
জুলাইয়ের প্রথম চারদিনেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন অন্তত এক হাজার ৩৬৪ জন, যেখানে পুরো জুনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার ৯৫১। জুলাইয়ের শুরুতেই আক্রান্তের এই সংখ্যা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) তথ্য অনুযায়ী, আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও ২০৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ হাজার ৬৬০ জনে এবং মারা গেছেন ৪৫ জন।
এদিকে, চলতি বছরের মে মাসের তুলনায় জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই বছর সারা দেশে ৯,০৬৫ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে জুন মাসেই (তিন দিন বাকি থাকতেই) ভর্তি হয়েছেন ৪,৭২০ জন, যা মে মাসে ছিল মাত্র ১,৭৭৩ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বছরের শুরুর দিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম ছিল। জানুয়ারিতে ১,১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪, মার্চে ৩৩৬ এবং এপ্রিলে ৭০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে এবং জুনে এসে তা ভয়াবহ রূপ নেয়। আশঙ্কার বিষয় হলো, ঢাকার বাইরের জেলাগুলোতে, বিশেষ করে বরগুনায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ অনেক বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, চলতি সপ্তাহে (শনি-শুক্রবার) ডেঙ্গুতে পাঁচ জনের মৃত্যু এবং দুই হাজার ৪৩৮ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪ হাজার ৩৪৫ জন। তবে এক জুন মাসেই এর চেয়ে বেশি মানুষ এডিস মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন; এ সংখ্যা ৫ হাজার ৮০৪। সরকারি হিসাব বলছে, এযাবৎকালের মধ্যে এক মাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ডেঙ্গু সংক্রমণ হয়েছে জুনে।
গত সাত দিনের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৮ জুন ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু এবং ২৬২ জন হাসপাতালে, ২৯ জুন একজনের মৃত্যু এবং ৩৮৩ জন হাসপাতালে, ৩০ জুন কারও মৃত্যু না হলেও ৪২৯ জন হাসপাতালে, ১ জুলাই একজনের মৃত্যু এবং ৩৮৬ জন হাসপাতালে, ২ জুলাই একজনের মৃত্যু এবং ৪১৬ জন হাসপাতালে, ৩ জুলাই একজনের মৃত্যু এবং ৩৫৮ জন হাসপাতালে এবং ৪ জুলাই কারও মৃত্যু না হলেও ২০৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা এভাবে বাড়তে থাকলে সামনে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার স্বাস্থ্যবিষয়ক বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সাইদুর রহমান।
'পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে এবং সরকারও প্রস্তুত রয়েছে', বলেন তিনি।
ডা. সাইদুর বলেন, 'চিহ্নিত হটস্পটগুলোতে আমরা সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছি। আমরা প্রস্তুত। তবে ডেঙ্গু আরও ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি কঠিন হয়ে পড়তে পারে। মানুষ যদি আমাদের পরামর্শ মেনে চলে, তাহলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।'
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বিস্তার ঠেকাতে সারাদেশে, বিশেষ করে ঢাকার বাইরে জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, সাধারণ ফগিংয়ের চেয়ে লার্ভিসাইড ব্যবহার ও প্রজননস্থল ধ্বংস করার ব্যাপারে সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। কারণ ফগিং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কার্যকর নয়।
লার্ভিসাইডের পাশাপাশি তিন মাস পর্যন্ত ইনসেক্ট গ্রোথ রেগুলেটর (আইজিআর) ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। পাশাপাশি, মশার বংশবৃদ্ধি ঠেকাতে পানি জমে থাকা পাত্র পরিষ্কার ও উল্টে রাখার আহ্বান জানান অধ্যাপক কবিরুল।
দেশের ৬৪ জেলায় আগের বছরের তুলনায় ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করে কবিরুল বাশার বলেন, এডিস মশা এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
কীটতত্ত্ববিদ জিএম সাইফুর রহমানও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এডিস মশার দ্রুত বৃদ্ধিই আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ার কারণ। একবার সংক্রমিত হলে মশাগুলো সংক্রমিত ডিম পাড়ে, যা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তোলে।
মশাবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে একটি বিশেষায়িত বিভাগ গঠনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'এই বিভাগটি ক্লাস্টার শনাক্তকরণ, নজরদারি ও লক্ষ্যভিত্তিক পদক্ষেপ নেবে। একটি কাঠামোবদ্ধ পদ্ধতি ছাড়া বর্তমান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবে।'
বিবার্তা/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]