শিরোনাম
জুতা রফতানি বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে
প্রকাশ : ১৮ অক্টোবর ২০১৬, ২২:১৩
জুতা রফতানি বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রফতানির পাশাপাশি বাংলাদেশে তৈরি জুতার বাজারও ধীরে ধীরে বাড়ছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানিতে সবচেয়ে বড় বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে পোশাকের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় এই বাজারে বাংলাদেশে প্রস্তুত করা বিভিন্ন ধরনের জুতার রফতানিও বাড়ছে।


গত বছর বাংলাদেশে থেকে ১০ কোটি ৪৯ লাখ মার্কিন ডলার বা ৮৭১ কোটি টাকার সমপরিমাণ মূল্যের ৪১ লাখ ৮০ হাজার জোড়া জুতা যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়। ২০১৪ সালে ছয় কোটি ১৪ লাখ মার্কিন ডলার সমপরিমাণ মূল্যের ২৫ লাখ ৫৪ হাজার জোড়া জুতা রফতানি হয়েছিল। পরিমাণের দিক থেকে ২০১৪ সালের চেয়ে ২০১৫ সালে জুতা রফতানি ৬৩ শতাংশ বেড়েছে।


এদিকে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে (জানুয়ারি-জুলাই) পাঁচ কোটি ১৩ লাখ ডলার সমমূল্যের ২০ লাখ জোড়া জুতা বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়েছে। গত বছর একই সময়ে রফতানি হয়েছিল ১৯ লাখ জোড়া জুতা। যার আর্থিক মূল্য ছিল চার কোটি ৮৫ লাখ মার্কিন ডলার।


ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেল (অটেক্সা) নিয়মিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের জুতা আমদানি-রফতানির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, গত বছর বিভিন্ন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র দুই হাজার ৬৮২ কোটি ডলার সমপরিমাণ মূল্যের ২৪৬ কোটি জোড়া জুতা আমদানি করেছে। এর মধ্যে চীন থেকেই সবচেয়ে বেশি ৭৬ শতাংশ বা ১৮৮ কোটি জোড়া জুতা দেশটিতে রফতানি হয়েছে। পরের অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, ভারত, ইতালি, মেক্সিকো ইত্যাদি দেশ।


অর্থ কিংবা পরিমাণের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জুতা রফতানিতে বাংলাদেশ অন্য দেশের চেয়ে এখনো বেশ নিচের দিকে থাকলেও গত আট বছরে বেশ এগিয়েছে। ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের জুতা রফতানি ছিল মাত্র ৪০ লাখ ডলার। ২০১০ সালে তা দ্বিগুণ বেড়ে ৮২ লাখ হয়। ২০১২ সালে সেটি তিন গুণ বেড়ে হয় ২ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে আট বছরের ব্যবধানে বাংলাদেশের জুতা রফতানি ২৬ গুণ বেড়ে ১০ কোটি ৪৯ লাখ ডলার হয়েছে। অবশ্য বাজার হিস্যা হিসাব করলে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট জুতা আমদানির মাত্র শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ বাংলাদেশের।


লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (এলএফএমইএবি) বলছে, সারা দেশে জুতা রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১২০টির মতো। বাংলাদেশের জুতা রফতানির প্রায় ৬৫ শতাংশ হয় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে। তারপরেই জাপান, ২০-২৫ শতাংশ। আর যুক্তরাষ্ট্রে ১০-১৫ শতাংশের মধ্যে। এই পণ্যের মূল্য সংযোজনের পরিমাণ ৮০-৮৫ শতাংশ।


বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হওয়া জুতার মধ্যে বর্তমানে ৮১ শতাংশই চামড়ার তৈরি। গত বছর নয় কোটি ৮৪ লাখ ডলার সমমূল্যের ৩৪ লাখ জোড়া চামড়ার জুতা রফতানি হয়। ২০১৪ সালে রফতানি হয়েছিল ২১ লাখ জোড়া চামড়ার জুতা, যার আর্থিক মূল্য ছিল পাঁচ কোটি ৮৫ লাখ ডলার। তার মানে, পরিমাণের দিক থেকে হিসাব করলে ২০১৫ সালে তার আগের বছরের তুলনায় চামড়ার তৈরি জুতা রফতানি ৬১ শতাংশ বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অন্যান্য দেশেও চামড়ার জুতা রফতানি বাড়ছে।


রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম দুই মাস অর্থাৎ জুলাই-আগস্টে ১২ কোটি ডলারের জুতা রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের ৯ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের চেয়ে ২৩ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছর ৪৯ কোটি ডলারের বা ৩ হাজার ৯২০ কোটি টাকার চামড়ার জুতা রফতানি হয়।চামড়ার পাশাপাশি কাপড়, সিনথেটিক, প্লাস্টিক ও রাবারের জুতা রফতানিও প্রতিবছর বেড়ে চলেছে।


ইপিবির হিসাবে, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে ৪ কোটি ডলারের চামড়াবিহীন বা নন-লেদার জুতা রফতানি হয়েছে। এই আয় গত অর্থবছরের একই সময়ের ৩ কোটি ১৫ লাখ ডলারের চেয়ে ২৮ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর চামড়াবিহীন জুতা রফতানি করেই বাংলাদেশ ২১ কোটি ৯১ লাখ ডলার বা ১ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা আয় করে।
বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জুতা রফতানির সিংহভাগই চীনের দখলে। তবে চীনে শ্রমিকের মজুরি এতটাই বেড়ে গেছে যে জুতা কারখানার জন্য লোক পাওয়া যাচ্ছে না। তবে প্রচুর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও উৎপাদনের সব পর্যায়ে উন্নত কর্মপরিবেশের (কমপ্লায়েন্স) ঘাটতি থাকায় যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য বাজারগুলোতে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় জুতা রফতানি বাড়েনি। তবে রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে সাভারের চামড়াশিল্প নগরীতে ট্যানারি স্থানান্তর হয়ে গেলে জুতা রফতানি বাড়বে।


বিষয়টি ব্যাখ্যা করে মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দামি জুতা কেনে এমন বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর জন্য পণ্য উৎপাদনে কমপ্লায়েন্সের কারণে হাজারীবাগে প্রক্রিয়াজাত হওয়া চামড়া ব্যবহার করা যায় না। নিষেধাজ্ঞা আছে। সেক্ষেত্রে বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করতে হয়; নয়তো কম দামের জুতা কেনে এমন ব্র্যান্ডের কাজ করতে হয়। এতে করে আমাদের মূল্য সংযোজন কমে যায়।


তিনি আরো বলেন, বর্জ্য পরিশোধনের জন্য শুধু সিইটিপি স্থাপনই শেষ কথা নয়; ট্যানারি স্থাপনে কারখানার প্রতিটি ধাপেই কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে কোনো ধরনের তাড়াহুড়ো করা ঠিক হবে না।


তবে চামড়াখাতে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশে তৈরি জুতার বাজার বেশ সম্ভাবনাময়। এটা আগামীতে বাড়বেই।


বিবার্তা/জিয়া/নিশি/রয়েল

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com