্র। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের উচ্চমূল্যের যাঁতাকলে মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। অর্থনীতি আজ মহাসংকটে নিমজ্জিত। রাষ্ট্রযন্ত্র অকার্যকর হয়ে পড়েছে।'


তিনি বলেন, এক মাসে ২ বার বিদ্যুত ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি-সরকার গত একমাসে দুইবার বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের গড় মূল্য ছিল ৩ টাকা ৭৩ পয়সা। নতুন মূল্যহার কার্যকরের ফলে বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৭ টাকা ৪৯ পয়সা। অর্থাৎ ১৩ বছরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১০০ দশমিক ৮০ শতাংশ। বলা হয়েছিল জরুরি পরিস্থিতিতে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম সরকার বাড়াবে। কিন্তু কোনো জরুরি পরিস্থিতি ছাড়াই বিইআরসি'কে পাশ কাটিয়ে গণশুনানি ছাড়া এ ধরনের মূল্য বৃদ্ধি সম্পূর্ণ বেআইনি।


রিজার্ভ তলানিতে, ডলারের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, অর্থনীতি টালমাটাল অবস্থায় আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) ১১২ কোটি ডলার পরিশোধের পর সরকারি হিসাব মতে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছিল ৩২.৫৭ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ২৫৭ কোটি ডলার। কিন্তু আইএমএফ এর হিসাবে এর মধ্যে ৮ বিলিয়ন বা ৮০০ কোটি ডলার ব্যবহারযোগ্য নয় বিধায় রিজার্ভ দাড়ায় ২৪.৫৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৫৭ কোটি ডলারে। বর্তমানে প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।


তিনি বলেন, সংকট যতনা বৈশ্বিক তার চেয়ে বেশি আভ্যন্তরীণ-সরকার বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকটের জন্য ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক রাজনীতিকে দায়ী করে থাকে যা সত্য নয়। যদিও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, "অর্থনৈতিক সংকট যতটা না বৈশ্বিক সৃষ্টি, তার চেয়ে বেশি আভ্যন্তরীণ।" কিন্তু স¤প্রতি আওয়ামীলীগ এর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব মন্তব্য করেছেন, "দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির দায় বিএনপি সরকারের ওপর চাপাতে চায়।” তার মন্তব্য সারাদেশে হাস্য কৌতুকের উদ্রেক করেছে।


'গত দেড় দশক ধরে অবৈধভাবে সরকারের গদি আঁকড়ে আছে আওয়ামী লীগ, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বিপর্যয় এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির দায়তো আওয়ামী লীগ সরকারকেই বহন করতে হবে। কে না জানে যে করোনার প্রাদুর্ভাব এবং ইউক্রেন যুদ্ধের অনেক আগ থেকেই বাংলাদেশের অর্থনীতি ঝুলে গিয়েছিল। দুর্নীতি, বাজার সিন্ডিকেট ও অব্যবস্থাপনার ফলে দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকলে মানুষ ছিল পিষ্ট।'


সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য আর্থিক খাতের সংস্কার সাধন অত্যাবশ্যক উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, টেকসই অর্থনীতির প্রয়োজনে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার উন্নতি এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা দরকার। কর-শুল্ক, আর্থিক খাত, ব্যাংকিং সেক্টর, বাজেট ব্যবস্থাপনা এবং বাণিজ্য নীতির সংস্কার আবশ্যক। এজন্য প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত আইনের শাসন এবং প্রকৃত অর্থেই জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত একটি গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি আশা করে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও আর্থিকখাতে কার্যকর সংস্কার সাধনে একটি প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য আইএমএফ বিশেষ সহযোগিতার হাত বাড়াবে।


বাংলাদেশে চলমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট একটি জাতীয় সংকটে পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই দুর্বিষহ জাতীয় সংকট থেকে মুক্তি পেতে ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে সকল রাজনৈতিক মতপার্থক্য ভুলে এই অবৈধ সরকারকে হটানোর জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে এবং বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবি আদায়ে দুর্বার গণআন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে, পতন ঘটাতে হবে বর্তমান গণবিরোধী নিশিরাতের ভোটডাকাত সরকারের। প্রতিষ্ঠা করতে হবে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার, যার অধীনে এদেশের তরুণ প্রজন্মসহ সমগ্র জনগণ নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তারেক রহমান ঘোষিত “রাষ্ট্রকাঠামো মেরামত” এর ২৭ দফা বাস্তবায়নে কাংখিত জাতীয় সরকার গঠন করবে।


'আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি'র নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনে বিজয়ের মাধ্যমে আগামি দিনে দেশের চলমান আর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট দুরীভুত করা সম্ভব হবে, ইনশাআল্লাহ।'


বিবার্তা/কিরণ/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com