একাধিক জরিপে উঠে এসেছে, স্মার্টফোন ও ফেসবুকের রঙিন দুনিয়ায় বেসামাল হয়ে পড়েছে উঠতি বয়সের বাংলাদেশী শিশুরা। পর্নোগ্রাফির অতিমাত্রায় সহজলভ্যতার সুযোগে বেপরোয়া গতিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে স্কুলগামী শিশু-কিশোররা। ফলে তাদের সুকুমার বৃত্তি বিকাশের আগেই বিপথে যাচ্ছে এসব কোমলমতি ছেলেমেয়ে।
সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, পর্নোগ্রাফির ছোবলে কিশোর-তরুণদের মাঝে নৈতিক অবক্ষয় বাড়ছে। যে কারণে যৌন নিপীড়ন ও পারিবারিক কলহের পাশাপাশি অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাড়ছে মনোবিকৃতি, হতাশাসহ সামাজিক ও মানসিক অস্থিরতা। এদিকে প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি তুমুল আগ্রহী। যে কারণে মানুষ প্রযুক্তির সদ্ব্যবহারের চেয়ে অপব্যবহারেই বেশি অভ্যস্থ।
অন্যদিকে সরাসরি আইনি নজরদারির মাধ্যমে শিশুদের পর্নোগ্রাফি থেকে দূরে রাখা সম্ভব নয়। তবে সাময়িক দমিয়ে রাখা যেতে পারে। এর জন্য পারিবারিক ও সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি ধর্মীয় অনুশাসন ও নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে। সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করছেন, পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণে আইনের বাস্তবায়ন এবং ইন্টারনেট ফিল্টারিং জরুরি হয়ে পড়েছে।
১ অক্টোবর মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ঢাকায় স্কুলগামী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৭৭ শতাংশ নিয়মিত পর্নোগ্রাফি দেখে। আর এ সব পর্নোগ্রাফিগুলোতে যাদের ভিডিও দেখানো হচ্ছে তাদের বয়স ১৮ এর কম। গবেষণায় আরো দেখা গেছে, বর্তমানে চারটি পদ্ধতিতে পর্নোগ্রাফি তৈরি করা হচ্ছে। এর মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে তৈরি পর্নোগ্রাফির তুলনায় ব্যক্তিগত সম্পর্ককে ঘিরে তৈরি পর্নোগ্রাফি শিশুরা বেশি দেখছে। আর এ সব ভিডিওগুলোতে দেখা যাচ্ছে ১৮ বছরের কম বয়সী স্কুলকলেজ পডুয়া শিক্ষার্থীদের। সংগঠনটির দাবি, এসব পর্নোগ্রাফি দেখার কারণে তারা একটি বিকৃত মনোভাবের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠছে।
২০১৩ সালে ঢাকার কয়েকটি স্কুলে পরিচালিত একটি বেসরকারি টেলিভিশনের পরিচালিত অপর এক জরিপে দেখা যায়, স্কুল শিক্ষার্থীদের ৮২ শতাংশ ছেলেমেয়ে স্বীকার করে যে, তারা সুযোগ পেলে মোবাইলে পর্নো ছবি দেখে। প্রায় ৬২ শিক্ষার্থী ক্লাসে বসেই পর্নো ছবি দেখে। প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে ৮ ঘণ্টা মোবাইলের পেছনে ব্যয় করে ৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী। আর ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী জানায় তারা কেবল প্রেম করার উদ্দেশ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে।
জরিপে আরও যে সকল ভয়াবহ চিত্র ধরা পড়েছে তা হলো- এখন স্কুল শিক্ষার্থী বিশেষ করে ছাত্রীরা বয়ফ্রেন্ড থাকাকে আধুনিকতা বলে মনে করছে। তারা অভিভাবকের চোখ ফাঁকি দিয়ে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের সাথে ডেটিংয়ে যাওয়া, ছবি তোলা ও গোপন বিষয়গুলো নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে কিংবা মোবাইল ফোনে একে অপরের সাথে শেয়ার করছে। এমনকি এসব কোমলমতি স্কুল শিক্ষার্থী শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার বিষয়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে। সবচেয়ে আশংকাজনক দিক হচ্ছে এসবের সাথে তারা সহজভাবে মানিয়েও নিচ্ছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক সহকারী অধ্যাপক সৈয়দ মুহাম্মদ সাজ্জাদ কবীর বলেন, বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েরা বিভিন্ন নিষিদ্ধ বিষয়ের প্রতি তুমুল কৌতূহলী হয়ে থাকেন। বিশেষত ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সের শিশুদের তখন যৌনাঙ্গের কার্যক্রম সক্রিয় হতে থাকে। ফলে এই সময়টাতে যখন পর্নোগ্রাফিগুলো হাতের নাগালে পায় তখন সেটা আসক্তির পর্যায়ে চলে যেতে পারে।
তিনি বলেন, বর্তমান সময়টা স্মার্টফোন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দখলে। যে কারণে হাত বাড়ালেই এসব পর্নোসাইট ও ক্লিপস হাতের নাগালে পাওয়া যাচ্ছে। গ্রাহকদের দৃষ্টি কাড়তে প্রতিষ্ঠিত নিউজ পোর্টাল ও ভিডিও গেইমসে পর্যন্ত পর্নোর ছড়াছড়ি। এসব থেকে কোমলমতি শিশুদের জীবন বাঁচাতে ধর্মীয় অনুশাসন ও পরিবারে সন্তানদের সাথে বাবা-মা’র বন্ধুত্বসুলভ সম্পর্ক কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। পাশাপাশি ইন্টারনেট ও ফেসবুকে পর্নের সহজলভ্যতা নিয়ন্ত্রণে টেলিযোগাযোগ বিভাগকে মনযোগী হতে হবে বলে মনে করছেন এই মনোবিদ।
বিবার্তা/জিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]