শিরোনাম
আশা ইউনিভার্সিটিতে সুচিন্তা’র জঙ্গিবাদবিরোধী সেমিনার
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০১৮, ১৭:৫৭
আশা ইউনিভার্সিটিতে সুচিন্তা’র জঙ্গিবাদবিরোধী সেমিনার
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

‘জাগো তারুণ্য রুখো জঙ্গিবাদ’ এই স্লোগানে রাজধানীর আশা ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের জঙ্গিবাদবিরোধী সেমিনার। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফাহ্মী গোলন্দাজ বাবেল।


বিশ্ববিদ্যলয়টির শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বৈশ্বিক একটি আতঙ্কের নাম জঙ্গিবাদ। কতিপয় গোষ্ঠী, ধর্মের নামে তরুণদের মিথ্যা ধর্মীয় ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে জঙ্গিবাদেরমত ভয়ঙ্কর পথে তরুণদের ঠেলে দেবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য ইসলাম প্রচারের নামে বিশ্বের বুকে মুসলিমদের হেও করা। এটি বিশ্ব রাজনীতির একটি ভয়ঙ্কর খেলা, ক্ষমতার খেলা। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে। ধর্মের অপব্যাখ্যায় কান দেওয়া যাবে না। পরিচিতজনদের মধ্যে কাউকে সন্দেহ হলে আইনের সহায়তা নিতে হবে।


ফাহ্মী গোলন্দাজ বাবেল বলেন, জঙ্গিবাদ শব্দটির সাথে আমরা পরিচিত হয়েছি আল কায়দা ও আইএস নামের সংগঠনটির মাধ্যমে। ইসলামের নামধারী এসব সংগঠন ধর্মের ভূল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষ হত্যা জায়েজ বলে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।


সংসদ সদস্য বলেন, ইসলামিক স্টেট বা আইএস'র নেতা খলিফা আবু বকর বাগদাদী একজন ইহুদী ছিলেন। তখন তার নাম ছিল তাকাইন সিমন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের পর তার নাম রাখেন খলিফা আবু বকর বাগদাদী। ইহুদীরাই ইসলাম ধর্মের বড় শত্রু ছিল। আর একজন ইহুদী হয়ে মুসলমানদের নিয়ে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস এবং অশান্তির খেলায় নেমেছে। লক্ষ্য করলে দেখবেন, শেলাকিয়ায় ঈদের নামাজ পালন অবস্থায় কি নির্মম হামলা চালানো হয়েছিল। একজন মুসলমান কি নামাজরত অবস্থায় অন্য মুসলমানের উপর হামলা চালাতে পারে? কোনো দিনও পারে না। হলি আর্টিজানে হামলা করা হলো। আমাদের নবীজী (সা.) বলেছেন, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না, যার যার ধর্ম সে সে পালন করো। তাহলে একজন মুসলমান হয়ে কীভাবে আরেক মুসলমানের উপর হামলা চালানো হচ্ছে। এসব ভুল ব্যাখ্যাকারীদের থেকে সাবধান হতে হবে এবং তাদের প্রতিহত করতে হবে।


অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর ও আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য কানতারা খান। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদের সংজ্ঞা একেক জনের কাছে একেকরকম। আমি মনে করি সঠিক পথ রেখে ভূল পথে যেয়ে অন্যায়, মিথ্যাচার বা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করাই জঙ্গিবাদ। জঙ্গিরাও ঠিক একই কাজ করে আসছে। ধর্মের নামে মিথ্যচার করছে, বেহেশত্রে প্রলোভন দেখাচ্ছে, এবং বিশাল সম্ভাবনাময় তরুণতের জিহাদের নামে আত্মহত্যা করতে বাধ্য করছে।


কানতারা খান বলেন, এই জঙ্গিবাদের ফলেই সমৃদ্ধশালী বেশ কয়েকটি দেশ আজ ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল, ফিলিস্তিনি, ইরাক এমনকি পাকিস্তানের মত দেশের আজ ভয়ঙ্কর পরিনতি। জঙ্গিহামলার কারনেই পাকিস্তানে প্রায় ৮ থেকে ১০ বছর ধরে কোন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয় না। আমাদের দেশকে নানাভাবে টার্গেট করা হয়েছিল কিন্তু পারেনি প্রধানমন্ত্রী জঙ্গিদমনে জিরো টলারেন্স নীতির কারণে। এদেশের কিছু দেশদ্রোহীদের সহযোগিতায় একসাথে ৬৩টি জেলায় বোমাহামলা, ২১ আগষ্ট গেনেড হামলা, হলি আর্টিজানে নিরিহ বিদেশিসহ সাধারণ মানুষদের উপর হামলার মাধ্যমে জঙ্গিবাদ দানা বাঁধার চেষ্টা করেছিল। সরকার তা শক্ত হাতে দমন করছে। তবে কুচক্রী মহল এখনও নানা ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের সচেতন হতে হবে। জয় বাংলা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করলে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়াতে পারবে না। গড়ে উঠবে বঙ্গবন্ধুর ‘সোনার বাংলা’। যেখানে থাকবে না ধর্মের নামে হানাহানি, থাকবে না জঙ্গি ও জঙ্গিবাদ।


অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী সেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সংসদের পানিসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, তরুণরাই আজ ও আগামীর ভবিষ্যৎ। আজ এই তরুণদেরকেই টার্গেট করা হচ্ছে নানা জঙ্গি হামলায়। এটা খুব ভীতিকর। ধর্মের নামে বেহেশতের আশায় নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিচ্ছে এই তরুণরাই। এটা রুখতে হবে পরিবার থেকে। পরিবার থেকেই শিক্ষা দিতে হবে সঠিক ইসলামের। সামাজিক নানা কর্মকান্ড জঙ্গিবাদ রুখতে সাহায্য করবে। সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের মধ্যে সম্পৃক্ত থাকলে জঙ্গিবাদের মিথ্যা ব্যাখ্যা তরুণদের স্পর্শ করতে পারবে না। সরকারের গৃহিত পদক্ষেপগুলোর কারনে এখন জঙ্গিবাদের প্রকোপ নেই বাংলাদেশে। তাই জঙ্গিবাদ রুখতে বর্তমান সরকারের গুরুত্ব অপরিসীম।


অনুষ্ঠানে আশা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য বলেন, জঙ্গিবাদ একটি মতবাদ, এই মতবাদকে রুখতে হলে বা কাউন্টার দিতে পাল্টা মতবাদ লাগবে। সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ জঙ্গিবাদ নির্মূলে বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে আমি বিশ্বাস করি। বাংলাদেশ উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় জঙ্গিবাদের মত অপশক্তিকে দানা বাঁধতে দেয়া যাবে না।


উপাচার্যের বক্তব্যের আগে সুচিন্তার গবেষণা সেলের আশরাফুল আলম ইসলামে জঙ্গিবাদ এবং আলোচকদের আলোচনা থেকে শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্ন করেন, শিক্ষার্থীরাও প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে অনেক বিষয় সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান লাভ করে।


এছাড়াও অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য রাখেন বাণিজ্য অনুষদের ডিন এ আর খান এবং কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং ইংরেজী বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবু দাউদ হাসান।



অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ‘আজ সারাবেলা’র সম্পাদক জববার হোসেন।


উল্লেখ্য, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণদের মনোজগৎ জাগ্রতকরণ ও জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রম হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রায় এক বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেমিনার করে আসছে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন।


বিবার্তা/রবি/কামরুল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com