সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না, কেন?
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৩, ২৩:১৪
সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না, কেন?
এস এম রিয়াদ রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন সড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় ঝড়ছে বহু প্রাণ। আবার অনেকে আহত হয়ে দুর্বিষহ জীবন অতিবাহিত করছেন। সড়কে যেন মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। প্রতিদিনই সড়কে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল।


পরিসংখ্যানে দেখা যায়, শতকরা ৮০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে বিরামহীন গাড়ি চালানো, অনিয়ন্ত্রিত গতিতে গাড়ি চালানো এবং চালকের অসাবধানতা। নিয়ম হলো, একজন চালক একটানা চার-পাঁচ ঘণ্টা গাড়ি চালানোর পর বিশ্রাম নিয়ে পুনরায় গাড়ি চালাবেন। কিন্তু আমাদের দেশে কোনো চালক এই নিয়ম মানেন না। ফলে ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত চালক যখন গাড়ি চালান, তখন স্বভাবতই দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে অনেক বেশি। এ প্রবণতা রোধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।



বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন মাসে ৪৭৫টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত ৫২৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৮২৬ জন। জুনে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে ১২৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২৭ জন নিহত এবং ২৬৩ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে বরিশাল বিভাগে। এ বিভাগে ২২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২১ এবং আহত হয়েছেন ৫৮ জন।



শিপিং অ্যান্ড কমিউনিকেশনস রিপোর্টার্স ফোরাম (এসসিআরএফ) তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে সারাদেশে ২ হাজার ৭৮১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২ হাজার ৮৯৮ জন মারা গেছেন এবং ৪ হাজার ৭২০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৮৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।



এসসিআরএফ-এর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকারের নীতিনির্ধারণী সংস্থাগুলো আন্তরিক। তবে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীর জবাবদিহিতারও অভাব রয়েছে। পরিবহন খাতে মালিক-শ্রমিক নেতাদের প্রভাব, জনপ্রতিনিধিসহ রাজনৈতিক নেতাদের হস্তক্ষেপ এবং চালক, শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাবও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী



আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, দেশে দুর্ঘটনা ও হতাহতের সংখ্যা দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। নিরাপদ সড়ক ও যানবাহনের দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে তিন হাজার ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় মোট নিহত হয়েছিল চার হাজার ৪৩৯ জন। ২০১৯ সালে চার হাজার ৭০২টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল পাঁচ হাজার ২২৭ জন। ২০২০ সালে চার হাজার ৭৩৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচ হাজার ৪৩১ জন নিহত এবং সাত হাজার ৩৭৯ জন আহত হয়েছেন। ২০২১ সালে ৫ হাজার ৩৭১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ২৮৪ জন নিহত হয়েছেন এবং ৭ হাজার ৪৬৮ জন আহত হয়েছেন। এবং সর্বশেষ ২০২২ সালে ৫ হাজার ৭০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ হাজার ৫৪৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন সড়ক দুর্ঘটনার যে তথ্য প্রকাশ করেছে তাতে ভিন্ন ভিন্ন চিত্র উঠে এসেছে। যাত্রীকল্যাণ সমিতি বলছে, ২০২২ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে ৯ হাজার ৯৫১ জন। সবার হিসাবেই ২০২২ সালে মৃত্যু বেড়েছে। এ ছাড়া গত বছর সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৪২০ জন পথচারীর মৃত্যু হয়েছে।


বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই) এর এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, এক বছরে প্রায় ২০ হাজার ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ হাজার মানুষ নিহত হয়। আহত হয় ১ লাখ। এদের বেশির ভাগই পঙ্গুত্ব বরণ করে। এসব সড়ক দুর্ঘটনার ৫৩ ভাগ ঘটে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে; ৩৭ ভাগ চালকের বেপরোয়া মনোভাব এবং বাকি ১০ ভাগ গাড়ির ত্রুটি ও পরিবেশের কারণে।


