মৌসুম বদলের এই সময়ে গলাব্যথা, খুসখুসে কাশি সাধারণ সমস্যা। অনেকে আবার গরমে ঘেমে কাশির সমস্যায় পড়ছেন, কেউ কেউ গরমে ঠান্ডা পানি পান করে কাশির সমস্যায়।
অনেকে দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের কাশির সমস্যায় ভুগছেন। অ্যালার্জির ওষুধ, কাশির ওষুধ খাচ্ছেন; কিন্তু পুরোপুরি সারছে না। দীর্ঘদিনের খুসখুসে কাশি একটি বিরক্তিকর সমস্যা।
কাশি সব সময় বিরক্তিকর ও তীব্র অসহ্যকর অবস্থার সৃষ্টি করে। কাশি নিজে কোনো রোগ নয় তবে বড় ধরনের কিছু রোগের লক্ষণ। শারীরিক, মানসিক, পরিবেশগত নানা কারণে সৃষ্টি হয় কাশির। এমনকি বয়ঃসন্ধিও কখনো কখনো কাশির কারণ হতে পারে।
স্থায়িত্ব অনুযায়ী কাশিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। তিন সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী কাশিকে বলা হয় অ্যাকিউট কাশি। তিন থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত কাশি স্থায়ী হলে তাকে বলা হয় সাব-অ্যাকিউট কাশি। আর আট সপ্তাহের বেশি কাশি হলে তাকে বলা হয় ক্রনিক কাশি।
কাশির সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা হলো তার অন্তর্নিহিত কারণের চিকিৎসা। কাশি সৃষ্টিকারী রোগের চিকিৎসা করলেই কাশি ভালো হয়ে যায়। স্বল্পমেয়াদি কাশির জন্য সবসময় চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি ভাইরাল সংক্রমণ দিয়ে হয়ে থাকে, যেমন সাধারণ ঠান্ডা, ফ্লু ইত্যাদি। এসব রোগ কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজেই ভালো হয়ে যায়।
যে কারণে কাশি হয়
ঠাণ্ডা বা গরমে ঘাম বসে যাওয়া ছাড়াও কাশির অজস্র কারণ আছে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায়। এর মধ্যে প্রধান চারটি কারণ
- ইনফ্লামেটরি বা প্রদাহজনিত কাশি। মূলত শ্বাসনালি বা ফুসফুসে রক্ত চলাচল বেড়ে গিয়ে এই কাশির সৃষ্টি।
- মেকানিক্যাল অর্থাৎ বাইরে বা ভেতর থেকে তৈরি হওয়া কোনো চাপের ফলে সৃষ্ট কাশি।
- কেমিক্যাল অর্থাৎ সিগারেট, বিড়ি বা কোনো তামাক জাতীয় বস্তু গ্রহণ করার জন্য কাশি।
- থার্মাল আবহাওয়া। হঠাৎ ঋতু পরিবর্তনের সময় এখন যে কাশি চারদিকে মানুষের হচ্ছে তা এই ধরনের কাশির মধ্যে পড়ে।
আবহাওয়াজনিত কাশি হলে
ঋতু পরিবর্তনের সময় নিজেকে অতিরিক্ত ঠাণ্ডা লাগা কিংবা গরম লাগা থেকে সুরক্ষিত রাখতে হবে। বিশেষ করে এই সময়ে শিশু ও বয়স্কদের যত্ন নেওয়া অতি জরুরি। কারণ আবহাওয়ার পরিবর্তন শিশু ও বয়স্কদের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। সাধারণ সর্দি, কাশি, জ্বরের পাশাপাশি নানা অসুখও আক্রমণ করতে পারে।
কাশি নিরাময়ে
- তাপমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জামাকাপড় পরতে হবে।
- ধূমপান ও বায়ুদূষণ কাশির কারণ, তাই ধূমপান পরিহারের চেষ্টা করতে হবে।
- রোদে বা গরমে শরীর ঘেমে গেলেও সরাসরি এসিতে যাওয়া অনুচিত। ঘামে ভেজা পোশাক খুলে ঘাম মুছে তার পরে যেতে হবে।
- লিকার চা, কুসুম গরম পানিতে মধু ও লেবুর রস, গরম স্যুপ ইত্যাদি কাশি সারাতে সাহায্য করে।
- গরম পানির ভাপ নিতে পারেন, দীর্ঘদিন ধরে কাশিতে ভুগলে।
- খুব সকালে এবং রাতে গোসল না করাই ভালো।
- বিশেষ করে ধূমপায়ীরা সতর্ক হোন ও চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
