শিরোনাম
খাদ্যে বিষ বাণিজ্য লাগামহীন
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:২৯
খাদ্যে বিষ বাণিজ্য লাগামহীন
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

খাদ্যে বিষ বাণিজ্য বিশ্বের সব প্রান্তে কমবেশি হয়। তবে বাংলাদেশে এটা অতি সাধারণ ঘটনা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এটার লাগাম টেনে ধরতে হলে খোদ প্রশাসনেই প্রথম সংস্কার জরুরি। কারণ এটার বিস্তার এতোটাই বেড়ে গেছে যে, এটাকে এখন আর স্লোগান দিয়ে রোধ করার উপায় নেই।


উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সবচেয়ে পুষ্টিকর খাবার হলো দুধ। কিন্তু এখানে রয়েছে প্রাণঘাতী ভেজাল। প্রথমে শ্যাম্পুর সাথে খানিকটা ছানা পানি মিশিয়ে তৈরি করা হয় ফেনা। এরপর এতে গুঁড়ো দুধ, সয়াবিন, চিনিসহ আরও কিছু রাসায়নিক যোগ করা হয়। আর এই জিনিসটিই বাজারে বিক্রি করা হয় তরল দুধ হিসেবে। এই দুধ গরম করলে যাতে ফেনা হয় সেজন্য মেশানো হয় আরেক ধরনের কেমিকেল। মেশিনেও এই ভেজাল ধরা পড়ে না।


বেশি দামে বিক্রি করার জন্য মোটা চাল মেশিনে চিকন করে ইউরিয়া মিশিয়ে সাদা করা হচ্ছে। মুড়িতেও ইউরিয়া মিশিয়ে বিক্রি হচ্ছে অহরহ। অন্যদিকে নামিদামি সকল কোম্পানি বিভিন্ন জুস তৈরিতে ব্যবহার করছে মিষ্টি কুমড়া, পানি, রঙ আর নানা রকম কেমিক্যাল। এরপর বিভিন্ন ফলের কৃত্রিম ফ্লেভার যোগ করে বাজারে ছাড়া হচ্ছে।


মাছ ফল সংরক্ষণ করতে ব্যবহার হচ্ছে ক্ষতিকর ফরমালিন। বরফ পানিতে ফরমালিন মিশিয়ে মাছ হিমায়িত করা হচ্ছে। ফলে কীট দিয়ে পরীক্ষা করেও তাতে ফরমালিন ধরা পড়ছে না।


ফলমূলও এখন আর বিপদমুক্ত নয়। বেশিরভাগ ফলই এখন পাকানো হয় বিষাক্ত ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে। টোস্টসহ বেকারি সামগ্রি তৈরি করা হয় বিষাক্ত সাইক্লোমেট দিয়ে। বিভিন্ন শিশুখাদ্য, চকোলেট কিংবা ক্যান্ডিতে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর রঙ ও ট্যালকম পাউডার। দই তৈরি হচ্ছে টিস্যু পেপার দিয়ে।



মুরগির মাংস বিশেষ করে ভুনা, ফ্রাই, রোস্ট বা গ্রিল আমাদের অনেকেরই প্রিয়। কিন্তু এসব মুরগিকে কি খাওয়ানো হয়, তা আমাদের জানা নেই। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, আগে মুরগির প্রোটিন খাবার হিসেবে বিদেশ থেকে আমদানি করা হত মিট এবং বোন মিল। আর এখন ট্যানারিতে চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হয় বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে। প্রক্রিয়াজাত করার পর যে বিষাক্ত বর্জ্যগুলো বের হয়, সেগুলোই কম মূল্যে বিক্রি করে তৈরি করা হয় মাছ ও মুরগির প্রোটিন খাদ্য! নামিদামি অনেক পোল্ট্রি খামারই এগুলো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে। এর ফলে শুধু মুরগির মাংসেই নয়, ডিমেও এখন বিষাক্ত ক্রোমিয়াম ও সিসা পাওয়া যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বাংলাদেশে হোটেলে মরা মুরগি সাপ্লাই করা হয় নানা কায়দায়। বিষয়টি নিয়ে বার বার রিপোর্ট প্রকাশ ও প্রচারিত হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি।


অভিযোগ রয়েছে, চিনি দেয়া সাবান পানির ভেতর সেভলন দিয়ে ঝাঁজ এনে তৈরি হচ্ছে নকল কোক। সেটা পুরাতন ব্যবহৃত বোতলে ভরে নতুন সিল মেরে অনেক দোকানে বিক্রি হচ্ছে।


সূত্র মতে, বিশ্ব বিখ্যাত ব্র্যান্ডের কসমেটিকসগুলো এখন তৈরি হচ্ছে ঢাকার চকবাজারে। ল্যাকমি, ইউনিলিভার থেকে শুরু করে দেশি বিদেশি সকল কসমেটিকসের হুবুহু নকল সব। এমনকি এসব নকল প্রোডাক্ট দোকানদাররাও চিনতে পারেন না। অনেক নামিদামি দোকানেও তা আসল হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। এতে বাড়ছে ত্বকের ক্ষতির পাশাপাশি নানারকম চর্ম রোগ। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে স্কিন ক্যান্সারেরও ঝুঁকি রয়েছে।


আগে আসল চেরি ফল পাওয়া যেত। আর এখন করমচা ফল ক্ষতিকর রঙ লাল রঙ মিশ্রিত চিনি পানির ভেতর ডুবিয়ে রেখে সেটাকে চেরি ফল হিসেবে বিক্রি হচ্ছে।


রাস্তাঘাটের ধারে যেসব ভাজাপোড়া দোকান আছে, তারা কোনদিন কড়াইয়ের তেল পাল্টায় না। বিষাক্ত পোড়া তেলের মধ্যেই আবার নতুন তেল যোগ করে ভাজাপোড়া জিনিস বানায়। অনেক জায়গায় তো পোড়া মোবিল দিয়ে ভাজা হয় চানাচুরসহ বিভিন্ন খাবার।


যৌনক্ষমতা বাড়ানোর জন্য পৃথিবীতে সবচেয়ে যে ওষুধ বেশি ব্যবহার করা হয়, সেটা হলো ভায়াগ্রা। অথচ এটার সাইড ইফেক্ট অনেক বেশি। বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি গবেষণায় বের করেছেন, তরমুজই হল প্রাকৃতিক ভায়াগ্রা। কিন্তু বাজারে যে তরমুজ পাওয়া যায় তার বেশিরভাগই ক্ষতিকর। ভোরবেলা তরমুজের ভেতর সিরিঞ্জে করে ক্ষতিকর এরিথ্রোসিন বি ও স্যাকারিন পুশ করে লাল ও মিষ্টি বানিয়ে সেই তরমুজ রাস্তাঘাটে বিক্রি করা হয়।


দেশজুড়েই চলছে খাদ্যে বিষ ও ভেজাল বাণিজ্য। সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরীক্ষাগারে পাঠানো বিভিন্ন ভোগপণ্যের নমুনা পরীক্ষা করে ৭০ ভাগই ভেজাল পাওয়া গেছে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘খাদ্যে বিষ ও ভেজাল দুর্নীতির চেয়েও ভয়াবহ, খুন ডাকাতির চেয়েও মারাত্মক। কারণ যারা খাদ্যে বিষ মেশায়, তারা খুনি। তবে তারা খুন করে ধীরে ধীরে। হার্ট অ্যাটাক, ক্যান্সার, স্ট্রোক নামক ভয়াল অস্ত্র দিয়ে। অথচ এই বিষয়টি কখনোই সিরিয়াসলি দেখা হয় না।’


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com