শিরোনাম
'হাবিবুর রহমানের মতো সাংবাদিকের শূণ্যতা পূরণ হওয়ার নয়'
প্রকাশ : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:৪৩
'হাবিবুর রহমানের মতো সাংবাদিকের শূণ্যতা পূরণ হওয়ার নয়'
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দৈনিক যুগান্তরের সদ্য প্রয়াত সিনিয়র রিপোর্টার হাবিবুর রহমান খানকে অশ্রুসিক্ত নয়নে স্মরণ করেছেন তার সহপাঠী, সহকর্মী ও বন্ধুরা।


তারা হাবিবুর রহমানের ব্যক্তি, শিক্ষা ও কর্মজীবনের নানা স্মৃতি তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে সত্য কথা শক্ত করে বলতে পারায় তার প্রশংসা করেন। তার মতো সাংবাদিকের শূণ্যতা কখনে পূরণ হওয়ার মতো নয়। সদা নেতৃত্বসুলভ আচরণের ভূমিকাও টানেন বন্ধু সহকর্মীরা।


হাবিবুর রহমানের মৃত্যুর ১৫ দিন পর শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) শোকসভা ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করে তার সহপাঠীরা।


হাবিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০০০-২০০১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী হলে শোকসভায় সবার প্রিয় হাবিবকে স্মরণ করতে গিয়ে অশ্রুসিক্ত হয়েছেন অনেকে।


অনুষ্ঠানের শুরুতেই সাংবাদিক হাবিবুর রহমান খানের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর পবিত্র কোরআন শরীফ থেকে তেলাওয়াত করা হয়। এরপর হাবিবের জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন তার বন্ধু সাংবাদিক মঈন উদ্দিন খান। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল হক।


সভায় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক ইলিয়াস খান বলেন, হাবিবের মতো সাংবাদিক বর্তমানে বিরল। তার মুখে যা ছিল, অন্তরেও তা ছিল। এ কারণে হয়ত তাকে কারো ভালো নাও লাগতে পারে। তবে যারা তার সঙ্গে মিশেছেন তারা জানেন এটাই হাবিবের বড় শক্তি ছিল। হাবিবের এই অকালে চলে যাওয়া মেনে নেয়ার মতো নয়। তার মত সংবাদকর্মীদের এ সমাজে বড্ড প্রযোজন। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি মোরসালিন নোমানী বলেন, হাবিব ছিলেন একজন পেশাদার এবং সৎ সাংবাদিক। এ প্রজন্মের অন্যতম সেরা একজন সাংবাদিক ছিলেন তিনি। তার স্পষ্টবাদীতা ছিল প্রশংসনীয়। তার স্মৃতি ধরে রাখতে তার নামে আমরা কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করব। ডিআরইউ’র সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক হাবিব বিপদে অন্যের পাশে দাঁড়াতেন। তার এ অভ্যাস ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই।


অনুষ্ঠানে সাংবাদিকতা বিভাগের অগ্রজ তরিকুল ইসলাম খান রবিন বলেন, হাবিব সবসময় হাসিমুখে কথা বলত। তাকে কখনো খারাপ আচরণ করতে দেখিনি। হাবিবের চলে যাওয়ার এ শূণ্যতা পূরণ হবার মত নয়। আমাদের এখন তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে হবে।


সাংবাদিক নেতা সাঈদ খান বলেন, সাংবাদিক হাবিবকে সবমসময় অভিভাবকের মতো পেয়েছি। যেকোনো সমস্যায় তার কাছে গেলে ভরসা পেতাম। তার একটা গুণ ছিলো তিনি সত্য কথা শক্ত করে বলতে পারতেন। হাবিব হয়ত নেই, কিন্তু অনেক হাবিব তার পরিবারের পাশে আছেন। সাংবাদিক আহমেদ পিপুল বলেন, হাবিব অনেক বেশী তথ্য রাখতেন। অনেক তথ্য গণমাধ্যমে আসে না। এমন অনেক ইনসাইট তার কাছ থেকে শুনতাম আমরা। তিনি আড্ডাপ্রিয় একজন মানুষ ছিলেন। তার মানুষের সঙ্গে মেশার স্বভাবের কারণেই তিনি একজন ভালো সাংবাদিক হতে পেরেছেন।


তার অনুজ সাংবাদিক সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘হাবিব ভাই ছিলেন অন্যতম সক্রিয় সাংবাদিক। তিনি যেমন শাসন করতেন, তেমনি স্নেহ করতেন। সেইসঙ্গে পরামর্শও দিতেন। বিপদে দাঁড়াতেন বটবৃক্ষের মতো। তার মতো সাংবাদিকের শূণ্যতা কখনে পূরণ হওয়ার মতো নয়।


‘হাবিব কেবল আমার স্বামী ছিল না। সে ছিল আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আমি আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধুকে অকালে হারালাম’- সবশেষ এভাবে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদেন হাবিবের সহধর্মিণী ফারজানা মাহমুদ সনি। এ সময় পুরো হলরুম শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। এ সময় তার সঙ্গে ছিল সপ্তম শ্রেণি পড়ুয়া একমাত্র কন্যা জারা।


হাবিবের সহধর্মিণী বলেন, আমার পথচলা এখন অনেকটাই কঠিন হয়ে গেল। হাবিব সবার সঙ্গে মিশতে পারত অনায়েসে। এটা তার সবচেয়ে বড় গুন ছিল। সবাই তার জন্য দোয়া করবেন।


শোক সভায় হাবিবের জন্য শোকগাঁথা লিখা হয়। তাকে নিয়ে একটি স্মৃতিগ্রন্থ তৈরির কথা জানানো হয়। হাবিবুর রহমান খান জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সদস্য ছিলেন। গেল ২২ আগস্ট মঙ্গলবার বিকালে হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৪১ বছর বয়সী হাবিবুর রহমান খান।


বিবার্তা/এমই/এসবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com