প্রাচীন কাল থেকে কাশি হলে আমরা বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে আসছি। আমাদের মা-বাবা, দাদা-দাদি ও নানা-নানি কাশি হলে গরম পানি, তুলসীপাতার রস, বাসকপাতার রস ইত্যাদি খাওয়াত। এগুলোর প্রয়োজনীয়তা এবং কার্যকারিতা আজও আছে।
নিম্নে ঘরোয়া চিকিৎসার কতকগুলো উদাহরণ দেওয়া হলো-
বিশ্রামে থাকুন : বিশ্রাম যেমন ক্লান্তি বা অবসাদ দূর করে, তেমনি শ্বাসনালি এবং ফুসফুসকে আপেক্ষিকভাবে বিশ্রাম দিয়ে কাশিকে প্রশমন করে। কেননা, পরিশ্রম করলে শ্বাস-প্রশ্বাস বেড়ে যায় যা কাশের রোগীর কাশি সৃষ্টিতে প্ররোচিত করে।
প্রচুর পানি পান করুন : পানি আমাদের শরীরের পানির পরিমাণকে বজায় রাখে। শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে আমাদের শরীর থেকে নিঃসৃত সব পদার্থই ঘন হয়ে যায়, তেমনই কফও ঘন হয়ে যায়। ফলে কাশি বের হতে কষ্ট হয়। উষ্ণ পানি পান করলে কফ তরল হয়ে কাশিতে বের হতে সাহায্য করে। অতিরিক্ত তরল পান করলে শ্লেষ্মা পাতলা রাখতেও সাহায্য করে।
গরম পানির বাষ্প টানলে কাশি উপশম হয়। তার সঙ্গে একটু মেনথল দিলে আরও ভালো উপকার পাওয়া যায়। বাষ্প শ্লেষ্মাকে তরল করে কাশিতে বের হতে সাহায্য করে।
মধু একটি প্রচলিত ঘরোয়া প্রতিকার। মধু খেলে কাশি কমে এটা আমাদের সবারই জানা। তবে বটুলিজমের ঝুঁকির কারণে এক বছরের কম বয়সি শিশুদের মধু দেওয়া উচিত নয়। মধুর সঙ্গে লেবুর রস খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
গরম দুধ খেলে কাশি কমে এটা একটা প্রচলিত ধারণা; এটা ভুল। গরম দুধে কাশি কমে এরকম কোনো প্রমাণ নেই।
কাশি সৃষ্টিতে প্রভাবকারী উপাদানগুলোকে দূর করা-
ধূমপান ত্যাগ করা : ধূমপান সিওপিডি বা ক্রনিক ব্রংকাইটিস ছাড়াও কাশি সৃষ্টি করতে পারে, যেটিকে ধূমপায়ীদের কাশি (Smoker’s cough) বলা হয়। ধূমপায়ীর কাশি সাধারণত সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর কয়েকটা কাশি হয় বা ধূমপানের পর কাশি হয়, যা অল্প একটু কফ বা শ্লেষ্মা বের হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়। ধূমপান সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করলে ধূমপায়ীর কাশি বন্ধ হয়ে যায়, এমনকি ক্রনিক ব্রংকাইটিসের কাশি ও শ্বাসকষ্ট কমে যায় এবং রোগীর আয়ু বাড়ায়।
ধুলাবালি (Dust) এড়িয়ে চলা : ধুলাবালি ও ধোঁয়া কাশি সৃষ্টি করতে পারে। যাদের ডাস্ট-অ্যালার্জি আছে, তাদের ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্টও সৃষ্টি করতে পারে। রান্নার ধোঁয়া, কলকারখানার ধোঁয়া ক্রনিক ব্রংকাইটিস সৃষ্টি করতে পারে। তাই এগুলো এড়িয়ে চলা ভালো।
অ্যালার্জেন : যাদের অ্যালার্জি আছে, তাদের ক্ষেত্রে অ্যালার্জেন কাশি বা শ্বাসকষ্ট তৈরি করে। সবার সব কিছুতে অ্যালার্জি হয় না। কারও খাবারে অ্যালার্জি, কারও ধুলাবালিতে অ্যালার্জি, আবার অনেকের ওষুধে অ্যালার্জি। যার যেটায় অ্যালার্জি, সে জিনিসটি এড়িয়ে চলুন।
সর্দি কাশি হলেই অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়া জরুরি নয়। অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক খেলে আমাদের শরীর ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে যায়।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]