জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গৌরব’৭১।
সোমবার (১৮ অক্টোবর) বিকাল ৩টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে চলে ৪টা পর্যন্ত।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার বিষয় ছিল ‘ভোরের পাখি শেখ রাসেল’। তিন বিভাগে এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ক বিভাগে ছিল ১ম-৩য় শ্রেণি, খ বিভাগে ছিল ৪র্থ থেকে ৭ম ও গ বিভাগে ছিল ৮ম-১০ম শ্রেণি।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিচারক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের সহাকারী অধ্যাপক সীমা ইসলামসহ দেশবরেণ্য চিত্রশিল্পীরা।
শিশু-কিশোরদের এই চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর সীমিত পরিসরে আলোচনাও অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি।
এসময় তিনি বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতা দেখার জন্য আমরা যুদ্ধ করিনি। এই বাংলাদেশ দেখার জন্য ৩০ লাখ শহীদ আত্মাহুতি দেননি। আমরা যুদ্ধ করেছি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য। যে সমস্ত মৌলবাদী, ধর্মান্ধ এখনো ধর্মের দোহাই দিয়ে একাত্তরের মতো সমাজে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়াচ্ছে, যারা এখনো ঘর-বাড়ি জ্বালাচ্ছে তাদেরকে আমরা একাত্তরের মতোই প্রতিহত করে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়বো।
হানিফ বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের মিত্ররা জাতির পিতাকে শহীদ করেছিলো। একাত্তরের পরাজয়ের প্রতিশোধ থেকে শেখ রাসেলও রেহাই পায়নি। ছোট্ট রাসেল মাত্র নয় বছর বয়সে প্রাণ হারিয়েছে। আজ জীবিত থাকলে ৫৮ বছর বয়স হতো। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতার কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেল ১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট খুন হয়েছে। আমাদের জাতির জন্য দিনটি অত্যন্ত কলঙ্কময়।
তিনি বলেন, পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার বিষ বপণ করা হয়। যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে এই স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, সেই স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করা হয়েছে। একাত্তরে যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে হত্যা নির্যাতন করেছে, তাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আজ সেই বীজ থেকে গাছ, আর সেই গাছ লালন পালন করায় বাংলার শেকড়ে চলে গেছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, স্বাধীনতার ৫০ বছরে দাঁড়িয়ে আমরা যখন এই অনুষ্ঠান করছি সেই সময়ে পুরো জাতি শোকাহত এবং মর্মাহত।
অনুষ্ঠানের আয়োজক ও গৌরব ৭১’র সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন গৌরব’৭১ সব সময় বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
তিনি বলেন, আজকের আয়োজনে শেখ রাসেলকে ভালোবাসে শিশুদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ আমাদের মুগ্ধ করেছে। আমরা আশা করছি, এই শিশুরাই একদিন বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে কাজ করবে।
সাম্প্রতিকালের মন্দিরে হামলা ও মানুষ হত্যার ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কোনোভাবেই মেনে নেয়া হবে না। রাজপথে এর জবাব দেয়া হবে। আমরা গৌরব’৭১ আগামী বুধবার (২০ অক্টোবর) এসব ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে প্রতিরোধ ও লাঠি মিছিল করবো। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এ কর্মসূচি শুরু হবে।
গৌরব’৭১ এর সভাপতি এসএম মনিরুল ইসলাম মনির সভাপতিত্বে ও সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস এমপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক উপ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মশিউর রহমান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়, কিশোরগঞ্জের উপাচার্য অধ্যাপক ড. জেড এম পারভেজ সাজ্জাদ, আওয়ামী যুব মহিলা লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট কুহেলী কুদ্দুস মুক্তিসহ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
প্রসঙ্গত, গৌরব’৭১ আয়োজিত এই শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা শেষে সাংস্কৃতিক পর্ব ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান করার কথা থাকলেও বৃষ্টি ও বৈরি আবহাওয়ার কারণে তা সম্ভব হয়নি। প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে বিজয়ীদের খুব শিগগিরই পুরস্কার নির্দিষ্ট নাম্বার ও ঠিকানায় যোগাযোগ করে পাঠিয়ে দেয়া হবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
বিবার্তা/সোহেল/আদনান/রাসেল/আরকে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]