‘বহু ওপরের নির্দেশ, পিডাইয়া লম্বা করে দেন’
প্রকাশ : ১৬ মে ২০২৪, ০১:৪৫
‘বহু ওপরের নির্দেশ, পিডাইয়া লম্বা করে দেন’
কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে সহযোগিতাকারীদের ‘পিটিয়ে লম্বা করে দেওয়ার নির্দেশ আছে’ বলে হুমকি দিয়েছেন কুমিল্লা সদর দক্ষিণের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান গোলাম সারওয়ার।


মঙ্গলবার (১৪ মে) রাত ৯টার দিকে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার বিজয়পুর বাজারে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সাথে নিজের কাপ-পিরিচের প্রতীকের পথসভায় বক্তব্য প্রদানকালে এসব কথা বলেন তিনি।


সভায় দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেছেন, সাবধান, আমাদের কিন্তু এখনো রক্তমাংস আছে। খালি আপনারাই আমাদের কিছু করবেন আর আমরা কিছু করতে পারব না, এটা ভুল। আর যারা তাদের সহযোগিতা করে আগে তাদের পিডাইয়া লম্বা করেন। একদম সোজা করে পিডান। এটা আমাদের বহু ওপরের নির্দেশ, এটা অনেক ওপরে আলোচনা হইছে।


‘প্রধানমন্ত্রীও একথা জানে’ দাবি করে গোলাম সারওয়ার বলেন, তিনি বলছেন, তোমরা কী করো? তোমরা পিডাচ্ছো না কেন? হুকুম দেয়া লাগবে? তাহলে কেন করতেছেন না আপনারা? আর আপনারা যদি আপনাদের অধিকার ছাইড়া দেন আমাদের কিচ্ছু করার নাই।


গোলাম সারওয়ার কুমিল্লা-১০ (কুমিল্লা সদর দক্ষিণ, লালমাই ও নাঙ্গলকোট) আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের ছোট ভাই।


তিনবারের উপজেলা চেয়ারম্যান সারওয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির পদে রয়েছেন।


তার এই বক্তব্যের ভিডিও সোশাল মিডিয়াতেও ছড়িয়েছে। ওই সভায় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা যার যা আছে তা নিয়ে প্রস্তুত হন। সাড়ে তিন হাইত্যা লাডি, আড়াই হাইত্যা লাডির চেয়ে বড় কোনো অস্ত্র অইতে পারে না। এডা আরম্ভ করেন, দেখবেন সব দালালের দালালি বন্ধ হয়ে যাবে। সব সোজা হয়ে যাবে।


গোলাম সারওয়ার বলেন, এই হুমকি দেয়ার জন্য তারা কি মেশিনগান নিয়ে আসবে? আর পুলিশ প্রশাসন, বিডিআর, র‌্যাব বসে বসে আঙুল চুষবে নাকি? হেই দিন গেছে গা। সুতরাং যারাই স্বপ্নডা দেখেন তাদেরকে অনুরোধ করব স্বপ্ন দেখা বন্ধ করেন, এগুলা কইরেন না। মানুষের যেন রক্তক্ষরণ না হয়।


তিনি আরও বলেন, আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে। এখন আর পিছনে ফেরার কোনো উপায় নেই আমাদের। তার (হেলিকপ্টার প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল হাই বাবুল) সাথে কিছু দালাল ঢুকে গেছে। দালালদেরকে কান্দিরপাড় পার করেন।


নেতাকর্মীদের উদ্দেশে এই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী বলেন, আমাদেরকে বাঁচতে হবে। পুঁটিমাছ মরতে গেলেও দশ লাইল (আইল) ঘুরে মরে। আমরা কি পুঁটিমাছের চেয়ে খারাপ হয়ে গেছি? আমাদেরকে এভাবে হুমকি দেবে ধমকি দেবে, আমরা কি বসে বসে আঙুল চুষব নাকি? আপনাদের গায়ে রক্তমাংস নাই? তাহলে আপনারা এখনো জেগে উঠছেন না কেন? বলতে হবে কেন?


