শিশুর ডেঙ্গু জ্বর, সতর্কতা ও করণীয় কী?
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩, ০৯:৫৯
শিশুর ডেঙ্গু জ্বর, সতর্কতা ও করণীয় কী?
লাইফস্টাইল ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

দেশে বাড়ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা। মৃত্যুও হচ্ছে অনেকের। এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু প্রায় সময়েই বেশ গুরুতর হয়ে ওঠে, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে।


শিশুদের জ্বর বা কোন অসুস্থতা বেশ হুটহাটই হয়। ঠান্ডা লাগা বা জ্বরের প্রকোপ তাদের মধ্যে দেখা দেয় বেশি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছোট শিশুরা উপসর্গের বিষয়টিও সেভাবে বোঝাতে পারে না বাবা-মাকে। ফলে শিশুর ডেঙ্গুজ্বর হয়েছে কি না সেটা বুঝতে হলে বাবা-মায়ের সতর্ক থাকার বিকল্প নেই।


কীভাবে বুঝবেন শিশুর ডেঙ্গু কিনা?


১. বিশেষজ্ঞদের মতে ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ জ্বর, সাধারণত ১০৩ বা ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর উঠে যেতে পারে শিশুর।


২. জ্বরের পাশাপাশি শিশুর শরীর ব্যথা থাকতে পারে। তবে ব্যথার কথাও অনেক শিশু বোঝাতে পারে না। এ ক্ষেত্রে অনেকে শিশুর খাওয়া কমে যায়। দেখলেই বোঝা যায়, সে কোনো অস্বস্তিতে ভুগছে। অনেক সময় কান্না করে অনবরত। চারপাশের পরিবেশের প্রতি বিরক্ত থাকতে পারে।


৩. আরেকটি বড় লক্ষণ হচ্ছে এই জ্বরে কোনও ধরনের ঠান্ডা লাগা কিংবা কাশি থাকে না।


৪. জ্বরের পাশাপাশি বমি বমি ভাব, পাতলা পায়খানা থাকতে পারে শিশুর।


৫. জ্বর পরবর্তী সময়ে শিশুর শরীরে লালচে র‍্যাশ ওঠাও ডেঙ্গুর অন্যতম লক্ষণ।


৬. ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে শিশুর প্রস্রাব না হওয়া ডেঙ্গুর মারাত্মক লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি।


৭. শিশুর মধ্যে স্বাভাবিক চঞ্চলতা থাকে না - শিশু নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং ঝিমাতে থাকে। অযথা কান্নাকাটি করে।


দ্রুত শিশুর পরীক্ষা করুন


শিশুর জ্বর হলে শুরুতেই ডেঙ্গু অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করানো উচিত। তবে জ্বর যদি পাঁচ দিনের বেশি থাকে, তাহলে ডেঙ্গু অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করাতে হবে। পরীক্ষায় ডেঙ্গু ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আনুষঙ্গিক অন্যান্য পরীক্ষা করাতে হবে।


এ ছাড়া কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট অবশ্যই করানো উচিত। এই পরীক্ষায় প্লাটিলেট পরিমাণ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে শিশুর ক্ষেত্রে প্লাটিলেটের পরিমাণ কিছুদিন পর পর পরীক্ষা করানো উচিত।


বাবা-মায়ের করণীয়


১. শিশুর জ্বর হওয়ার প্রথম দিনেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। ‘মৌসুমি জ্বর’ ভেবে অবহেলা করা মোটেই উচিত নয়। দেরি হলেই লক্ষণগুলো প্রকট হয়ে শিশু সংকটজনক পরিস্থিতিতে পড়ে যায়। চিকিৎসকের সন্দেহ হলে প্রথম বা দ্বিতীয় দিনেই ডেঙ্গু এনএসওয়ান অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করে ডেঙ্গু শনাক্ত করানো যায়।


২. জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী প্যারাসিটামল সিরাপ বা ঔষধ ৪ থেকে ৬ ঘণ্টা পরপর খাওয়ানো উচিত। জ্বর যেনো বাড়তে না পারে সে ব্যবস্থা করা উচিত। এ সময় প্রায় প্রতিদিন রক্তের অণুচক্রিকার পরিমাণ দেখা উচিত।


৩. এ সময় শিশুকে বিশ্রামে রাখুন, প্রচুর পানি বা তরল খেতে দিন। রক্ত বাড়ায় যেসব খাবার সেসব খাবার শিশুকে প্রচুর পরিমাণে খাওয়াতে হবে।


৪. শিশু খেতে না চাইলে তাকে অল্প অল্প করে বার বার খাওয়ান। শক্ত খাবার খেতে না পারলে তা নরম করে দিন। বিভিন্ন ফলমূলের জুস করে খাওয়াতে পারেন।


৫. শিশুর মা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হলেও সেই ভাইরাসের কোন প্রভাব মায়ের বুকের দুধে পড়ে না। কাজেই আক্রান্ত অবস্থায় মা তার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন।


৬. জ্বর কমে যাওয়ার পরও যদি শিশু বেশি অসুস্থতা অনুভব করে, তবে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা জরুরি। প্রয়োজনে রক্ত বা প্লাজমা সঞ্চালন এবং ডেঙ্গু শক সিনড্রোমের বিশেষ চিকিৎসা নিতে হবে।


৭. মনে রাখতে হবে, জ্বর নেমে যাওয়ার পরই আসলে জটিলতা শুরু হয়। তাই জ্বর সেরে যাওয়ার দুই থেকে তিন দিন শিশুকে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন।


শিশুদের ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে করণীয়


১. এডিস মশার উৎস ধ্বংস করতে হবে। এডিস মশার লার্ভা জন্ম নিতে পারে এমন স্থানগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো নষ্ট করে ফেলতে হবে। বাড়ি-ঘর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।


২. শিশুদের দিনে ও রাতে মশারির ভেতরে রাখতে হবে। বিশেষ করে নবজাতক শিশুকে সার্বক্ষণিক মশারির ভেতরে রাখা জরুরি।


৩. শিশুদের সাদা বা হালকা রঙের ফুলহাতা পোশাক পরান। হাতে–পায়ে মশা নিরোধক মলম লাগাতে পারেন। নিয়মিত বাসার আশপাশে স্প্রে করুন।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com