শিরোনাম
দীঘিপাড়ার কয়লা উঠবে মাইনিং পদ্ধতিতে
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০১৬, ০৯:৩৭
দীঘিপাড়ার কয়লা উঠবে মাইনিং পদ্ধতিতে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দিনাজপুরের বড় পুকুরিয়ার পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কয়লাখনি একই জেলার নবাবগঞ্জের দীঘিপাড়ায়। এই খনি থেকে কয়লা উত্তোলনের পরিকল্পনা করছে সরকার। আন্ডারগ্রাউন্ড মাইনিং করে (ভূগর্ভস্থ পদ্ধতি) এখান থেকে কয়লা তোলা হবে। শীঘ্রই খনি করার বিষয়ে সম্ভাব্যতা জরিপ শুরু করা হবে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে খনিটিতে ৫০০ মিলিয়ন টনের বেশি কয়লা মজুদ রয়েছে। তবে জরিপ শেষে কয়লার পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।


দেশে বিপুল পরিমাণ কয়লার মজুদ থাকলেও পরিবেশবাদীদের চাপে সরকার কয়লা উত্তোলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখার পর কয়লানীতি করার বিষয়টি থেকেও সরকার সরে এসেছে। দেশে কয়লাচালিত বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করলেও আমদানি করা জ্বালানিতে কেন্দ্রগুলো চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকার এর আগে কয়লা বিদ্যুতের অর্ধেক দেশীয় জ্বালানিতে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিলেও পরে তা প্রত্যাহার করে। যদিও দীঘিপাড়া খনির কয়লা দিয়ে দেশীয় একটি কোম্পানি বড় একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাবে। এজন্য পেট্রোবাংলার সঙ্গে কোম্পানিটির আলোচনা চলছে।


জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, খনি করার বিষয়ে পেট্রোবাংলাকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি কোম্পানি এ বিষয়ে একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করছে। সম্ভাব্যতা জরিপ শেষ হওয়ার পরই বলা যাবে কবে নাগাদ এখান থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে সম্ভাব্যতা জরিপ শেষ করে ২০১৭ সালের শেষ নাগাদ খনি করার একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।



ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন সেন্টারের (আইআইএফসি) হিসাব মতে, দেশে বর্তমানে পাঁচটি কয়লা ক্ষেত্রে মোট মজুদের পরিমাণ ২৭৫ কোটি ৪০ লাখ টন। তাপমাত্রার হিসেবে যা ৮১ টিসিএফ গ্যাসের সমান। আর উত্তোলনযোগ্য কয়লার পরিমাণ ১২৫ কোটি টন। যা ৩৭ টিসিএফ গ্যাসের সমান। অর্থাৎ এখন পর্যন্ত দেশে প্রমাণিত গ্যাস মজুদের তুলনায় এর পরিমাণ বেশি। সরকারি হিসেব অনুযায়ী দেশের স্বীকৃত গ্যাসের অর্ধেক ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। দেশে আর কোন গ্যাস না পাওয়া গেলে বিদ্যমান খনিগুলো থেকে ২০৩০ সালের পর আর কোন গ্যাস পাওয়া যাবে না। পেট্রোবাংলাই বলছে, ২০২০ সালের পর থেকে দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে শুরু করবে।


প্রাথমিক হিসাবে মজুদ কয়লা দিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজার মেগাওয়াট করে ৫০ বছরজুড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু এখন দিনাজপুরে মাত্র একটি ২৫০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দেশীয় কয়লা ব্যবহার করে।


তবে ভবিষ্যতে সরকার কয়লাকে প্রধান জ্বালানি হিসেবে বিবেচনা করলেও উত্তোলনে সেই অর্থে গতি নেই। দীর্ঘদিন পর কয়লা উত্তোলনের এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর আগে বিএনপি সরকারের সময় ফুলবাড়ি কেলেঙ্কারির পর দেশের কয়লা উত্তোলনের বিষয়টি আর এগোয়নি।


এদিকে গ্যাসের সঙ্কট সামাল দিতে গিয়ে দেশে তেলচালিত বিদ্যুতের উৎপাদন ৩০ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষত দেশে সান্ধ্যকালীন সঙ্কট সামাল দিতে এখন তেলচালিত বেশি দরের তরল জ্বালানির ওপর নির্ভর করা হচ্ছে। এর বিপরীতে কয়লা ব্যবহার করা হলে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সাশ্রয় হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পরিমাণ ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি হবে। যা রাষ্ট্রের অন্য খাতে বিনিয়োগ করা যাবে।


এখন দেশে মহেশখালী, পায়রাতে কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্রর হাব নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া কক্সবাজার, মাওয়া এবং রামপালে কয়লাচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। তবে এর সব বিদ্যুত কেন্দ্রই চলবে আমদানি করা কয়লাতে। দেশীয় কয়লার যোগান নিশ্চিত করা গেলে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হতো।


বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএমএন আরঙ্গজেব বলেন, ‘আমরা এখন বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। এ বিষয়ে একটি প্রকল্প রয়েছে।’


সূত্র বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কয়লাখনি হিসেবে বড়পুকুরিয়া খনিকে বিবেচনা করা হয়। খনির অভ্যন্তরীণ উচ্চ তাপমাত্রা, পানির উচ্চ তাপমাত্রা, খনিতে পানির উচ্চ প্রবাহ, ছাদে ফাটল, আর্দ্রতা এবং কয়লার স্বতঃস্ফূর্ত প্রজ্বলনের ঘটনা ঘটে। যা এই খনিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে। কিন্তু তারপরও বড়পুকুরিয়া খনিটি পরিচালনায় সফলতা দেখিয়েছে পেট্রোবাংলা। দেশীয় কোম্পানির মাধ্যমে এখান থেকে কয়লা তোলার ফলে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। ফলে নতুন খনি করার পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। দীঘিপাড়ার গভীরতার কারণে এই খনিটিও বড়পুকুরিয়ার মতোই ঝুঁকিপূর্ণ হবে।


বিবার্তা/জিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com