পর্যটকেরা সাদা পাথর ও জাফলংয়ে কেন দুর্ঘটনায় পড়ছেন?
প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৩, ১০:২০
পর্যটকেরা সাদা পাথর ও জাফলংয়ে কেন দুর্ঘটনায় পড়ছেন?
সিলেট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

রসিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাদা পাথর ও গোয়াইনঘাটের জাফলং পর্যটনকেন্দ্রে চার দিনের ব্যবধানে দুই পর্যটক গোসলে নেমে নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে। দুটি ঘটনাতেই দুই দিন পর তাঁদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত দুজনের মধ্যে একজন তরুণ, অন্যজন কিশোর। প্রতিবছরের বর্ষা মৌসুমে সিলেটের এ দুই পর্যটনকেন্দ্রে বেড়াতে গিয়ে পর্যটকেরা পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার একাধিক ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় প্রশাসন, বিশ্লেষক, পুলিশ এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব দুর্ঘটনার পেছনের কারণগুলো সম্পর্কে কিছু ব্যাখ্যা জানা গেছে।


ট্যুরিস্ট পুলিশ জাফলং সাব জোনের পরিদর্শক মো. রতন শেখ বলেন, জনবল কম থাকার পরও জাফলংয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। তিনি নিজে পিয়াইন নদের জিরো পয়েন্ট এলাকায় পর্যটকেরা যাতে স্রোতের পানিতে না নামেন, সে জন্য হ্যান্ডমাইকে নির্দেশনা দিয়ে থাকেন। কম জনবল দিয়ে চেষ্টার কোনো ত্রুটি না করেও এমন ঘটনা ঘটছে। পর্যটনসংশ্লিষ্ট আরও নানা কমিটি থাকলেও কাউকে সোচ্চার হতে দেখা যায় না। ফলে কার্যক্রম শুধু ট্যুরিস্ট পুলিশের ওপরই বর্তাচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দারাসহ প্রশাসনের অন্যান্য শাখা থেকে সহযোগিতা করলে এমন ঘটনা শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।


দুই পর্যটন এলাকার আরও কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানিতে পাথরগুলো থাকার কারণে এতে শেওলা জমে। এ শেওলায় পা পিছলে অনেকে পড়ে যান। এ সময় পানির স্রোত বেশি থাকায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আবার কখনো পা পিছলে গিয়ে পাথরে পড়ে মাথায় আঘাত পান। এতে জ্ঞান হারিয়ে পানিতে ভেসে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।


স্রোতের স্বচ্ছ পানি দেখে অনেকে লোভ সামলাতে না পেরে সাঁতার না জানলেও গোসলের জন্য পানিতে নেমে পড়েন। স্বচ্ছ পানি থাকায় গভীরতা বোঝা যায় না বলে পর্যটকেরা গভীর পানিতে চলে যান। এতে বর্ষার বাড়ন্ত পানি ভাসিয়ে নিয়ে যায়। অনেকে স্রোতের পানিতে গা ভাসিয়ে রাখেন। এ সময় স্রোতে তালিয়ে যান।


গোয়াইনঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাহমিলুর রহমান বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একাধিকবার পর্যটনকেন্দ্রে সতর্কতামূলক বিলবোর্ড স্থাপন করা হয়েছিল। তবে বন্যার পানিতে সেগুলো ভাসিয়ে নিয়ে যায়। নদের পানি বর্ষা মৌসুমে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে জানিয়ে তিনি বলেন, এ সময় পর্যটকদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। স্রোতের পানিতে না নামতে বলা হয়। কিন্তু মানুষের মধ্যে এসব নিষেধাজ্ঞা শোনার প্রবণতা কম থাকে। শুধু পুলিশ ও প্রশাসন নয়, পর্যটকদের সচেতন ও সতর্ক করার জন্য স্থানীয় মানুষজনেরও সম্পৃক্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। স্রোতের পানিতে না নামার পাশাপাশি পানিতে নামলে লাইফ জ্যাকেট পরার দিকে নজর রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।


কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও লুসিকান্ত হাজং বলেন, সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্রে বর্ষা মৌসুমে প্রাণহানির পেছনে সতর্কতা ও সচেতনতার অভাব দেখছেন। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে হ্যান্ডমাইক নিয়ে দুজন স্বেচ্ছাসেবী সার্বক্ষণিক পর্যটনকেন্দ্রে থাকেন। তাঁরা পর্যটকদের স্রোতের পানিতে না নামার আহ্বান জানান। নৌকার ঘাটে সাইনবোর্ড দিয়ে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে পানিতে না নামতে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে। এরপরও মানুষ এগুলো শুনতে চান না। পর্যটকদের সতর্ক করার জন্য ঘাটে মাইক লাগানো এবং নৌকার টিকিটের পেছনে আরও কিছু নির্দেশনা দিয়ে প্রচারণা চালানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষের শরীর দৌড়াদৌড়ির পর কিংবা হাঁটাহাঁটির পর গরম হয়ে যায়। সে অবস্থায় পানিতে নামলে শরীরের মাংসপেশি ঠান্ডা হয়ে যায়। আর এমনিতে পাহাড় বেয়ে নেমে আসা পানি পাথর ছুঁয়ে ঠান্ডা অনুভূত হয়। এমন অবস্থায় পানিতে নামলে শরীর নাড়াচাড়া করা সম্ভব হয় না। এতে সাঁতার জানলেও স্রোতের টানে পানিতে চলে গিয়ে ডুবে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। এর জন্য যাঁরা সাঁতারু, তাঁরা সাঁতারে নামার আগেই শরীরের সঙ্গে পানির একটি যোগসূত্র তৈরি করেন। সাঁতারের আগে পানিতে কিছু সময় তাঁদের হাত নাড়াতে দেখা যায়। আবার হাত-পা পানিতে ভিজিয়ে নেন অনেকে। পরে পানিতে নামেন। নদের পানিতে বালু থাকে। বালুতে দাঁড়িয়ে থাকলে স্রোতের পানির সঙ্গে পায়ের নিচের বালুগুলো সরে যায়। এতে অভ্যস্ত নন পর্যটকেরা। অনেক সময় এর ফলে ভয়ে হার্ট অ্যাটাকও করেন অনেকে।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com