৬ আগস্ট, হিরোশিমা দিবস। মানব ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের দিন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪৫ সালের এই দিনে জাপানের হিরোশিমা শহরে প্রথম পারমাণবিক বোমা ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। ''লিটল বয়'' নামে ওই আণবিক বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় কমপক্ষে এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ ।
এর তিনদিন পর ৯ আগস্ট নাগাসাকিতে দ্বিতীয় আণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়। ওই বোমায় মৃত্যু হয় প্রায় ৭৪ হাজার মানুষের।
এভাবে প্রাণচঞ্চল দুই নগরী পরিণত হয় বিরাণভূমিতে। যুদ্ধপরবর্তী বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, বোমা বিস্ফোরণে তাৎক্ষণিকভাবে এবং পরবর্তীতে বিকিরণ প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্ট রোগ-বালাইয়ে প্রাণ হারায় চার লাখের মতো মানুষ। নিহতদের প্রায় সবাই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যানের নির্দেশে হিরোশিমায় স্থানীয় সময় সকাল সোয়া ৮টায় ফেলা হয় ইতিহাসের প্রথম পরমাণু বোমা। তখনো ঘুমের আচ্ছন্নতা পুরোপুরি কাটেনি হিরোশিমাবাসীর, কর্মতৎপরতাও তেমন ছিল না নগরীর পথে-ঘাটে। হঠাৎ দানবের মতো হিরোশিমার আকাশে উড়ে আসতে শুরু করে মার্কিন ৭ বোমারু বিমানের একটি বহর। বি-টুয়েন্টি নাইন বোমারু বিমানের একটি ছিল এনোলা গে। ওই বিমানের পাইলট ছিলেন মেজর ফেরেবি। বিমান থেকে হিরোশিমা শহরের ফেলেন ‘লিটল বয়’ নামের পারমাণবিক এ বোমা, যা মাটির প্রায় ৫০০ মিটার উচুঁতে বিস্ফোরিত হয়। ঘুমের মধ্যেই মারা যায় নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও যুবা। নগরীর বেশিরভাগ দালান-কোটা মিশে যায় মাটির সঙ্গে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিকে জাপানকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান। ওই আহ্বানে সাড়া না দেয়ায় তাদের বাধ্য করতে পরিকল্পিতভাবে বর্বরতম এ হামলা চালানো হয় ট্রুম্যানের নির্দেশে। হামলার পর আত্মসমর্পণ করে জাপান।
সেই দিনের কথা
৫ আগস্ট ১৯৪৫ সালে ‘মেজর জেমস আবি হপকিং’ স্বাক্ষরিত নির্দেশনার মধ্য দিয়ে চুড়ান্ত হয় হিরোশিমা মিশন। এই মিশনে অংশ নেয় সাতটি বিমান।
কর্নেল পল ওয়ার ফিল্ড টিবেটস ‘এ্যানোলা গে' নামক বিমানে করে ‘লিট্ল বয়’ নামক ‘ইউরেনিম বোমা নিয়ে স্থানীয় সময় রাত ২:৩০ টায় তিনিয়ান দ্বীপ হতে যাত্রা করে ১৭০০ মাইল পথ অতিক্রম করে হিরোশিমার আকাশে যান।
বোমাটির দৈর্ঘ ছিল ১০ ফুট ৬ উঞ্চি , ব্যাস ২৯ ইঞ্চি , ওজন ৯৭০০ পাউন্ড।
হিরোশিমার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় পর পর তিন বার সাইরেন বেজে ওঠে। ভীতসন্ত্রস্ত হিরোশিমাবাসী আকাশে অনেক উচুতে কয়েকটি যুদ্ধবিমান চক্কর দিতে দেখে। একটু পরে এদের সাথে যুক্ত হয় আরেকটি বিমান । অল্প পরেই বিমানগুলো দৃ্ষ্টির বাইরে মিলিয়ে যায়। ৭:৩০ মিনিটে বিপদমুক্ত সাইরেন বেজে উঠলে হিরোশিমাবাসী স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। কিন্তু ৮ টায় আবার ৩ টি বিমান আকাশে আবির্ভূত হয়। এবার এটাকে মামুলি বিমান বিবেচনা করে আর কোনো সাইরেন বাজানো হয়নি। কিন্তু কয়েক মিনিট পরেই ঘটে গেল বিভীষিকা।
তিনিয়ান থেকে যাত্র পথে ক্যাপটেন পর্সন্স ও ইলেকট্রনিক বিশেষজ্ঞ লেফটেন্যান্ট জেপসন 'লিটল বয়' সংযোজনের কার্য চুড়ান্ত করেন। লক্ষ্যস্থল থেকে ৩০ মাইল দূরে অবস্থানকালে সকাল ৭:৩০ মিনিটে ক্যাপটেন পর্সন্স কর্তৃক লিটল বয়ের গায়ে লাল প্লাগ সংযোজনের মাধ্যমে প্রস্তুতিপর্ব শেষ হয়। ৮:১৫ মিনিটে হিরোশিমার আকাশ হতে প্রায় ৬ মাইল (৩১,৬০০ ফুট ওপরে অবস্থান কালে ২৬ বছর বয়সী মেজর ফেরেবী চুড়ান্ত নিক্ষেপের কাজটি সম্পন্ন করেন। ৪৩ সেকেন্ড পর ভূপৃষ্ঠের ১৮৯০ ফুট ওপরে বিস্ফোরিত হয় 'লিটল বয়’।
বিবার্তা/হুমায়ুন/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]