প্রতিষ্ঠানটি বলছে, মহাসড়কে গড়ে প্রতি মিনিট পরপর একটি গাড়ি আরেকটি গাড়িকে ওভারটেকিংয়ের চেষ্টা করে। একটি গাড়ি আরেকটি গাড়িকে পাশ কাটাতে গেলেই দুর্ঘটনার ঝুঁকি তৈরি হয়। এটি প্রতিরোধে মহাসড়কে কার্যকর কোনোও ব্যবস্থা নেই। সড়কে শৃঙ্খলা নেই বলেই দুর্ঘটনা ঘটে। আর সরকারের পক্ষ থেকে শৃঙ্খলা আনার উদ্যোগও খুব একটা চোখে পড়ে না। সড়ক নিরাপত্তা শুধু মুখে মুখেই। বাস্তবে কর্মসূচি নেই বললেই চলে। বেপরোয়া গতি নিয়ন্ত্রণে আনতে মহাসড়কে বিশেষ ক্যামেরা বসাতে হবে। কম খরচেই এটা করে অনেক জীবন বাঁচানো সম্ভব।



সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নানা রকম সুপারিশ এসেছে বিভিন্ন সময়ে। এর মধ্যে রয়েছে—বিভিন্ন গণমাধ্যমে সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান প্রচার এবং তারই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। স্কুলের পাঠ্যক্রমে সড়ক দুর্ঘটনা রোধের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করতে হবে।



সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলো হচ্ছে- ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা; অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; মাদকাশক্তি; বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ ও যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; গাড়ির ছাদে যাত্রী বহন করা; ওভারব্রিজ কিংবা আন্ডারপাস বা জেব্রাক্রসিং থাকা সত্ত্বেও সেগুলো ব্যবহার না করা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি এবং গণপরিবহণ খাতে চাঁদাবাজি।


বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বিবার্তাকে বলেন, দেশে সবসময়ের মত দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা ঘটার কারণ বহু আছে। তবে দুর্ঘটনা ঘটার কারণ যে শুধু যে বাস, তা না। সড়কে অটো, সিএনজি, নছিমন, মোটরসাইকেল, পিকআপসহ বিভিন্ন যানবাহনের বেপরোয়া চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বেড়েছে। তাই সবার আগে সড়কে এসব গাড়ির নিয়ন্ত্রণ আনাটা জরুরি।


তিনি বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে সবাইকে সচেতন হতে হবে। চালকদের যেমন সচেতনতার সাথে গাড়ি চালাতে হবে, ঠিক তেমনি যাত্রী বা সাধারণ মানুষের মাঝেও সচেতনতা আরও বাড়াতে হবে। আমরা সড়ক দুর্ঘটনা রোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ করেছি। সেই সুপারিশ অনুযায়ী সরকার সড়কে দুর্ঘটনা রোধে বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে। আশা করছি সামনে সড়কে দুর্ঘটনা কমে আসবে।


বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের পরিচালক (রোড সেফটি) শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বিবার্তাকে বলেন, বিআরটিএ সারাদেশের এসব গাড়ির ফিটনেস দেয়, কাগজপত্র দেয়। আমাদের তো রাস্তাঘাটে লোকজন নাই, তাই সড়কে দুর্ঘটনা ঘটার সাথে বিআরটিএ’র সর্ম্পক নাই।


ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে চলছে কীভাবে—এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, এগুলো ট্রাফিক বিভাগ দেখবে, ফিটনেস আছে কি না। সড়কে চলার অনুপযোগী হলে ট্রাফিক সেসব গাড়ি আটক করবে। আর আমাদের জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট আছে, তারা দেখবে। ঢাকায় আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট আছে তাদের সামনে পড়লে শাস্তির আওতায় আনা হয়।



বেশিরভাগ চালক অদক্ষ হওয়ার পরও লাইসেন্স কীভাবে পাচ্ছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে বিআরটি রোড সেফটি পরিচালক বলেন, বাংলাদেশের চালকরা বিদেশে গিয়ে ভালো গাড়ি চালাচ্ছে। তাই অদক্ষ বলা যাবে না। চালকদের লাইসেন্স না থাকলে অদক্ষ হতে পারে। কিন্তু যাদের লাইসেন্স আছে তারা অনেকে বিদেশ গিয়ে নাম করতেছে, তারা ভালো করে গাড়ি চালাচ্ছে। তাই অদক্ষ একথা বলা মুশকিল।


