
মিয়ানমারের আগামী নির্বাচন নিয়ে মুখ খুলেছেন জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং। শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকলে নির্বাচনের আয়োজন করতে চায় মিয়ানমারের জান্তা সরকার। তবে সেই নির্বাচনে ভোটগ্রহণ দেশব্যাপী নাও হতে পারে। জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং এমন কথার পাশাপাশি বলেছেন, দেশটির অভ্যন্তরে বেশ কয়েকটি স্থানে যেহেতু বিদ্রোহী ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে যুদ্ধাবস্থা রয়েছে, সেহেতু এই সিদ্ধান্তের পথে হাঁটছে তারা।
মিয়ানমারের জান্তা প্রধানের এ বক্তব্য এমন সময়ে এলো যখন কিনা বিরোধীদের তীব্র চাপের মুখে রয়েছে জান্তা বাহিনী।
ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া এসব তথ্যের পাশাপাশি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এখন থেকে তিন বছর আগে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে সামরিক বাহিনী। এ সময় তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে জানায়। এরপর আজ পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে জান্তা প্রধান। যদিও বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় বিদ্রোহ। গত বছরের শেষ দিক থেকে কয়েকটি আদিবাসী বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী এবং বিদ্রোহী দল একজোট হয়ে জান্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বাত্মক লড়াই শুরু করে।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখা গেছে, এরইমধ্যে তারা সেনাবাহিনীকে হটিয়ে কয়েকটি অঞ্চলের দখলও নিয়েছে। কয়েকটি যুদ্ধক্ষেত্রে এখনও তুমুল লড়াই চলছে। এরইমধ্যে জান্তা প্রধান মিন অং হ্লাইং নির্বাচনের কথা বললেন। যেখানে তিনি জানান, মিয়ানমারের পরবর্তী নির্বাচন দেশব্যাপী নাও হতে পারে।
তিন বছর আগে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতায় আসে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপর থেকেই জান্তা সরকার বলে আসছিল সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।
১৯৬২ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় মিয়ানমার। এরপর থেকেই দেশটির ক্ষমতায় রয়েছে সেনাবাহিনী। কখনো পরোক্ষভাবে কখনো বা প্রত্যক্ষভাবে ক্ষমতায় রয়েছে তারা। ১৯৬২ সালের পর এবারই প্রথমবারের মতো চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। গণতন্ত্রপন্থি যুবকদের বিরোধিতায় চাপে রয়েছে তারা।
দীর্ঘদিন ধরেই উত্তর ও পূর্ব মিয়ানমারে জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়ছে জান্তা বাহিনী। সম্প্রতি জাতিগত গোষ্ঠীগুলো এক হয়ে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এতে অগ্রসরও হয়েছে তারা। বিরোধীদের দাবি, লড়াই না জিততে পেরে বেসামরিকদের ওপর নৃশংসতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনী।
রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা তাসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে মিন অং হ্লাইং বলেন, যদি দেশ শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল থাকে তাহলে আইন মেনে দেশব্যাপী নির্বাচন আয়োজন সম্ভব না হলেও যতটা সম্ভব সংশ্লিষ্ট অঞ্চলগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রয়েছে।
ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই জরুরি অবস্থার মেয়াদ বাড়াচ্ছে জান্তা সরকার। সবশেষ জরুরি অবস্থার ছয় মাসের মেয়াদ বাড়িয়েছে তারা। দেশকে স্থিতিশীল করতেই তাদের এ প্রচেষ্টা বলে দাবি করা হচ্ছে।
বিদ্রোহী ও জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দমনে ভারী কামান এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে জান্তা বাহিনী। জাতিসংঘের তথ্যমতে, অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ২৩ লাখ মানুষ। একই সময়ে ৪০টি রাজনৈতিক দলকে নিশ্চিহ্ন করেছে তারা।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]