
চীন ও রাশিয়াকে মোকাবিলা করার জন্য নতুন পারমাণবিক অ্যাটাক সাবমেরিন তৈরি করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অকাস (অস্ট্রেলিয়া, বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্র বা এইউকেইউএস) কর্মসূচির অংশ হিসেবে পারমাণবিক সাবমেরিন তৈরিতে ৪০০ কোটি ডলার দিচ্ছে বৃটেন। এজন্য তারা বৃটিশ তিনটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে সাবমেরিনের ডিজাইন এবং পারমাণবিক শক্তিচালিত এই সাবমেরিন তৈরিতে।
বৃটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই সাবমেরিনের নাম দিয়েছে এসএসএন-অকাস।
তারা আরো বলেছে, বৃটিশ নৌবাহিনী এ যাবৎ যত সাবমেরিন পরিচালনা করেছে তার মধ্যে এই নৌযান হবে সবচেয়ে বৃহৎ, সবচেয়ে অত্যাধুনিক এবং সবচেয়ে শক্তিধর। এতে থাকবে বিশ্বে নেতৃস্থানীয় সেন্সর, ডিজাইন হবে অতি আধুনিক এবং অস্ত্র বহনে সক্ষম। চুক্তিবদ্ধ তিনটি কোম্পানি হলো বিএই সিস্টেমস, রোলস-রয়সে এবং বেবকক।
বলা হয়েছে, এই চুক্তি হলো বৃটেন এবং অকাস কর্মসুচির মধ্যে এক বড় মাইলফলক। ২০৩০-এর দশকে প্রথমে সাবমেরিনটি সরবরাহ দেয়া হবে বৃটেনে। অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম সরবরাহ দেয়া হবে ২০৪০-এর দশকের শুরুতে।
এর মধ্য দিয়ে তারা এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের বিরুদ্ধে কাউন্টার দিতে চান। অস্ট্রেলিয়ায় বর্তমানে যে নৌফ্লিট আছে তা ডিজেলচালিত। তার সঙ্গে পারমাণবিক শক্তিচালিত এই সাবমেরিন হবে বড় মাত্রায় সামনে এগিয়ে যাওয়া। কারণ, এই সাবমেরিনে আছে সবচেয়ে গোপনীয় সব বিষয় এবং বড় রকমের পাল্লা। বৃটেন ছাড়া প্রথম একটি দেশ হিসেবে প্রথমবারের মতো পারমাণবিক চালনা শক্তিসম্পন্ন প্রযুক্তি অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে শেয়ার করেছে ওয়াশিংটন।
এর আগে অকাস চুক্তিকে সামরিক সক্ষমতায় সবচেয়ে এগিয়ে যাওয়ার একটি ধাপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মারলেস। তিনি বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে তাদের কাছে যে সামরিক সক্ষমতা আছে এর মধ্য দিয়ে তা আরও বৃদ্ধি পাবে। অকাসের অধীনে ক্যানবেরার কাছে ৫টি পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন বিক্রি করার ইচ্ছা পোষণ করে ওয়াশিংটন। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার মানের এসব সাবমেরিন ২০৩০-এর দশকের শুরুর দিকে ক্যানবেরাকে দেয়ার কথা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্যাসিফিক অঞ্চলজুড়ে চীন যে ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার করছে তা মোকাবিলায় এসব শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে অকাস।
কার্নেজ এন্ডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস নামের থিংকট্যাংকের ইন্দো-প্যাসিফিক নিরাপত্তা বিষয়ক সিনিয়র ফেলো অ্যাশলে টাউনশেন্ড বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জলসীমায় এসএসএন তার কর্মকাণ্ড চালাতে সক্ষম হবে। এর মধ্য দিয়ে চীনের যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিনের মোকাবিলা করা হবে।
সামুদ্রিক লেন এবং বিভিন্ন কৌশলগত পয়েন্ট নিয়ন্ত্রণে নেয়া হবে। এতে দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র থাকবে। এর মধ্য দিয়ে তাদেরকে চীনের সেনাবাহিনীর পরিকল্পনাকে অধিক মাত্রায় জটিল করে দেবে।
তিনি আরো বলেন, একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন ও অস্ট্রেলিয়ান এসএসএন সম্মিলিত শক্তি হিসেবে পরিচালিত হবে। অস্ট্রেলিয়া যোগ দেবে যুক্তরাষ্ট্র এবং বৃটেনের সঙ্গে।
পক্ষান্তরে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে অকাসের এসব কর্মকাণ্ডকে বেআইনি বলে এর নিন্দা জানিয়েছে চীন। এজন্য তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অস্ট্রেলিয়া, বৃটেন ও যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছে। বলেছে, তারা ভুল ও বিপজ্জনক পথ অবলম্বন করছে ভূরাজনীতিতে নিজেদের স্বার্থের জন্য। অকাসের শীতল যুদ্ধের মানসিকতা শুধু অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষতি করবে। ক্ষতি করবে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও শান্তি।
এর বিপরীতে চীনও পিছিয়ে নেই। নিজেদের শক্তি বাড়াতে দক্ষিণ চীন সাগরে মনুষ্যবিহীন সাবমেরিন নামাতে যাচ্ছে দেশটি। সম্প্রতি স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া তথ্য থেকে এ ধারণা আরও শক্ত হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নেভাল নিউজের এক প্রতিবেদনে স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া চিত্র বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে, চীনের হাইনান দ্বীপে অবস্থিত চীনা নৌঘাঁটি সানায়ায় দুটি বড় আকারের সমুদ্রের তলদেশে কার্যক্রম চালাতে সক্ষম এমন নৌযানের অবস্থান রয়েছে। ওই দ্বীপটি দক্ষিণ চীন সাগরের একেবারে নিকটবর্তী।
বিবার্তা/লিমন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]