কথা না শোনায় কসোভোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
প্রকাশ : ৩১ মে ২০২৩, ০৯:৩২
কথা না শোনায় কসোভোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ কসোভোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে চলমান অস্থিরতা ও সহিংসতা কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের কথা না শোনায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।


মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠ সার্ব উত্তরাঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি এড়াতে যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শ উপেক্ষা করেছিল কসোভো। বুধবার (৩১ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কসোভের উত্তরাঞ্চলে জাতিগত সার্বিয়ানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সেখানে উত্তেজনা-অস্থিরতা এড়াতে দেওয়া মার্কিন পরামর্শ না শোনায় কসোভোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। একইসঙ্গে উত্তর কসোভোতে জাতিগত আলবেনিয়ান মেয়রদের ‘জোর করে’ ক্ষমতায় বসানোর সিদ্ধান্তের সমালোচনাও করেছে দেশটি।


বিবিসি বলছে, ইউরোপে আমেরিকার নেতৃত্বে চলমান সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণ করা থেকে কসোভোকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এর আগে সোমবার উত্তর কসোভোর জেভেকানে সার্ব বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ন্যাটো সেনাদের সংঘর্ষ হয়।


সার্ব জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় জাতিগত আলবেনিয়ান মেয়রকে দায়িত্বে বসানোকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অস্থিরতার মধ্যে বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল। একপর্যায়ে সংঘর্ষে জেভেকানে সংঘর্ষে ৩০ জন ন্যাটো শান্তিরক্ষী এবং ৫২ জন বিক্ষোভকারী আহত হয়। অবশ্য পরে কসোভোতে অতিরিক্ত আরও ৭০০ সৈন্য মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছে ন্যাটো।


সংবাদমাধ্যম বলছে, সার্ব অধ্যুষিত অঞ্চলে আলবেনিয়ান গোষ্ঠীর মেয়র নির্বাচিত হওয়ায় সংঘর্ষ শুরু হয়। রাস্তায় নেমে সার্বরা বিক্ষোভ শুরু করলে তা মোকাবিলা করতে সোমবার পথে নামে ন্যাটোর শান্তি বাহিনী বা কেফোর। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে তারা কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। পাল্টা হামলা করেন সার্ব বিক্ষোভকারীরাও। আর এতেই বেশ কিছু ন্যাটো অফিসার আহত হন।


মূলত গত এপ্রিলে এই সংকট শুরু হয়। সেসময় সার্বরা মেয়র নির্বাচন বয়কট করেছিল। তা সত্ত্বেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সার্ব অধ্যুষিত অঞ্চলেও আলবেনিয়ান প্রার্থীরা মেয়র নির্বাচিত হয়। অবশ্য সার্বিয়ানরা নির্বাচন বয়কট করায় সেসময় সবমিলিয়ে মাত্র ৪ শতাংশ ভোট পড়েছিল।


উত্তরাঞ্চলে যেসব সার্বিয়ান বাস করেন সেখানে গত ২৫ মে তিনজন মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফলে যেসব মেয়র দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তাদের বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেন তারা। এরই প্রতিবাদে রাস্তায় নামেন সার্বরা। এমনকি সরকারি ভবনে ঢুকে পড়ার চেষ্টাও করেন তারা।


কেফোর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, একাধিক দেশ থেকে আসা তাদের ফোর্সের অন্তত ২৫ জন কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। তাদের চিকিৎসা চলছে। ইতালি এবং হাঙ্গেরির সেনাদের বেছে বেছে আক্রমণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।


অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়নও উত্তর কসোভোর পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার জন্য কসোভান কর্তৃপক্ষকে অভিযুক্ত করেছে এবং সেখানে জাতিগত উত্তেজনা ছড়িয়ে দিতে পারে এমন যেকোনও পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছে।


বিবিসি বলছে, সার্বিয়ান এবং প্রধানত আলবেনিয়ান বাসিন্দাদের মধ্যে বছরের পর বছর ধরে টানাপোড়েনের সম্পর্কের পর ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সার্বিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে কসোভো। এরপর যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রধান দেশগুলোর কাছ থেকে স্বীকৃতি পেয়েছে তারা।


কিন্তু শক্তিশালী মিত্র রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট সার্বিয়া কসোভোকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেছে বরাবরই। একইসঙ্গে কসোভোর উত্তর দিকে বসবাস করা জাতিগত সার্বিয়ানরা কসোভোর কেন্দ্রীয় সরকারের আইনসহ কোনও কিছু মানতে চান না।


যদিও জাতিগত আলবেনিয়ানরা কসোভোর মোট জনসংখ্যার ৯০ শতাংশেরও বেশি। এরপরও সার্বরা উত্তরাঞ্চলের জনসংখ্যার মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী হিসেবে রয়ে গেছে।


কসোভোর রাজধানী প্রিস্টিনায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেফ্রি হোভেনিয়ার বলেছেন, সার্ব সংখ্যাগরিষ্ঠ চারটি পৌরসভায় জোরপূর্বক জাতিগত-আলবেনিয়ান মেয়র বসানোর সিদ্ধান্তের ‘পরিণাম কী হতে পারে তা আগে থেকেই বুঝেছিল’ যুক্তরাষ্ট্র।


কসোভোর শক্তিশালী মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা প্রধানমন্ত্রী আলবিন কুর্তিকে তার পদক্ষেপ পরিবর্তন করার জন্য ‘দৃঢ়ভাবে পরামর্শ’ দিয়েছে। কিন্তু যুত্তরাষ্ট্রের সেসব পরামর্শ উপেক্ষা করা হয়েছে।


ফলস্বরূপ মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর ‘ডিফেন্ডার ইউরোপ ২৩’ মহড়ায় কসোভোর অংশগ্রহণ বাতিল করা হয়েছে।


মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেফ্রি হোভেনিয়ার বলেছেন, কসোভোর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বিবেচনা করছে এবং বর্তমানে কসোভোকে ব্যাপক আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাইয়ে দিতে বা ইইউ এবং ন্যাটোর সদস্য করার প্রচেষ্টায় সহায়তা করার ‘কোনও উৎসাহ নেই’ ওয়াশিংটনের।


অবশ্য সার্বিয়া এবং কসোভোর নেতারা সহিংসতার জন্য একে অপরকে অভিযুক্ত করেছেন। সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট আলেকসান্ডার ভুসিক বলেছেন, কসোভোর প্রধানমন্ত্রী আলবিন কুর্তি এই বিশৃঙ্খলার জন্য একাই দায়ী।


অন্যদিকে কুর্তি দাবি করেছেন, জেভেকানের বিক্ষোভকারীরা সার্বির রাজধানী বেলগ্রেডের নির্দেশে একগুচ্ছ চরমপন্থি হিসেবে কাজ করছে।


তবে ন্যাটো জোটের প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, সহিংসতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। তিনি কসোভোতে ন্যাটোর শান্তিরক্ষা বাহিনীকে উল্লেখ করে ‘কেফোর সৈন্যদের বিরুদ্ধে বিনা প্ররোচনায় হামলার’ তীব্র নিন্দা করেছেন।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com