শিরোনাম
‘যৌন নিপীড়ন রোধে প্রতিষ্ঠানগুলোতে আলাদা সেল থাকা জরুরি’
প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০১৮, ২০:০০
‘যৌন নিপীড়ন রোধে প্রতিষ্ঠানগুলোতে আলাদা সেল থাকা জরুরি’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রতিষ্ঠানগুলোতে যৌন নিপীড়ন রোধে একটি সেল গঠন করা প্রয়োজন। তদন্ত চলাকালে অভিযুক্তদের কর্মবিরতিতে রাখা প্রতিষ্ঠানগুলোর নৈতিক দায়িত্ব। একই সাথে তদন্ত কার্যক্রম ৪৫ দিনের বেশি হওয়া উচিত নয়।


বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্চে আয়োজিত ‘বাংলাদেশে #মিটু আন্দোলনের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে আলোচকরা এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।


বৈঠকে আইন ও সালিশ কেন্দ্রে কর্মরত শীফা হাফিজ বলেন, সাহসীদের অভিনন্দন। যারা তদন্ত কমিটি গঠন করছেন, তাদের একটি বিষয় মনে রাখতে হবে যে, কমিটিতে বাইরের প্রতিষ্ঠানের অন্তত দুইজনকে রাখতে হবে। যাদের যৌন হয়রানি ইস্যু নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে।


অনুষ্ঠানে নারী অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা আইনজীবী সালমা আলী বলেন, প্রচলিত আইনেই এসব অভিযোগের প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া রায় কার্যকর হলে এমন সমস্যার আশু সমাধান সম্ভব। যেখানে প্রমাণ থাকা স্বত্ত্বেও অনেক অপরাধী পার পেয়ে যায়, সেখানে প্রমাণ ছাড়া অপরাধীরা পার পেতে চাইবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ আমরা জানি অপরাধ করে তা স্বীকার করার সংস্কৃতি আমরা এখনো তৈরি করতে পারিনি।



# মিটু মুভমেন্ট-বাংলাদেশ আয়োজিত গোল টেবিল বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক বলেন, আমাদের সবাইকে মুখ খুলতে হবে। সঙ্গে নিতে হবে পুরুষদেরকেও। প্রতিষ্ঠানগুলোতে যৌন নিপীড়ন রোধে আলাদা একটি সেল গঠন করতে হবে। যাতে নারীরা নির্বিঘ্নে তাদের কথা জানাতে পারে। প্রতিকার পেতে পারেন।


সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কূটনীতিক ড. ওহিদুর রহমান টিপু বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে পুরষ্কার পাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বদানকারী দেশে এমন হীন কাজ সমসময় নিন্দিত হবে। যারা নিপীড়ক তারেদেক সতর্ক করে বলতে চাই আপনারা সাবধান হয়ে যান। তা না হলে রেহাই পাবেন না।


নিপীড়করা ভয় পাচ্ছে বলেই আন্দোলন থামানোর চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বক্তারা। গোল টেবিলে বৈঠকে মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম বলেন, #মিটু নারী জাগরণের জন্য মাইলফলক। আগে কখনই ভিকটিম এবং অভিযুক্তের নাম বলা হতো না। আর এখন ভিকটিম নিজেই অভিযুক্তের নাম প্রকাশ করছে। এটি একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন। এই পরিবর্তন অত্যন্ত ইতিবাচক এবং আমি এজন্য সাহসীদের সাধুবাদ জানাই।


অনুষ্ঠানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারপার্সন কাবেরী গায়েন বলেন, প্রমাণ চেয়ে নিপীড়তদের আরেকদফা হয়রানি করা হচ্ছে। কারণ আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় প্রমাণিত অপরাধগুলোরই তেমনশাস্তি নিশ্চিত করা হয় না। যেখানে মেয়েরা যে বলছেন এটা অবশ্যই একটি বড় মাইলফলক, পুরুষের মুখোশ উম্মোচনের এ লড়াই আমাদেরকে সামনের দিকেই এগিয়ে নিতে হবে।


বৈঠকে নাট্য ব্যক্তিত্ব মাসুম রেজা বলেন, আমি জমজ কন্যা সন্তানের পিতা হিসেবে বলতে চাই। আমাদের মেয়েদের জন্য এ আন্দোলনটা আসলে সবার হওয়া উচিত। এটা শুধু মেয়েদের আন্দোলন নয়, এটা গোটা সিস্টেম ভাঙার আন্দোলন।


বৈঠকে দেশইনফো.কম.বিডির বাংলা বিভাগের বার্তা সম্পাদক মাসুদ কামাল বলেন, এই আন্দোলনে নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরকেও যুক্ত করতে হবে। এ আন্দোলনকে শুধুমাত্র একটি ক্লাসে রাখলে সফলতা আসবে না। সফলতা আনতে হলে সব শ্রেণিপেশার পুরুষকে যুক্ত করতে হবে। কারণ অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধেই। সুতরাং তারা যতদিন বদলাবে না ততদিন এ আন্দোলন সফল হবে না।



গোল টেবিল বেঠকে বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ হারুন উর রশীদ বলেন, বহু পুরনো ঘটনা হলেও প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো ব্যবস্থা নিতে পারে। সামাজিক দায়বদ্ধতা, নীতি-আদর্শগত অবস্থান থেকে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থা নিতে পারে।


তিনি বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলে সেই প্রতিষ্ঠান তার নিজ প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিবেশ রাখতে পদক্ষেপ নিতে পারেন। মিডিয়া সংবাদ প্রচার করবে এটাই তো নিয়ম। সুতরাং এই সংবাদ প্রচারের কারণে কোনো প্রতিষ্ঠানকে হয়রানি করা অপরাধ। সুতরাং বাধা না হলেও অভিযুক্তকে কর্মবিরতিতে রেখে তদন্ত শেষ করার তাগিদ প্রতিষ্ঠান দিতেই পারেন। সেই সাথে এই তদন্ত প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত যাতে না হয় সেদিকেও নজর দেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।


অনুষ্ঠানে নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুল আরা হক মিনু বলেন, এটি কেবল গণমাধ্যমের বিষয় না। এটি আমাদের জাতীয় সমস্যা। এ সমস্যার সমাধানে আমাদের জাতীয়ভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।



বৈঠকে আরো অংশ নেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন, কুররাতুল আইন তাহমিনা মিতি (জৈষ্ঠ সাংবাদিক, প্রথম আলো), নাদিরা কিরণ (সিনিয়র সাংবাদিক, এটিএন বাংলা), উদিসা ইসলাম (বার্তা প্রধান, বাংলা ট্রিবিউিন), রোকসানা ইয়াসমিন তিথি, (সিনিয়র সাংবাদিক, বাসস), শারমীন রিনভী (সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ উইমেন জার্নালিস্ট ফোরাম), আইরিন নিয়াজী মান্না (সিনিয়র সাংবাদিক), রীতা নাহার (সিনিয়র প্রতিবেদক, বৈশাখী টেলিভিশন), ফাহমিদা হক (সিনিয়র সাংবাদিক, চ্যানেল আই), সেবিকা দেবনাথসহ সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ।


অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন অনলাইন নিউজ পোর্টাল দেশইনফো.কম.বিডির নির্বাহী সম্পাদক সাজেদা হক।


বিবার্তা/রোকন/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com