উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪, ১৭:৩৫
উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্র
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার পাশে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই কিম প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে সচেষ্ট হয়ে উঠেছে বাইডেন প্রশাসন। জাতিসংঘে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আনা একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে সেটি রুখে দেওয়ার পরই এমন খবর সামনে এলো।


জানা গেছে, ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই প্রথম উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক সূত্র স্থাপনের জন্য একাধিক স্পষ্ট ও খোলামেলা প্রস্তাবসহ দেশটির সঙ্গে আলোচনা ও বৈঠকের জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। উত্তর কোরিয়া বিষয়ক আমেরিকার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জুং পাক এ কথা বলেছেন।


ওয়াশিংটনে ‘সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ’ (সিএসআইএস) আয়োজিত ১৮ মার্চের এক অনুষ্ঠানে জুং পাক বলেন, আলোচ্য বিষয়ের তালিকায় থাকতে পারে নিষেধাজ্ঞার বিষয়, মানবিক সহযোগিতা ও পারস্পরিক আস্থা গড়ে তোলার নানা পদক্ষেপ।


তিনি আরো বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় ভুল বোঝাবুঝি ও অনিচ্ছাকৃত উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়াতে ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা করুক উত্তর কোরিয়া। কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস আয়োজিত আরেক অনুষ্ঠানে জুং পাক বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র চায় পিয়ংইয়ং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় অন্তর্বর্তী পদক্ষেপ নিক।


কার্নেগি এনডাওমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’ আয়োজিত আরেক অনুষ্ঠানে ৫ মার্চ পাক বলেন, পিয়ংইয়ং পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় অন্তর্র্বর্তী পদক্ষেপ নিক, তা দেখতে চায় আমেরিকা।


জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের আমলে ২০০৩-২০০৬ সালে উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ছয় দলীয় পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ সংক্রান্ত আলোচনায় বিশেষ দূত ছিলেন জোসেফ ডিট্রানি। তিনি ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেছেন, বাইডেন প্রশাসন তাদের মেয়াদের শুরুর দিকের তুলনায় বিপরীত অবস্থানে গিয়ে এই পদক্ষেপ নিচ্ছে। এর কারণ হিসেবে ‘কোরীয় উপদ্বীপে উত্তেজনা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে এবং এই বর্ধিত অস্থিরতা থামাতে ও উত্তেজনা প্রশমিত করতে যাবতীয় উদ্যোগ নেয়া দরকার’ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।


চলতি বছরের শুরু থেকে পিয়ংইয়ং বারবার সিউলকে তাদের প্রথম শত্রু বলে অভিহিত করে আসছে। এমনকি হুঁশিয়ারিও দিয়েছে যে, যদি যুদ্ধ বাঁধে তাহলে দক্ষিণ কোরিয়াকে দখল করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে উত্তর কোরিয়া।


চলতি বছরেই উত্তর কোরিয়া একাধিক রকেট ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করেছে, কামান থেকে গোলাবর্ষণ করে কয়েকটি মহড়াও চালিয়েছে। গেল ১৮ মার্চ তাদের সর্বশেষ পরীক্ষায় উত্তর কোরিয়া ‘নতুনভাবে সজ্জিত সুবিশাল রকেট লঞ্চার’ নিয়ে একটি মহড়া দিয়েছে। যুদ্ধ শুরু হলে এই লঞ্চার ‘বিপর্যয়কর পরিণতি’ ঘটাতে পারে বলে জানিয়েছে সে উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা কেসিএনএ।


যদিও বাইডেন প্রশাসন ২০২১ সালে মেয়াদের শুরু থেকে পূর্বশর্ত ছাড়া উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত বলে দাবি করে এসেছে। তবে পিয়ংইয়ংকে কী প্রস্তাব দেওয়া হবে বা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ কোন প্রক্রিয়ায় এগোবে তা নিয়ে তারা বরাবরই নীরব থেকেছে। এবার লক্ষ্য পূরণের দিকে ক্রমবর্ধমান পদক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।


উত্তর কোরিয়ার নিষেধাজ্ঞা নবায়নে ভেটো রাশিয়ার


এর আগে জাতিসংঘে উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে আনা একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে সেটি ঠেকিয়ে দেয় রাশিয়া। এতে উত্তর কোরিয়ায় বছরের পর বছর ধরে জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা পর্যবেক্ষণ করে আসা একটি প্যানেলের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। উত্তর কোরিয়ায় আরোপিত নিষেধাজ্ঞার ওপর নজর রেখে আসা বহুজাতিক ওই বিশেষজ্ঞ প্যানেলের বার্ষিক নবায়ন প্রস্তাব নিয়ে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটি হয়। জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্যদেশ হিসেবে রাশিয়া এই প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে প্যানেলটির নবায়ন আটকে দিয়েছে। অন্য ১৪টি সদস্য দেশের ১৩টিই প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছিল। আর উত্তর কোরিয়ার মিত্রদেশ চীন ভোটদানে বিরত ছিল।


ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও পরমাণু কর্মসূচির জন্য ২০০৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কয়েক দফা নিষেধাজ্ঞার আওতাধীনে আছে। বহুজাতিক বিশেষজ্ঞ প্যানেল গত ১৫ বছর ধরে এসব নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন হচ্ছে কি না তার ওপর নজর রেখে আসছে। নিরাপত্তা পরিষদে বার্ষিক ভোটে এই প্যানেলের কার্যক্রম ১৪ বছর ধরে নবায়ন করা হয়ে আসছিল। রাশিয়া এই প্রথম ভেটো দিয়ে প্যানেলটির কার্যক্রম বন্ধ করল।


ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি জানায়, সম্প্রতি ওই প্যানেলটি জানিয়েছিল, ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো অস্ত্র কিনে রাশিয়া জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করছে-এমন খবর তদন্ত করে দেখছে তারা। প্যানেলটির কার্যক্রম আটকে দেওয়ার রাশিয়ার পদক্ষেপের সমালোচনা করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অন্যান্য পশ্চিমা মিত্রদেশ। মস্কো এবং পিয়ংইয়ংয়ের নেতাদের মধ্যে এক বছর ধরে উচ্চপর্যায়ের কয়েক দফা বৈঠকের পর এমন পদক্ষেপ এলো।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com