রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পর থেকেই যুদ্ধে সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ পাওয়া এড়াতে দেশটি থেকে পালাতে শুরু করেছে দেশটির পুরুষরা। এখন পর্যন্ত দেশটিতে পরিবার ছেড়ে ২০ হাজার পুরুষের পালানোর খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে কেউ কেউ দেশ ত্যাগ করতে গিয়ে বিপজ্জনক নদী সাঁতরে পার হয়েছে। অনেকে আবার রাতের আঁধারে হেটেই সীমান্ত অতিক্রম করেছে।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুদ্ধে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়া লাগতে পারে এমন ভীতিই মূলত কাজ করছে তাদের মনে। এদের মধ্যে কেউ কেউ দেশ ত্যাগ করতে গিয়ে বিপজ্জনক নদী সাঁতরে পার হয়েছে।
কিয়েভ জানিয়েছে, আরো ২১ হাজার ১১৩ জন পালানোর চেষ্টা করার সময় ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের হাতে ধরা পড়েছে। রাশিয়ার আক্রমণের পর ১৮-৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
কিন্তু বিবিসির হাতে যে তথ্য এসেছে তা থেকে জানা যাচ্ছে, প্রতিদিন কয়েক ডজন করে পুরুষ ইউক্রেন ছেড়েছে। বিদেশে পরিবারের সাথে মিলিত হতে, পড়াশুনা করতে কিংবা কাজের খোঁজে ইউক্রেন ছেড়েছে এমন বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলেছে বিবিসি।
ইয়েভগেনি নামে একজন বলেন, ‘আমি আসলে কী করতাম (ইউক্রেনে)?’ ‘সবাই যোদ্ধা নয়... পুরো দেশকে আটকে রাখার কিছু নেই। আপনি সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো সবাইকে একসাথে হাতের মুঠোয় দলা পাকিয়ে রাখতে পারেন না।’
ইউক্রেনের প্রতিবেশী রাষ্ট্র রোমানিয়া, মলদোভা, পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়ার কাছ থেকে সীমান্ত পারাপারের তথ্য সংগ্রহ করে বিবিসি দেখতে পেয়েছে যে, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ১৯ হাজার ৭৪০ জন পুরুষ অবৈধভাবে এসব দেশে প্রবেশ করেছে। আমরা অবশ্য জানি না এসব পুরুষরা কিভাবে পালিয়েছে। আমরা এটাও জানি না যে, আরো ২১ হাজার ১১৩ জন পুরুষ কিভাবে পালানোর চেষ্টা করে ধরা পড়েছিল।
ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ বলছে, এদের মধ্যে বেশিরভাগ পুরুষ অর্থাৎ প্রায় ১৪ হাজার ৩১৩ জন সাঁতরে কিংবা হেঁটে সীমান্ত পার করার চেষ্টা করেছে। বাকি ছয় হাজার আটশ’ জন অসুস্থতার বাহানায় ভুয়া নথি তৈরি করে সীমান্ত পারের চেষ্টা করেছে। সামরিক বাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ থেকে বাদ দেয়া হয়েছে তাদের, যাদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা রয়েছে, দেখাশুনা করার মতো দায়িত্ব রয়েছে এবং তিন বা তার থেকে বেশি সন্তানের বাবা যারা।
গত আগস্টে ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশটির সামরিক বাহিনীর মেডিক্যাল কমিশনের ‘দুর্নীতির সিদ্ধান্তের’ সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্তের কারণে, চিকিৎসাজনিত কারণ দেখিয়ে সামরিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির সংখ্যা ১০ গুণ বেড়েছে। তিনি সামরিক বাহিনীতে নিয়োগদানের দায়িত্বে থাকা সব আঞ্চলিক কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। একইসাথে কমপক্ষে ৩০ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। সামরিক কর্মকর্তারা ঘুষ নিয়ে মানুষদের সামরিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতো বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রেসিডেন্টের পার্লামেন্টারি প্রতিনিধি ফেডির ভেনিস্লাভস্কি বিবিসিকে বলেছেন যে, এ সমস্যা বেশ গুরুতর। সরকার বুঝতে পেরেছে যে, এই চর্চা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয় এবং এটি বেশ বিস্তৃত। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, আমাকে জোর দিয়েই বলতে হচ্ছে যে, দুর্নীতি ঘটে চলেছে।
তিনি আরো যোগ করেন, ইউক্রেন দুর্নীতির সংখ্যা সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখতে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী সব কিছুই করছে।
ভেনিস্লাভস্কি বলেন, পালিয়ে যাওয়া পুরুষদের সংখ্যা কিংবা পালানোর চেষ্টা করা পুরুষদের সংখ্যা যুদ্ধের কার্যক্রমের ওপর কোনো ধরনের প্রভাব ফেলছে না। আমি বিশ্বাস করি, ইউক্রেনীয়দের স্বনির্ভরতা, সার্বভৌমত্ব এবং স্বাধীনতা রক্ষার বিষয়ে তাদের আগ্রহ ও প্রস্তুতি ৯৫-৯৯ শতাংশ রয়েছে।
ভেনিস্লাভস্কি বিবিসিকে বলেন, যারা চলে যেতে চায় তাদের সংখ্যা ১-৫ শতাংশ। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষার জন্য তারা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়।
তিনি বলেন, যুদ্ধে যোগ দেয়া মানুষদের সংখ্যা সহসাই বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা নেই। ৪০ হাজার পুরুষ যারা পালিয়ে গেছে বা পালানোর চেষ্টা করেছে, তারা মিলিতভাবে অবশ্যই একটি বড় সংখ্যা যাদের ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য প্রয়োজন। গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ধারণা দেয় যে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর আনুমানিক ৭০ হাজার সদস্য যুদ্ধে নিহত হয়েছে। যদিও হতাহতের কোনো সংখ্যা কিয়েভ দেয়নি।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]