ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে গাজার বেঁচে থাকা বাসিন্দারা। দিনের পর দিন দখলদার ইসরাইলী বাহিনীর টানা বোমা হামলায় বিধ্বস পুরো গাজা। এখনো যারা বেঁচে আছে তারা মৃত্যুর প্রহর গুণছে। আর হাসপাতালগুলোতে লাগাতার হামলার পর সেগুলোও বন্ধ হয়েছে। আহত কিংবা অসুস্থ মায়েদের মিলছে না চিকিৎসা। এমন পরিস্থিতির মাঝে জন্ম নেওয়া অপরিণত নবজাতকদের বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বিদ্যুতের অভাবে হাসপাতালের ইনকিউবেটর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নবজাতকদের ফয়েল পেপারে রাখা হচ্ছে।
নির্ধারিত সময়ে আগে কিংবা অপরিণত বয়সে জন্ম নেয়া নবজাতকদের সাধারণত ইনকিউবেটরে রাখতে হয়। ইসরাইলি অব্যাহত হামলার মুখে গাজা উপত্যকার আশ-শিফা হাসপাতালের নবজাতকদের ইনকিউবেটর থেকে বের করে ফয়েলে মুড়ে গরম পানির কাছাকাছি রাখা হয়েছে। উপত্যাকার বৃহত্তম এই স্বাস্থ্য পরিচর্যা কেন্দ্রে শিশুদের বাঁচিয়ে রাখার বেপরোয়া প্রয়াসে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আল-আরাবি টিভিতে সোমবার এক সিনিয়র কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে।
গাজার বৃহত্তম দুটি হাসপাতালের কাছাকাছি এলাকায় ইসরাইল অব্যাহতভাবে হামলা চালাতে থাকায় সেগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে শত শত লোক চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আশ-শিফা হাসপাতালের স্টাফরা অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর নবজাতকদের বাঁচিয়ে রাখতে এখন বেপরোয়া প্রয়াস চালাচ্ছেন। তারা বাচ্চাগুলোকে নিউনাটাল ইউনিটের ইনকিউবেটর থেকে হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে রাখা হয়েছে।
ডা. মোহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেন, 'কিছুক্ষণ আগে আমি তাদের সাথে ছিলাম। তারা এখন উন্মুক্ত। কারণ আমরা তাদেরকে ইনকিউবেটর থেকে বের করে ফেলেছি। আমরা তাদেরকে ফয়েলে মুড়িয়ে গরম পানির পাশে রেখে দিয়েছি, যাতে আমরা তাদেরকে উষ্ণ রাখতে পারি।
ওই চিকিৎসকের বক্তব্যের প্রমাণ পাওয়া যায় কয়েকটি শিশুর ছবিতে। ওই শিশুদেরকে ইনকিউবেটর থেকে সরিয়ে অসহায়ভাবে জড়ো করে রাখা হয়েছে।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া জানান, অপরিণত নবজাতকদের ইনকিউবেটর থেকে বের করে ফয়েল পেপারে রেখে গরম পানির পাশে রাখা হয়েছে। যাতে বাইরের ঠান্ডা থেকে তারা উষ্ণ থাকে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক মেহদাত আব্বাস বলেন, শিশুদের ঠান্ডা থেকে রক্ষা করার জন্য তাদের চারপাশে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল রাখা হয়েছে। এখন শীত পড়তে শুরু করেছে। নবজাতকদের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা না থাকলে, তারা মারা যাবে। আমি আশা করি, এই হাসপাতালটি এত দুর্যোগের মধ্য দিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও নবজাতকরা বেঁচে থাকবে।
এদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, গাজার সর্ববৃহৎ হাসপাতাল আল-শিফা মৃতদের দাফন করতে পারছে না, সেখানে মরদেহে পচন ধরেছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও জ্বালানির সংকটে পড়া হাসপাতালটি ‘প্রায় কবরস্থান’ হয়ে উঠেছে বলে সংস্থাটি জানিয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে হাসপাতালটির আশপাশের এলাকায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলি বাহিনীর তীব্র লড়াই চলছে। হাসপাতালের গেটের কয়েক মিটারের মধ্যে ইসরায়েলি ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান অবস্থান নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]