গোলাম সারওয়ার বলেন, আপনার অধিকার আপনাকেই রক্ষা করতে হবে। আপনার অধিকার আপনাকেই ফিরিয়ে নিতে হবে। একবার ফিরে দাঁড়ান, দেখবেন জীবনে আর হুমকি দিবে না। আমি আজকের এই পথসভা থেকে আপনাদেরকে অনুরোধ তাদেরকে, তারা যা করতেছে এটা যেন আর না করে। সাবধান, আমাদের কিন্তু এখনো রক্তমাংস আছে। খালি আপনারাই আমাদের কিছু করবেন আর আমরা কিছু করতে পারব না, এটা ভুল। আর যারা তাদের সহযোগিতা করে আগে তাদের পিডাইয়া লম্বা করেন। একদম সোজা করে পিডান। এটা আমাদের বহু ওপরের নির্দেশ।


১৫ বছর ধরে এলাকার জন্য কাজ করছেন মন্তব্য করে গোলাম সারওয়ার বলেন, আমি নীরবে কাজ করছি। আমি কোনো হুমকি-ধমকি করি না যে আমি এই করেছি সেই করেছি। সারা এলাকায় যত ব্রিক সোলিং, যত কালভার্ট, যত ব্রিজ, পোল-ওয়াল সব আমার করা। আমি জানি যদি ফিরিস্তি দিতে হয় এক এক ইউনিয়নে হাজার হাজার পৃষ্ঠা হবে। যা কাজ করছি বলতে চাই না। সুতরাং চিন্তা করেন ১৫ বছর আগে এই এলাকা কেমন ছিল, এখন কেমন আছে চিন্তা করুন।


প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন করেন, আর তারা বলে যে আমরা কী করছি। আরে আমার প্রশ্ন কী করি নাই? তারা কী করছে সেটা আমার প্রশ্ন।


২১ মে ‘সুষ্ঠু-সুন্দর’ নির্বাচন দেখতে চান জানিয়ে গোলাম সারওয়ার বলেন, প্রশাসনকে বারবার বলছি, যদি এই এলাকায় কোনো বহিরাগত ঢোকে, তাহলে আমিও লালমাই, নাঙ্গলকোট থেকে হাজার হাজার ঢুকাই দিমু এই এলাকায়। তারা সব রেডি থাকবে। আমরা এই এলাকায় শান্তি স্থাপন করতে চাই। শান্তিতে থাকতে চাই। আমরা কোনো এলাকায় যাই না। আমাদের এলাকায়ও কেউ যেন মাতব্বরি না করে। তাদের লজ্জা থাকা উচিত।


আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, আমরা কোনো এলাকায় যাই না এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। তারা কেন এই এলাকায় এসে এত লাফালাফি করবে? কেন হস্তক্ষেপ করবে? কেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আদেশ অমান্য করেন?


কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের দিকে ইংগিত করে সারওয়ার বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছেন যেন কোনো এমপি কোনো উপজেলায় কাউকে প্রভাবিত না করে, হস্তক্ষেপ না করে। উনি (এমপি) বাহার কি প্রভাবিত করতেছেন না? কীসের জন্য? কীসের স্বার্থে? আমরা কী অন্যায় করছি? আমরা নাকি সব শেষ করতেছি। উনি (এমপি বাহার) কই ত্থেকে এই কথা শুনলেন? উনি কী করছেন আমরা দেখি নাই?


তিনি বলেন, ‘আমরা সবাইকে সম্মান করতে চাই। উনিও আমার নেতা। উনি কেমন নেতা, যে নেতা আমাদের ভালোমন্দ দেখবে না! আমাদের সুখ-শান্তি দেখবে না! কেমন নেতা উনি? উনি খালি বাবলুকে নিয়ে আছে। উনি বাবলুকে বহিষ্কার করেন নাই? ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের বাড়ি দখল করছিল। পরে বাবলুকে বহিষ্কার করছিল। উনি ওর (বাবলু) মধ্যে কী মজা পাইছে আমি জানি না।


আগামী ২১ মে দ্বিতীয় ধাপে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন তিনজন।


বাকি দুজনের একজন হলেন হেলিকপ্টার প্রতীকের আবদুল হাই বাবলু। তিনি কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা পরিষদের টানা তিনবারের ভাইস চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। বাবলু কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের অনুসারী।


অপরজন হলেন ব্যবসায়ী ও আনারস প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান রিপন।


এ প্রসঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া বলেন, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছে। আশা করছি প্রার্থীরা এমন কোনো বক্তব্য দেবেন না, যাতে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নষ্ট হয়। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে সকল ধরনের প্রস্ততি নিয়েছি।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com