এমটিএফই’র প্রতারণা: নজরদারিতে ৪০০ সিইও
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৩, ০১:৩৪
এমটিএফই’র প্রতারণা: নজরদারিতে ৪০০ সিইও
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাতারাতি ধনী হওয়ার আশায় অনলাইন ট্রেডিংয়ের নামে দুবাইভিত্তিক এমএলএম কোম্পানি মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জের (এমটিএফই) ফাঁদে পা দিয়ে সর্বস্বান্ত হয়েছে দেশের প্রায় ৪০ লাখ মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক ইউনিট এ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। প্রতারণা করে বাংলাদেশিদের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এই কোম্পানির ৪০০ সিইওর বিরুদ্ধে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করছেন গোয়েন্দারা। তাদের আটক বা গ্রেফতার করতে গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি সাইবার ফুটপ্রিন্ট সংগ্রহ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।


নামসর্বস্ব এই প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম মডেলে ব্যবসা করতো। ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ বিনিয়োগ করে।


সিআইডি ও ডিবি সূত্রে জানা যায়, এমটিএফই’র প্রতারণার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক ইউনিট কাজ করছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে ডিবি এবং সিআইডিও কাজ করছে। তাদের প্রাথমিক তদন্তে এমটিএফর বেশ কয়েকজন রিপ্রেজেনটেটিভ ও মার্কেটিংয়ের লোকজনের সন্ধান পাওয়া গেছে।


ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. সাইফুর রহমান আজাদ বলেন, এমটিএফই নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট কাজ করছে। আমরাও অভিযুক্তদের বিষয়ে নজরদারি করছি।


আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ নামে ক্রিপ্টোকারেন্সি (যেমন- বিট কয়েন) ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম এমটিএফই’র প্রতারণা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা ও তথ্য পেলেও এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা পাওয়া যায়নি। তবে মামলা না পেলেও এ বিষয়ে ছায়াতদন্ত করা হচ্ছে।


সিআইডির কার্যক্রম নিয়ে সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, বাংলাদেশে এদের যারা রিপ্রেজেনটিভ বা মার্কেটিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল তাদের আমরা আইনের আওতায় আনব। এছাড়া কেউ যদি অভিযোগ দেয় সে অভিযোগ গ্রহণ করে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। এমটিএফই একটি ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমচক্র। এর সম্পূর্ণ কার্যক্রম ছিল বায়বীয়।


সিআইডি গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজাদ রহমান বলেন, এ নিয়ে ইতোমধ্যে তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শুরু করেছি আমরা। যাচাই-বাছাই শেষে যারাই দোষী হবেন তাদের আইনের আওতা আনতে হবে।


প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ছিল বায়বীয়। তারা প্রতারণার জন্য কোনো পণ্যের ব্যবহার করেনি অন্যান্য এমএলএম কোম্পানির মতো। তারা শুধু অ্যাপের মাধ্যমে এই প্রতারণা করেছে।


প্রশাসন বলছে, সিইওদের বিষয়ে সব তথ্য নেওয়া হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আরো তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কেউ লিখিত অভিযোগ ও মামলা করলে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।


অন্যদিকে এমটিএফইর বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ান ও বাংলাদেশে এদের রিপ্রেজেনটিভদের আটকের বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ।


বাংলাদেশে এমটিএফই’র কত গ্রাহক আছে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি। তবে এমটিএফই’র হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে মোট ৮ লাখ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে তাদের অ্যাপে। শুধু বাংলাদেশ নয়; দুবাই, ওমান, কাতার সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশিরাও এমটিএফইতে বিপুল পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। বাংলাদেশে তাদের কোন অফিস নেই।


এদিকে রাজশাহীতে এমটিএফই বিষয়ে একটি মামলা হলেও তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই। এমটিএফই অ্যাপ ব্যবহার করে অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে রাজশাহীতে দায়ের হওয়া মামলায় ২৮ দিনেও কেউ গ্রেফতার হয়নি। গত ২৩ জুলাই আইনজীবী জহুরুল ইসলাম রাজশাহীর সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন করেন। এতে ‘এমটিএফই’ ছাড়াও ‘আলটিমা উইলেট’ অ্যাপের মাধ্যমে প্রতারণার কথা উল্লেখ করা হয়। আদালতের বিচারক জিয়াউর রহমান আরজিটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করার জন্য নগরের রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে তিনটি সংস্থার তিনজন কর্মকর্তাকে যৌথভাবে এই মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরদিন মামলাটি থানায় রেকর্ড করা হয়।


রাজপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল হক বলেন, তদন্ত চলছে। যতটুকু জানা গেছে, কয়েকটি লেভেলে প্রতারণা হয়েছে। রাজশাহীতে যারা জড়িত, তারা প্রকৃতপক্ষে একজন আরেকজনের দ্বারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এ পর্যন্ত এই মামলায় কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।


পুলিশ, র‌্যাব ও সিআইডি কর্মকর্তারা বলেছেন, এমটিএফইর ৪০০ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রয়েছে বাংলাদেশ। এই ৪০০ সিইওর বিরুদ্ধে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করছেন গোয়েন্দারা। তাদের আটক বা গ্রেফতার করার জন্য গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি সাইবার ফুটপ্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়েছে। এমটিএফই’র প্রতারণার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক ইউনিট কাজ করছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে ডিবি এবং সিআইডিও কাজ করছে। তাদের প্রাথমিক তদন্তে এমটিএফইর বেশ কয়েকজন রিপ্রেজেনটেটিভ ও মার্কেটিংয়ের লোকজনের তথ্য পাওয়া গেছে। কাজ করছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। এদিকে মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ নামে ক্রিপ্টোকারেন্সি (যেমন- বিট কয়েন) ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম এমটিএফইর প্রতারণা নিয়ে সিআইডি ও ডিবি কাজ করছে।


প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ছিল বায়বীয়। তারা প্রতারণার জন্য কোন পণ্যের ব্যবহার করেনি অন্যান্য এমএলএম কোম্পানির মতো। তারা শুধু অ্যাপের মাধ্যমে এই প্রতারণা করেছে। এর সিইও ৪০০ জন।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com