
বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ও জাকজমকপূর্ণ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট বলা হয় ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগকে (আইপিএল)। তবে এ টুর্নামেন্ট ঘিরে রয়েছে অনেক বিতর্ক। বিশেষ করে আইপিএল ঘিরে গড়ে ওঠা বেটিং সিন্ডিকেট। আর এ সিন্ডিকেটের কাছে টাকা হারাচ্ছেন অনেকে, নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছেন রাতারাতি।
তেমনি একজন দর্শন বাবু, পেশায় প্রকৌশলী। ক্রিকেট ম্যাচে বাজি ধরা যার নেশা। ২০২১ সাল থেকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচগুলোতে বড় বাজি ধরে আসছেন তিনি। কোনো বাজি হারলে বা বাজি ধরতে গিয়ে টাকা কম পড়লে প্রায়ই ধার-দেনা করতেন দর্শন। এই ধারই এবার কাল হয়েছে তার জন্য। পাওনাদারদের ক্রমাগত হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যা করেছেন দর্শনের স্ত্রী রঞ্জিতা পঞ্চম (২৪)।
গেল ১৮ মার্চ ভারতের কর্ণাটকের চিত্রদুর্গায় রঞ্জিতাকে তার নিজ বাড়িতে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। পরিবারের মতে, দর্শন ১ কোটি রুপিরও বেশি ঋণ নিয়েছিল।
এনডিটিভি বলছে, দর্শন হোসাদুর্গায় ক্ষুদ্র সেচ দফতরের সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করছিলেন এবং ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আইপিএলে বাজির জগতের ফাঁদে পড়েন। তিনি আগের আইপিএল মৌসুমে বাজি ধরেছিলেন। একটি অনলাইন জুয়ায় অংশ নিয়ে হেরে যান। জুয়ার টাকা মেটাতে তিনি ৮৫ লাখ রূপি রুপি ঋণ করেন। সবমিলিয়ে তার অর্থ হারানোর পরিমাণ দেড় কোটি রূপি।
অভিযোগ রয়েছে, সব অর্থ শেষ হয়ে যাওয়ার পর দর্শন বাজি ধরার জন্য দেড় কোটিরও বেশি রুপি ধার করেছিলেন। যদিও তিনি ১ কোটি রুপি ফেরত দিতে পেরেছেন। কিন্তু তার এখনও ৮৪ লাখ রুপি ঋণ আছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ বলছে, গত ১৮ মার্চ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রঞ্জিতাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
চিত্রদুর্গের হললকের এলাকার বাসিন্দা রঞ্জিতার বাবা ভেঙ্কটেশ এম পুলিশের কাছে অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার জামাতা দর্শন বালু আইপিএল বাজিতে আসক্ত। ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত জুয়া খেলে তিনি প্রচুর অর্থ হেরেছেন।’
পুলিশ জানিয়েছে, গুরুতর ক্ষতির পরও জুয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য দর্শন বালু বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে অতিরিক্ত সুদে ঋণ নিয়েছিলেন।
পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, দর্শন বালু খালি চেক দিয়েছিলেন এবং ৮৫ লাখ রুপি পর্যন্ত ঋণ নিয়েছিলেন। তার মোট ক্ষতির মূল্য দেড় কোটি রুপি। বালু এখনও তার বক্তব্য না দেয়ায় আমরা ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করছি।
ভেঙ্কটেশের অভিযোগে আরো বলা হয়েছে, তার জামাতাকে অন্যরা আইপিএল জুয়ায় অংশ নিতে বাধ্য করেছিল, যারা প্রচুর লাভের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে প্রতারণা করেছে।
অবশ্য পুলিশ বলছে, বালু জুয়ায় আসক্ত ছিলেন, তার স্ত্রীও এটি জানতেন। তিনি অর্থ হারিয়েছিলেন ও অতিরিক্ত ঋণ নিয়েছিলেন। ঋণ পরিশোধের জন্য তিনি আরও ঋণ নিতে শুরু করেন। ঋণদাতাদের মধ্যে একজন নগদ অর্থের জন্য সাড়ে চার লাখ রুপির চেকও পেশ করেছে।
২০২০ সালের জানুয়ারিতে বালুর সঙ্গে বিয়ের জন্য রঞ্জিতা কলেজ ছেড়ে দেন, তখন তিনি প্রথম বর্ষের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্রী ছিলেন।
এদিকে, তদন্তের সময় একটি সুইসাইড নোট পেয়েছে পুলিশ। যেখানে রঞ্জিতা হয়রানির শিকার (দর্শনের পাওনাদারদের) হওয়ার বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। দর্শন ও রঞ্জিতার দুই বছরের একটি সন্তান রয়েছে।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]