বিশ্ব নিরামিষ দিবস আজ
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:১৫
বিশ্ব নিরামিষ দিবস আজ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

আজ বিশ্ব নিরামিষ দিবস। উদ্ভিদভোজী বা নিরামিষভোজীদের দিন। নিরামিষ বা শাক-সবজি জাতীয় খাদ্য জীবনযাত্রার স্বাস্থ্য, নৈতিক, মানবিক এবং পরিবেশগত সুবিধার বিষয়ে সচেতন ও উৎসাহিত করতে ১৯৭৭ সালের ১ অক্টোবর উত্তর আমেরিকার নিরামিষভোজী সংগঠন ভেজিটেরিয়ান সোসাইটির উদ্যোগে এ দিবসটির সুচনা শুরু হয়। বাংলাদেশে এ দিবসটি তেমন গুরুত্ব দিয়ে পালন করা না হলেও দিন দিন দেশে নিরামিষভোজীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ন্যায় আজ বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব নিরামিষ দিবস। বিশ্বে নিরামিষভোজীর সংখ্যা প্রতি ১০ জনে ১ জন।


নিরামিষজাতীয় খাবার বেশ সহজপাচ্য। এসব খাবার রান্না করা সহজ, সাশ্রয়ীও বটে। এ কারণেই নিরামিষ আহার শুধু সুস্থ জীবনযাপনের ক্ষেত্রেই নয়, বরং পরিবেশের দিক থেকেও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।


যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ফলমূল ও শাকসবজি গ্রহণ করেন, তাদের ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের তুলনায় কম। নিরামিষ খাবার মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বাড়ায় এবং স্বাস্থ্যগত উন্নতিতেও ভূমিকা রাখে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার ৯৬ হাজার মানুষের ওপর চালানো এক জরিপে দেখা গেছে নিরামিষভোজী পুরুষের গড় আয়ু ৮৩ দশমিক ৩ বছর এবং নারীদের ৮৫ দশমিক ৭ বছর, যা আমিষভোজীদের তুলনায় অন্তত পাঁচ বছর বেশি। এ গবেষণাটি জেএএমএ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।


সংশ্লিষ্টরা জানান, উত্তর আমেরিকার নিরামিষভোজী সংগঠন ভেজিটেরিয়ান সোসাইটির উদ্যোগে মানুষকে শাক-সবজি তথা নিরামিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণে উৎসাহিত করতে ১৯৭৭ সালের ১ অক্টোবর থেকে দিবসটি পালন করে আসছে। নিরামিষভোজীরা মূলত স্বাস্থ্যগত কারণেই এ খাবার গ্রহণ করে থাকেন। তবে অনেক সময় তারা দুধও খেয়ে থাকেন। এজন্য তাদের বলা হয় স্বাস্থ্যসম্মত ডায়েট চার্টের অনুসারী।


পুষ্টিবিদরা জানান, মাংস হজম প্রক্রিয়ায় ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু সবজি মাত্র দুই ঘণ্টায় হজম হয়। হজম প্রক্রিয়া সহজ হওয়ার কারণে সবজি থেকে উৎপন্ন শক্তি অপচয় না হয়ে শরীরের কাজে লাগে।


নিরামিষ জাতীয় খাবার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী। নিরামিষজাতীয় খাবার একধরনের সুষম খাদ্য। এর মধ্যে থাকে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ তন্তু, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, সম্পৃক্ত স্নেহ পদার্থ ও প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ রাসায়নিক পদার্থ।


বাংলাদেশ ব্রেস্ট ফিডিং ফাউন্ডেশনের (বিবিএফ) চেয়ারপারসন ও পুষ্টিবিদ ড. এস কে রায় বলেন, মাংস হজম প্রক্রিয়ায় ৭২ ঘণ্টা সময় লাগে। কিন্তু সবজি মাত্র দুই ঘণ্টায় হজম হয়। হজম প্রক্রিয়া সহজ হওয়ার কারণে সবজি থেকে উৎপন্ন শক্তি অপচয় না হয়ে শরীরের কাজে লাগে।


