সাম্প্রদায়িকতা রুখে দেয়ার প্রত্যয়ে নববর্ষবরণ উৎসব উদযাপিত
প্রকাশ : ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ০১:০১
সাম্প্রদায়িকতা রুখে দেয়ার প্রত্যয়ে নববর্ষবরণ উৎসব উদযাপিত
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

পহেলা বৈশাখে এবার সাম্প্রদায়িকতা রুখে দেয়ার প্রত্যয় নিয়ে উদযাপিত হয়েছে বর্ষবরণ উৎসব। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বর্ণিল উৎসবে মেতেছে দেশ। নতুন বাংলা বর্ষের প্রথম দিনের ভোরের আলো রাঙিয়ে দেয় নতুন স্বপ্ন, প্রত্যাশা আর সম্ভাবনাকে।


রাজধানীসহ সারাদেশেই ছিল বর্ষবরণের নানা আয়োজন। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে আজ যুক্ত হয়েছে নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩১।


আনন্দঘন পরিবেশে নব আনন্দে বরণ করে নেয়া হয় নতুন বছরকে। কল্যাণ ও নতুন জীবনের প্রতীক হলো নববর্ষ। অতীতের ভুলত্রুটি ও ব্যর্থতার গ্লানি ভুলে নতুন করে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে উদযাপিত হয় নববর্ষ। জীর্ণ পুরাতন সবকিছু ভেসে যাক, ‘মুছে যাক গ্লানি’ এ আহ্বান জানায় বাঙালি।


‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩১’ জাঁকজমকপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে। ছায়ানট ভোরে রমনা বটমূলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করে।


রবিবার (১৪ এপ্রিল) নতুন সূর্য ওঠার মধ্য দিয়ে ১৪৩১ বঙ্গাব্দের প্রথম প্রভাতে রমনার বটমূল থেকে গান, কবিতায় শুরু হয় বর্ষবরণ। তবে আয়োজন-উচ্ছ্বাস শুরু হয় আগের রাতেই।


সকাল সোয়া ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে বের হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। বর্ষবরণ ও মঙ্গল শোভাযাত্রায় নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পথের বাঁকে বাঁকে নিরাপত্তার আঁচ তৈরি করে। সকাল থেকেই রাজধানী শাহবাগ মোড়কে কেন্দ্র করে বাংলামোটর, মৎস্য ভবন মোড়, টিএসসি এবং কাঁটাবনের দিকে যাওয়ার প্রতিটি প্রধান সড়কের বাইরে পাশের রোডগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে দৃশ্যমান আইনশৃঙ্খলা সদস্যদের মোতায়েন করে রাখা হয়। এর সঙ্গে সার্বিক নিরাপত্তা দিতে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতেও দেখা গেছে।


পহেলা বৈশাখ রোববার (১৪ এপ্রিল) হলেও শনিবার রাতেই রমনা পার্ক ও এর আশপাশে ভিড় জমায় হাজারো মানুষ। পরিবার-পরিজন নিয়ে এসে বিকেল থেকে রমনায় সময় কাটান তারা। সরেজমিনে সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায়, পার্কের প্রায় সব গেটে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। কেউ বন্ধুবান্ধব, কেউ সন্তান, কেউ প্রিয় মানুষকে নিয়ে এসেছেন। পার্কের ভেতরে হাঁটতে হাঁটতে কেউ কেউ গলা খুলে গাইছেন গান।


সকাল ৯টা ১৮ মিনিটে মঙ্গল শোভাযাত্রা চারুকলার সামনে থেকে যাত্রা করে। শোভাযাত্রাটি চারুকলার সামনে থেকে শাহবাগ, ঢাকা ক্লাব ও শিশু পার্কের সামনে থেকে ইউটার্ন নিয়ে আবার টিএসসিতে এসে শেষ হয়।


শোভাযাত্রার শুরুতে ছিল র‌্যাবসহ নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যরা। এরপর অংশ নেয় ঢাকঢোল বাজানো একটি দল। তারপরে উৎসব প্রেমীরা সেই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। সহযাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য হাতি থেকে শুরু করে নানা ধরনের প্রতিকৃতি তৈরি করেছিলেন চিত্রশিল্পীরা। এসবের প্রদর্শনী দেখা গেছে শোভাযাত্রায়। উৎসব প্রেমী ছেলেদের পরনে ছিল সাদা পাঞ্জাবি ও পায়জামা। সঙ্গে ছিল কালো সানগ্লাস। অন্যদিকে মেয়েদের পরনে ছিল সাদা রঙের শাড়ি ও লাল রঙের ব্লাউজ। তাদের সঙ্গে যে শিশুরা এসেছিল তাদের বেশিরভাগের পরনেও দেখা গেছে পায়জামা-পাঞ্জাবি।


বর্ষবরণের অন্যতম আয়োজন দেখা যায় পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী মহলে। বৈশাখের প্রথম দিনে ‘লাল খাতায়’ চৈত্র সংক্রান্তি ও হালখাতা উৎসব পালন করে তারা। তবে রাজধানীর পুরান ঢাকায় কিছু ব্যবসায়ী পুরাতন এই ঐতিহ্যটিকে ধরে রাখলেও হালখাতা উৎসবের জৌলুস দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক লেনদেনের কারণে ‘জানুয়ারি টু ডিসেম্বরে’ চলে গেছে ‘চৈত-কাবারি’ হিসাব।


সরেজমিনে দেখা গেছে, পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার, শাঁখারিবাজার, শ্যামবাজার, ইসলামপুর এলাকায় হালখাতা উৎসবকে ঘিরে কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ধোয়ামোছার কাজ করানো হয়েছে। সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখা হয়েছে দোকানের সরঞ্জাম। অনেকে আবার ক্রেতা-বিক্রেতার পুরোনো পাওনা চুকিয়ে নববর্ষের প্রথম দিনে মিষ্টিমুখ করানোর জন্য দোকানে মিষ্টি এনে রেখেছেন। অনেক ব্যবসায়ীরা তাদের নিয়মিত ক্রেতাদের নিমন্ত্রণ জানিয়েছেন।


পুঁথি পাঠ, লালন সংগীত, নৃত্য, ঢাকের তালে তালে ও লোকসাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে নতুন বর্ষকে বরণ করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। শুরুতে পরিবেশিত হয় সমবেত সংগীত ‘তুমি নির্মল করো, মঙ্গল করো’, পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশু সংগীত দল। পরিচালনায় ছিলেন মুহাম্মদ আনিসুর রহমান।


এরপর সমবেত ‘নৃত্য এসো হে বৈশাখ এসো এসো’ পরিবেশন করে স্পন্দন নৃত্যদল, নৃত্য পরিচালনা করেছেন অনিক বোস। একাডেমির নৃত্যশিল্পী এস কে জাহিদের পরিচালনায় সমবেত ঢাক নৃত্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যদল।


এরপর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির বিশেষ পরিবেশনা কালচারাল হেরিটেজ অনুষ্ঠিত হয়। পরিচালনায় ছিলেন খন্দকার ফরহানা রহমান। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশু নৃত্যদল পরিবেশন করে সমবেত নৃত্য ‘আমরা সুন্দরের অতন্দ্র প্রহরী’, পরিচালনা করেন এস কে জাহিদ। সবশেষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির শিশু সংগীত দল পরিবেশন করে সমবেত সংগীত ‘এসো হে বৈশাখ এসো, এসো।’ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন তামান্না তিথী।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com