মাধ্যমিকের ৩১ বইয়ে ১৪৭ ভুল
প্রকাশ : ০৭ মে ২০২৪, ১৯:২১
মাধ্যমিকের ৩১ বইয়ে ১৪৭ ভুল
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ৩১টি বইয়ে ১৪৭ ভুল রয়েছে। এরই মধ্যে ভুলগুলো সংশোধনের সুপারিশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটি।


জানা যায়, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের বিক্রিয়ায় পানি উৎপন্ন হয়। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে রচিত অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) বইয়ের ৯৩ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে, ‘হাইড্রোজেন ও পানির বিক্রিয়ায় পানি উৎপন্ন হয়’। একই বইয়ের ১২৫ পৃষ্ঠায় একটি ছবির ক্যাপশনে লেখা আছে, ‘প্লাটিপাস মেরুদণ্ডী প্রাণী হলেও ডিম পাড়ে।’ এ তথ্যও ভুল। কারণ প্লাটিপাস মেরুদণ্ডী নয়, স্তন্যপায়ী প্রাণী। ৪ শ্রেণির ১৪৭টি এ রকম ভুল ধরা পড়েছে ।


গত বছর প্রথম, ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করা হয়। চলতি বছর বাস্তবায়ন করা হয় দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণিতে, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণিতে এই শিক্ষাক্রম চালু হবে। পরীক্ষামূলকভাবে এসব শ্রেণিতে প্রণয়ন করা হয়েছে পাঠ্যবই।


গত বছরের মতো এবারও ক্লাস শুরুর পর পাঠ্যবইয়ে থাকা নানা ভুল ও অসংগতি নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়। একপর্যায়ে নতুন বইয়ের ভুলত্রুটি ই-মেইলে জানানোর অনুরোধ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনসিটিবি। এর আগে গত বছর শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির চার বইয়ে ১৮৮ ভুল, ৫৮টি অসংগতি চিহ্নিত করে। পরে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির সব বইয়ের ভুল-অসংগতিগুলোর সংশোধনী দেয় এনসিটিবি।


এনসিটিবি সূত্র জানায়, পাঠ্যবইয়ের ভুলত্রুটি সংশোধনের লক্ষ্যে প্রতিটি বইয়ের জন্য একজন বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা ভুলগুলো চিহ্নিত করে এনসিটিবির উচ্চপর্যায়ের কমিটির কাছে জমা দেন। সম্প্রতি এই কমিটি ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ৩১ বইয়ের ভুল ও সংশোধনীগুলো নিয়ে একটি প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপর্যায়ে পাঠায়। সেখান থেকে ভুলগুলোর সংশোধনীর জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়।


প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, নবম শ্রেণির ১১ বইয়ে ভুল রয়েছে ৭৭টি, অষ্টম শ্রেণির ১০টি বইয়ে ৪৯টি, সপ্তম শ্রেণির ৫টি বইয়ে ১১টি, ষষ্ঠ শ্রেণির ৫টি বইয়ে ১০টি ভুল রয়েছে। ভুলগুলোর মধ্যে বানান ভুলের পরিমাণই বেশি। এছাড়া কোনো কোনো বাক্য পুরোপুরি সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে।


যেসব সংশোধনী আনা হয়েছে ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) বইয়ে আছে ৫৫০০ হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা হবে ৫৫০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই শ্রেণির স্বাস্থ্য সুরক্ষা বইয়ের ১২ পৃষ্ঠায় আছে টাইসেপস ডিপস, যা হবে ট্রাইসেপস ডিপস। ২৬ পৃষ্ঠায় বায়ু দূষণের ফলে চর্মরোগ হয় বলা হলেও সংশোধনীতে সেটি বাদ দেয়া হয়েছে। এই শ্রেণির বৌদ্ধধর্ম শিক্ষা বইয়ের ২৪ ও ৭২ পৃষ্ঠা থেকে ‘পৃথিবীতে যত মহাপুরুষ আছেন তাঁরা সকলেই শীলবান’ ও ‘রাজা বিম্বিসার বুদ্ধের চেয়ে পাঁচ বছরের ছোট ছিলেন’ লাইন দুটি বাদ দেয়া হয়েছে।


অষ্টম শ্রেণির বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ) বইয়ের ১৩৬ নম্বর পৃষ্ঠায় ছবির ক্যাপশনে ৯০ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমারেখার উল্লেখ থাকলেও এটি হবে পূর্ব দ্রাঘিমারেখা। একই শ্রেণির বিজ্ঞান (অনুশীলন বই)-এর কচ্ছপ ও খরগোশের দৌড় প্রতিযোগিতার গল্পে ৩ কিলোমিটার দৌড়ের কথা বলা হয়েছে। এর ফলে দৌড় প্রতিযোগিতার ফলাফলে সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে এটি সংশোধন করে ২৩ কিলোমিটার করা হয়েছে।


অষ্টম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ২৩ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে প্রকৌশলী ফজলুর রহমান খান ১৯৮৩ সালের ২৭ মার্চ মৃত্যুবরণ করেন। পরে সেটি সংশোধন করে ১৯৮২ লেখা হয়েছে। একই বইয়ের ৫৩ ও ৫৭ পৃষ্ঠায় আঞ্চলিক বাংলায় ত্রয়োদশ সাল লেখা হয়েছে। সংশোধন করে সেখানে ১৩০০ সাল লেখা হয়েছে। বইয়ের ১২১ নম্বর পৃষ্ঠায় ভুলবশত বাঁয়ে ভিঞ্চির আঁকা বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘মোনালিসা’ লেখা হয়েছে। এটি সংশোধন করে ডানে লেখা হয়েছে। নবম শ্রেণির ডিজিটাল প্রযুক্তি বইয়ে ১৭৯ নম্বর পৃষ্ঠায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহারে ‘প্রগতিশীলতা’ বৃদ্ধির লক্ষ্যে লেখা হয়েছে, এটি সংশোধন করে ‘গতিশীলতা’ লেখা হয়েছে।


এনসিটিবি থেকে জানা যায়, এবার পাঁচটি পদ্ধতিতে বইগুলোর ভুলত্রুটি ও অসংগতি বের করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে সংশোধনীগুলো সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অধিদফতরের মাধ্যমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছে পাঠানো হবে।


এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মশিউজ্জামান বলেন, চলতি বছর পাঠ্যপুস্তকে যেসব ভুলত্রুটি সংশোধন করা প্রয়োজন, তার একটি তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে তা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মাধ্যমে বিদ্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রতিষ্ঠানপ্রধানেরা সংশ্লিষ্ট শ্রেণিশিক্ষকের মাধ্যমে প্রতিটি শ্রেণির প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পাঠ্যপুস্তকে সংশোধন-সংযোজন নিশ্চিত করবেন।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com