কথায় বলে ক্ষুধার রাজ্যে সবকিছুই যেনো গদ্যময়। ক্ষুধার জন্য মানুষ সব কিছুই করে। যেমনটি করছেন একটি এলাকার মানুষ। ক্ষুধার জ্বালা মিটাতে তারা খাচ্ছেন 'মাটির বিস্কুট'!
ছোটবেলায় বহু খাবার নষ্ট করেছেন অথচ গুরুজনের ধিক্কার জুটেনি এমন মানুষের সংখ্যা খুব কমই বলতে হবে। তবে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের তো এমন কথা শুনতে হয়েছে যে, 'পাচ্ছিস যখন খেয়ে নে, অনেকেই তো পায় না।
আপনি কী সেই হিসাব জানেন? পৃথিবীর কতো মানুষ না খেয়ে রয়েছে! আমরা অনেক সময় অনেক কথা বলার জন্য বলি। কিন্তু গুরুজনদের এই কথা নিখাদ সত্য। প্রমাণ দেওয়া যাবে মধ্য আমেরিকার দেশ হাইতি'র দিকে তাকালে। সেখানে খাবার জুটে না, তাই সেখানকার উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ মাটির তৈরি বিস্কুট খেয়ে ক্ষুধা মেটাতে বাধ্য হয়।
বিশ্বের অন্যতম গরিব দেশ হিসাবে গণ্য করা হয় হাইতিকে। ক্যারিবিয়ান সাগরের বুকে এই দ্বীপরাষ্ট্রের আয়তন মাত্র ২৭,৭৫০ বর্গ কিমি। মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ২০ লক্ষের কাছাকাছি। ছোট এই দেশটির বাসিন্দাদের অনেকে এতটাই গরিব যে, অনেক সময় কাদা দিয়ে তৈরি রুটি খেয়েও দিন গুজরান করতে হয় তাদের।
হাইতির অন্যতম গরিব এলাকা শার্লিন ডুমাস। এই বস্তি এলাকার মানুষ দুপুরের খাবার হিসাবে সাধারণত বিশেষ কাদার রুটি খান।
মূল্যবৃদ্ধির কারণে হাইতির অনেক মানুষের এক বেলার খাবার জোটানোরও ক্ষমতা নেই। পেট ভরানোর তাগিদে কাদার তৈরি রুটিকেই তাই অবলম্বন করে নিয়েছেন তারা।
কৃষি, পরিবহণ এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির কারণে ধান, গম, ভুট্টার মতো খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে অনেকটাই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়লেও, ক্যারিবিয়ান সাগরে শুধুমাত্র আমদানির উপর নির্ভর করে থাকা দেশগুলিতে এর প্রভাব অনেক বেশি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ক্যারিবিয়ান সাগরের দ্বীপরাষ্ট্রগুলিতে গত দুই দশকে খাবারের দাম প্রায় ৪০ শতাংশ বেড়েছে। ২০০৭ সালে হওয়া ঘূর্ণিঝড় এবং ২০১০ সালে হওয়া ভূমিকম্পের কারণে জাতিসংঘ হাইতিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। সেই পরিস্থিতি থেকে এখনও ঠিকভাবে বেরিয়ে আসতে পারেনি দেশটি।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি যে- কাদার রুটি তৈরি করতে যে মাটি লাগে, তা নিয়েও রীতিমতো ব্যবসা ফেঁদে বসেছেন হাইতির এক দল মানুষ।
হাইতিতে যে কাদা দিয়ে রুটি তৈরি হয়, তা নিয়ে আসা হয় হিনচে শহর থেকে। বিক্রি হয় ‘লা স্যালাইন’ বাজারে। বাজারের শাকসব্জি এবং মাংসের পাশাপাশি বিক্রি হয় এই মাটিও।
কাদার রুটিতে পুষ্টিগুণ রয়েছে বলে দাবি করেন হাইতির বাসিন্দারা। স্থানীয়দের বিশ্বাস, কাদার রুটি অন্তঃসত্ত্বা মহিলা এবং শিশুদের শরীরে অ্যান্টাসিড এবং ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূর্ণ করে।
যদিও চিকিৎসকদের মতে, হাইতিবাসীদের এই ধারণা ভুল। কাদার রুটি খেলে উপকারের থেকে অপকার বেশি।
বিবার্তা/এমজে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]