সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য করবে বিএনপি
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:০৮
সরকারকে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য করবে বিএনপি
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আন্দোলন বেগবান করে ক্ষমতাসীনদের পদত্যাগে ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।


১৫ ফেব্রুয়ারি, বুধবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।


এসময় খন্দকার মোশাররফ বলেন, বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, জনগণের দূর্ভোগ মোচন এবং দেশ ও দেশের জনগণকে দুর্নীতি, অনাচার, লুট ও ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে অন্যায় ভাবে কারারুদ্ধ বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক কারণে আটক নেতা-কর্মীদের মুক্ত করতে যে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে তা ক্রমান্বয়ে বেগবান হয়ে অবৈধ সরকারকে পদত্যাগে ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য করবে ইনশাআল্লাহ।


তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের জন্য নির্ধারিত দিনের আগের রাতেই রাষ্ট্রক্ষমতা ব্যবহার করে দলীয়করণকৃত প্রশাসন ও পুলিশ এবং দলীয় পান্ডাদের দিয়ে ব্যালট বাক্স বোঝাই করে যে সরকার জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসার নির্লজ্জ বড়াই করে-সেই নিশাচর সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট, অযোগ্যতা ও অব্যবস্থার ফলে বিদ্যুৎ, গ্যাস, জ্বালানি, সার, চাল, ডাল, আটা, মাছ, মাংস, ডিম ও মরিচসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব কিছুর মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি যাতায়াত, বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও শিক্ষার ক্রমবর্ধমান ব্যয়বৃদ্ধির ফলে দেশের জনগণ আজ অতিষ্ট, ক্ষুব্ধ এবং অনিবার্য্য কারণেই তারা প্রকাশ্যেই প্রতিবাদ জানাচ্ছে।


খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরও বলেন, দেশের জনগণ এই দুঃসহ বর্তমান এবং অনিবার্য্য ধ্বংস থেকে বাঁচতে চায়। তাদের সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ ও অক্ষম সরকারের পরিবর্তন চায় বলেই বিরোধী দলের সভা, সমাবেশ, মিছিলে তারা সক্রিয় ভাবে অংশ নিচ্ছে, হামলা, মামলা, নির্যাতন অগ্রাহ্য করতে সাহসী হয়েছে এবং বিজয়ের লড়াইকে বেগবান করছে।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও নগদ দেশি-বিদেশি মুদ্রার অভাবে শিল্প-বাণিজ্য ও কৃষি যে সংকটে পড়েছে, তা থেকে মুক্তির পথ দেখা যাচ্ছে না। এর উপর সরকার, সরকারি দল এবং তাদের ঘনিষ্ঠ জনেরা দেশের সরকারি, বেসরকারি ব্যাংকগুলো থেকে ক্ষমতাসীনদের সহযোগিতায় ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করছে। সেকেন্ড হোম, বেগম পাড়া, দুবাইয়ে গুলশান-৩ আর সুইসব্যাংকে জমা হচ্ছে এসব লুটের টাকা। আর বিদ্যুৎ-গ্যাস, জ্বালানি ও সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের পকেট কেটে তাদের ফতুর করে দিয়ে তথাকথিত উন্নয়নের নামে ধোঁকা দেয়া হচ্ছে। একদিকে কর্মহীন, ভূমিহীন, গৃহহীন মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে আর অন্যদিকে বাড়ছে হাতে গোনা কিছু মানুষের অবৈধ সম্পদ। ঋণ বাড়ছে দেশ, দেশের মানুষ ও দেশের শিল্প-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের।


মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় যখন দেশের স্বার্থে সকলের একযোগে কাজ করা দরকার, তখন অবৈধ ও দুর্নীতিবাজ সরকার সমস্যার সমাধানের পরিবর্তে জনগণের স্বার্থে যারা কথা বলে তাদের উপর লাঠিচার্জ করে, গুলি চালিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করে, নির্যাতন করে স্বৈরাচারী কায়দায় ক্ষমতায় টিকে থাকার শেষ চেষ্টা করছে। ইতিহাস সাক্ষী এমন চেষ্টা অতীতে যেমন ব্যর্থ হয়েছে এবারেও হতে বাধ্য।


'জনগণের সংকট মোচনের লক্ষ্যে ঘোষিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ১০ দফা দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনের জন্য সরকার পুলিশী হামলা-মামলার পাশাপাশি শান্তি সমাবেশের নামে প্রতিনিয়ত জনগণকে ভয় দেখানো, সভা-মিছিলে হামলা করে আহত, নিহত, নির্যাতীত করে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা দিয়ে এবং বিরোধী দলের প্রতিটি কর্মসূচির দিন পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে ক্রমাগত দ্বন্ধ ও সংঘাতের উষ্কানী দিচ্ছে। বিরোধী দল সচেতন ভাবে এসব প্ররোচনার ফাঁদে পা না দেয়ায় সরকারি দলের মন্ত্রী ও নেতারা হতাশ হয়ে আবোল তাবোল কথা বলে লোক হাসাচ্ছে।


তিনি বলেন, অতি সম্প্রতি সরকারের অনুগত কয়েকটি টিভি চ্যানেলে কয়েক বছর আগে ডিজিটাল কায়দায় বানানো এমন এক ভিডিও প্রচার করেছে যা দেখলে যে কোন সাধারণ নাগরিকও বুঝবে যে, এটা নোংরা রাজনৈতিক অপপ্রচারের এক বানোয়াট ও নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত। সরকারি দলের অরাজনৈতিক অপকৌশলের পাশাপাশি আমরা তদের সহযোগী অনুগত মিডিয়ারও অনৈতিক কার্যক্রমের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।


'এই ভিডিও প্রচারের পর কমেন্ট বক্স ও সোস্যাল মিডিয়ায় সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোর নির্মম অথচ সঠিক সমালোচনার ঝড় বইছে। কাজেই এ ব্যাপারে নতুন কিছু না বলে আমরা শুধু বলবো যে, চলমান গণআন্দোলনকে বাধাগ্রস্থ এবং দেশের সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার এই বৃথা অপচেষ্টা মাঠে মারা গেছে। জনগণ প্রতিদিনের জীবনে যে নির্মম অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছেন তা ভুলিয়ে দেয়ার কিংবা তা থেকে মুক্তির যে লড়াই তা থামিয়ে দেয়ার সাধ্য কোন ভূয়া ভিডিও কিম্বা কোন চ্যানেলের অপপ্রচারের নেই। থাকেনা কখনও।'


ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকারি দলের সম্মেলনের দিন আমরা ঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করেছিলাম। অথচ তারা আমাদের প্রতিটি কর্মসূচির দিন পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে চলেছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এসব ঘটনা বর্জনীয় বলেই তা জনগণ প্রত্যাখ্যান করে নিন্দা জানায়। জনগণ আশা করে সরকারী দল রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে এমন সহিংস তৎপরতা বন্ধ করবে।


বিবার্তা/কিরণ/জামাল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com