পুষ্টিবিদরা জানান, নিরামিষ জাতীয় খাবার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। নিরামিষভোজীরা আমিষভোজীদের চেয়ে দীর্ঘায়ু হন। তাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, উচ্চ রক্তচাপ, স্থুলতাজনিত শারীরিক সমস্যা কম হয়। এ খাবারে প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ তন্তু, ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ফলিক অ্যাসিড, ম্যাগনেশিয়াম, সম্পৃক্ত স্নেহ পদার্থ ও প্রচুর পরিমাণে উদ্ভিজ্জ রাসায়নিক পদার্থ। নিরামিষভোজীদের উচ্চ কোলেস্টেরলজনিত বা নিম্ন রক্তচাপজনিত রোগ সাধারণত দেখা যায় না। তাদের হৃদরোগের আশঙ্কাও কম থাকে। খাদ্যতালিকায় বেশি ফল বা সবুজ শাকসবজি রাখলে শরীরে কম রাসায়নিক ও বিষাক্ত পদার্থের প্রভাব তৈরি হবে। এটিই বহুদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে।


উদ্ভিজ্জ ফ্যাটে কোন রকম কোলেস্টেরল থাকে না। যদিও কোলেস্টেরল মানুষের কোষের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজনীয় তবু শুধু নিরামিষ খাবারের ওপর বেঁচে থাকলে শরীরের বিশেষ কোনো ক্ষতি হয় না। শরীর সবুজ শাকসবজি প্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল জোগাড় করে নেয়। সুষম নিরামিষ খাদ্য মানুষের শরীরে পুষ্টি জোগায়, রক্তে শর্করা ও ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণও স্বাভাবিক রাখে। সতেজ ও স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য সঠিক ভিটামিন ও খনিজসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা উচিত।


সতেজ সবজি গ্রহণে শরীর ও মনে অনেক বেশি সতেজতা বজায় থাকে। নিরামিষভোজী মানুষের ক্ষেত্রে রেস্টিং মেটাবলিজম রেট অনেক বেশি। নিরামিষ শুধু সহজপাচ্যই নয়, এটি শারীরিক ফ্যাট বিপাকেও যথেষ্ট সহায়তা করে। নিরামিষ খাবারের রয়েছে অনেক উপকার। তাজা ফলমূল ও সবজি রাখতে হবে প্রতিদিনের খাবারে।


আমিষ খাদ্যে পশুর মাংস খাওয়া হয়, অন্যদিকে নিরামিষ খাদ্যে সবুজ শাকসবজি, ডাল, শস্য, শুকনো ফল এবং তাজা ফলমূল থাকে। আপনিও জেনে নিন এই খাবারের উপকারিতা।


ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে: নিরামিষ খাবারে সাধারণত ক্যালোরি কম থাকে তবে প্রচুর ফাইবার থাকে। এই কারণে, আমিষ খাবারের তুলনায় নিরামিষ খাবারের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। বেশি পরিমাণে ফাইবার থাকায় পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে এবং বারবার ক্ষুধা লাগে না। ফলে খাবার খাওয়ার প্রবণতাও কমে। তাতে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।


হজম ভালো হয়: ফল, শাকসবজি, ডাল এবং গোটা শস্য সমন্বিত একটি নিরামিষ খাদ্য শরীরকে ভালো পরিমাণে ফাইবার সরবরাহ করে। এর ফলে হজমশক্তি ভালো থাকে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হয় না। আমিষ খাবার হজম করা তুলনায় অনেক ঝামেলার। এতে পেটের উপরেও চাপ পড়ে। তাতে ক্লান্তিও বেশি হয়। কারণ শরীরের সমস্ত এনার্জি খাবার হজম করার কাজে ব্যয় হয়।


সংক্রমণের ঝুঁকি কম: আমিষ খাবারে এমন অনেক বস্তু থাকে থাকে যা শরীরে ব্যাকটিরিয়া প্রবেশের আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। এই সব ব্যাকটিরিয়া শরীরের জন্য মোটেই উপকারী নয়। উল্টো দিকে নিরামিষ খাবারে ব্যাকটিরিয়ার ঝুঁকি কম থাকে। যাই হোক, এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি ভালোভাবে সবজি ধুয়ে খাবেন যাতে ন্যূনতম টক্সিন শরীরে প্রবেশ করে। তাহলেই সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক খানি কমে যেতে পারে।


রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ: নিরামিষ খাবার বা উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্যে পাওয়া পুষ্টি এবং খনিজগুলি ডায়াবিটিস থেকে মুক্তি দিতে পারে। এতে ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং গ্লুকোজের মাত্রাও স্বাভাবিক থাকে। তাই এই ধরনের খাবার খাওয়া ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যকর।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com