ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পেল শান্তিনিকেতন
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২১:১৬
ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি পেল শান্তিনিকেতন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা-ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তালিকায় স্থান পেলো বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতন।


১৭ সেপ্টেম্বর, রবিবার সরকারিভাবে ইউনেস্কোর পক্ষ থেকে এ ঘোষণা করা হয়েছে।


ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, শান্তিনিকেতন যে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যশালী স্থানের তালিকায় স্থান পেতে চলেছে, সেই ইঙ্গিত আগেই মিলেছিলো।


এ বিষয়ে মাইক্রো ব্লগিং সাইট টুইটারে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল বলেছে, বাংলার জন্য গর্বিত মুহূর্ত। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি শান্তিনিকেতন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় স্থান পেয়েছে। সংস্কৃতি এবং মেধায় নোবেলজয়ীর যে অবদান রয়েছে, তাকেই স্বীকৃতি দেওয়া হল। চলুন, আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এই সম্পদকে রক্ষণাবেক্ষণ করি।


ইউনেস্কোর হেরিটেজের তালিকায় যে নাম উঠতে পারে শান্তিনিকেতনের, তা চলতি বছর রবীন্দ্রজয়ন্তীর পরের দিনই ইঙ্গিত দিয়েছিল ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার।


কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি এক্সে লিখেছিলেন, গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে সারা দেশের জন্য সুখবর। শান্তিনিকেতনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় রাখার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।


এই প্রস্তাব দিয়েছিল ইউনেস্কোর উপদেষ্টা সংগঠন ইকোমস। রেড্ডি এও জানিয়েছিলেন, বিশ্বভারতী আনুষ্ঠানিক ভাবে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় ঠাঁই পেল কি না, তা সেপ্টেম্বর মাসে সৌদি আরবের রিয়াদে একটি সভায় আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হবে।


হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, শান্তিনিকেতনকে বিশ্ব ঐতিহ্যশালী স্থানের তালিকায় নিয়ে আসতে ২০১০ সালে উদ্যোগী হয়েছিলেন তৎকালীন কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি সচিব জহর সরকার এবং পুরাতত্ত্ব বিভাগের তৎকালীন ডিরেক্টর গৌতম সেনগুপ্ত। তবে সেইসময় স্বীকৃতি মেলেনি। ১৮৬৩ সালে আশ্রম হিসেবে যাত্রা শুরু করে শান্তিনিকেতন । রায়পুরের জমিদার ভুবনমোহন সিনহার কাছ থেকে বিশ বিঘা জমি কিনে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এটি প্রতিষ্ঠা করেন।


পশ্চিমবাংলার বীরভূম জেলার বোলপুরের কাছে এই আশ্রম অবস্থিত। ১৮৮৮ সালে দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট- একটি অতিথিভবন, প্রার্থনা কক্ষ এবং ধর্মীয় সাহিত্যের জন্য নিবেদিত গ্রন্থাগারের সংস্থান করেছিলেন।


১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতন আশ্রমে শিশুদের জন্য একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন এবং ১৯২১ সালে বিশ্বভারতীর পথ চলা শুরু। ১৯৫১ সালে এই প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি পায়। তবে গত কয়েক মাসে এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে।


আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী শুরু হওয়ার আগেই ১৯১৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ছেলে রথীন্দ্রনাথকে লিখেছিলেন, পৃথিবীর সঙ্গে ভারতকে সংযুক্ত করার সূত্র হিসেবে শান্তিনিকেতন স্কুলকে গড়ে তুলতে হবে। সেখানে আমাদের পৃথিবীর সকল মানুষের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মানবতাবাদী গবেষণার জন্য একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে ... আমার শেষ কয়েক বছরের কাজ হবে জাতীয় অন্ধ স্বদেশপ্রেমের কুন্ডলী থেকে বিশ্বকে মুক্ত করা।


১৯১৯ সালে রবীন্দ্রনাথ তার বিশ্বভারতী-পরিকল্পনার তত্ত্ব সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেন এবং যেখানে বিশ্ব একটি নীড়ে পরিণত হবে’-কে এর মূলমন্ত্ররূপে গ্রহণ করেন। ১৯২১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠা হয়। রবীন্দ্রনাথ আমৃত্যু ছিলেন এর আচার্য।


বিশ্বভারতীর বিভিন্ন অঙ্গ হচ্ছে পাঠভবন (বিদ্যালয়), শিক্ষাভবন (মহাবিদ্যালয়), বিদ্যাভবন (স্নাতকোত্তর ও গবেষণা), কলাভবন (চারুকলা), সঙ্গীতভবন (সঙ্গীত), পল্লী সংগঠন (গ্রামীণ সংগঠন), গ্রন্থন (প্রকাশনা)।


১৯৩৭ সালে অধ্যাপক তান ইয়ুন-সানের সহযোগিতায় চীনাভবন (চীন-ভারত পাঠ) সংযোজিত হয়েছিলো। হিন্দিভবন ও রবীন্দ্রভবন যোগ করা হয়েছিল যথাক্রমে ১৯৩৯ এবং ১৯৪২ সালে। রবীন্দ্রভবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পাণ্ডুলিপি, চিত্রকর্ম, চিঠিপত্র ও বই রক্ষিত আছে।


এর আগে এই রাজ্যের দার্জিলিংয়ের টয়ট্রেন এবং সুন্দরবন ইউনেস্কোর এই হেরিটেজ তালিকায় উঠে এসেছে। তবে সুন্দরবনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এবং টয়ট্রেনের সঙ্গে নীলগিরি পাহাড় ও শিমলার রেলগাড়িও গৌরবের শরিক। আবহমান সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসাবে দুর্গাপূজাকেও স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেস্কো। এবার শান্তিনিকেতন। ইউনেস্কোর হেরিটেজ তালিকায় জায়গা করে নিল।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com