অনেক চালককে লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাতে দেখা যায়—এমন প্রশ্নে শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, যারা লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়াও আমাদের মোবাইল কোর্ট এসব নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা করে যাচ্ছে।


এ নিয়ে সেতু বিভাগ, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর একান্ত সচিব (যুগ্মসচিব) গৌতম চন্দ্র পাল বিবার্তাকে বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা রোধে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ নানা ধরনের কাজ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে চালক ও জনসাধারণের জন্য নানান সচেতনতামূলক কাজ চলমান আছে।


তিনি বলেন, ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়েও সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সড়কে দুর্ঘটনা কমাতে চালকদের পাশাপাশি যাত্রীদের অনেক সচেতন হতে হবে। তবেই কমবে সড়কে দুর্ঘটনা।


এ নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মনিবুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, ট্রাফিক পুলিশ নিরলসভাবে সচেতনতামূলক কাজ করছে। যেসব জায়গায় দুর্ঘটনা হয় সেসব জায়গায়সহ বিভিন্ন দুর্ঘটনাপ্রবণ জায়গা, স্থানীয় লোকজন, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবী, ছাত্র-ছাত্রী, ব্যবসায়ীসহ নানা পেশাজীবী মানুষের সাথে কথা বলে দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে চেষ্টা করি, ব্যাখ্যা করি। এবং করণীয় কী সে বিষয়গুলো নিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করি।


তিনি আরও বলেন, তারপরও অনেক দুর্ঘটনা ঘটেই চলছে। এসব নিয়ন্ত্রণে যে কোনো কাজ হচ্ছে না বা কোনো লাভ হচ্ছে না এমনটা নয়। আমরা আইন প্রয়োগ করি মানুষকে শৃংখলায় আনার জন্য, শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়। তাকে বিষয়টা সম্পর্কে অবগত করার জন্য। এজন্য মানুষের মাইন্ডসেট পরিবর্তন করা দরকার। যেমন- যেখানে ফুটওভারব্রিজ আছে সেখানে তা ব্যবহার করা দরকার। জেব্রা ক্রসিং ব্যবহার করা দরকার, ট্রাফিক পুলিশের সাহায্য নিতে পারেন। রাস্তার লেন মেনে চলা দরকার, ফুটপাত ব্যবহার করা প্রয়োজন। প্রত্যেকটা জিনিস যদি আমরা একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মেনে চলি, তাহলে আমাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়বে। আমাদের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক বৃদ্ধি পাবে। তার সাথে সড়কে দুর্ঘটনা কমে আসবে।


ফিটনেসবিহীন গাড়ি প্রচুর আছে জানিয়ে মুনিবুর রহমান বলেন, রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি পেলে আটক করি এবং দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। এছাড়াও যেসব গাড়ির তেমন ফিটনেস নেই সেসব গাড়ি ডাম্পিংয়ে পাঠানো উচিত। কিন্তু আমরা ডাম্পিংয়ে পাঠাতে পারি না, এটার একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তাই এসব বিষয়ে যারা কাজ করেন উনারা যদি আমাদের এই বিষয়টি একটু দেখতে পারেন, তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়। এবং আমাদের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে অনেক সুবিধা হয়।


কম বয়সী ও লাইসেন্সবিহীন চালকরা গাড়ি চালাচ্ছেন কীভাবে—এ বিষয়ে মুনিবুর রহমান বলেন, এসব বিষয় নিয়ে আমরা সবসময় জনসচেতনতা চালিয়ে যাচ্ছি। তারপরও চোখের সামনে কিংবা আড়ালে এসব কাজ চলছে। আমরা সবসময় এসব কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। যাদের লাইসেন্স নেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। লাইসেন্সের মেয়াদ চলে গেলে অনেক সময় মামলা না করে সচেতন করি। বিভিন্ন কায়দায় বিভিন্নভাবে আমরা সড়কে নিরাপত্তার জন্য কাজ করে যাচ্ছি।


সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বিবার্তাকে বলেন, সড়কে সরকারের উন্নয়নের কারণে রাস্তাঘাট ভালো হয়েছে, তার সাথে গতিও বেড়েছে। জীবন বাঁচাতে গতি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। সবাইকে বোঝাতে হবে, উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আমার থেকে বড় ভূমিকা গণমাধ্যমের। মানুষ যখন নিজেরা দুর্ঘটনায় পড়ে, তখন কি তাকে কেউ থামাতে পারে। তাই সবাইকে বোঝাতে হবে যে আপনি মৃত্যুতে ঝাঁপ দিয়েন না। এসব কাজের জন্য গণমাধ্যম, পুলিশসহ সবাই মিলে সাধারণ পথচারী ও চালকদের বোঝাতে হবে। আপনারা গাড়ি ধীরে চালান, নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এসব সচেতনতামূলক কাজ করতে হবে। দেশে ৫০ হাজার গাড়ি সড়কে চলাচল করে, সব গাড়ি কি পুলিশ দেখতে পারবে? সম্ভব না।


এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, দেশে সড়কে গাড়ির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে ক্যামরা বসানো হচ্ছে। এ কাজ চলমান আছে। বাইরের দেশেও ক্যামরা থাকার পরও বড় বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। সৌদি আরবে কয়েকমাস আগে ১৭ জন লোক মারা গেছে, সেখানে কিন্তু ক্যামেরা বসানো আছে। তাই ক্যামেরা দিয়ে দুর্ঘটনা কমানো যাবে না, যতক্ষণ না ড্রাইভারের মানসিকতা আর যাত্রীদের মানসিকতা ঠিক করা না যাবে। একজন চালক দ্রত যাওয়ার জন্য ঝুঁকি নিয়ে ওভারটেকিং করে বড়জোড় ৩০ মিনিট আগে যায়। যে আস্তে গাড়ি চালায় সে ৩০ মিনিট পর কিন্তু একই স্থানে পৌঁছায়। তাহলে ঝুঁকি নিয়ে দ্রুত কেন যেতে হবে। আর রাস্তা পার হওয়ার সময় আপনি দু মিনিট দাঁড়ান। আস্তে ধীরে দেখে রাস্তা পার হন। কিন্তু তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন।


তিনি আরও বলেন, চালকদের মধ্যে মাদক নেয় সত্য, কিন্তু তা আগের থেকে অনেক কমে গেছে। চালক কারা হয় বলেন তো, যে মানুষটি জীবনে কোনো মায়া পায়নি, ফুটপাতে বড় হয়, যে গরিব ঠিকভাবে খাবার পায়নি, লেখাপড়া করতে পারেনি, সে চালক হয়। তার মাঝে হতাশা-দুঃখ আছে, তাদের বিরুদ্ধে শুধু অভিযোগ তুললেই হবে না। বিদেশে ড্রাইভার হন শিক্ষিত লোকজন, আর আমাদের দেশে ড্রাইভার হন অশিক্ষিত মানুষ। তাই তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সবসময় আইন দিয়ে হবে না কিন্তু। আমাদের দেশে ড্রাইভারদেরকে এখন প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। মোটকথা চালক-যাত্রী সবাইকে বোঝাতে হবে। গাড়িতে উঠে বলতে হবে ভাই আস্তে চালান। কিন্তু আমাদের দেশে গাড়িতে উঠেই লোকজন বলতে থাকে ভাই জোড়ে চালান, তাড়াতাড়ি চালান।


জনগণ ও ড্রাইভারকে সচেতন করার জন্য সামাজিক আন্দোলনের রূপ দিতে হবে বলে মনে করেন এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।


ফিটনেসবিহীন গাড়ি সড়কে কিভাবে চলছে জানতে চাইলে সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, আমরা প্রত্যেকদিন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে গাড়ির জরিমানা করি, ডাম্পিং করি পর্যায়ক্রমে। তারপরও ফাঁকি দিয়ে অনেক গাড়ি সড়কে চলাচল করছে। যে গাড়িগুলো এখনও সড়কে চলছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


বিবার্তা/রিয়াদ/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com