অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার জেরে মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইরানের মুদ্রা রিয়ালের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। ফলে এক মার্কিন ডলারের বিপরীতে দেশটিতে মিলছে ৫ লাখেরও বেশি রিয়াল। যা ইরানি এই মুদ্রার ইতিহাসে সর্বনিম্ন পতন।
অন্যদিকে তেহরানের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা অবসানের কোনও সম্ভাবনা নেই। গতকাল এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বনবাস্ট ডট কমের তথ্য অনুযায়ী- সোমবার প্রতি মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইরানি রিয়াল ৫ লাখ ১ হাজার ৩০০-তে পৌঁছে নতুন সর্বনিম্ন রেকর্ডে নেমে গেছে। ওয়েবসাইটটি ইরানি এক্সচেঞ্জ থেকে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।
রয়টার্স বলছে, ইরানের এখন মূল্যস্ফীতির হার প্রায় ৫০ শতাংশ। ব্যাপক এই মূল্যস্ফীতির সম্মুখীন হওয়া ইরানিরা এখন তাদের সঞ্চয়ের জন্য নিরাপদ আশ্রয় খুঁজছে। এতে করে তারা মার্কিন ডলারসহ অন্যান্য শক্তিশালী মুদ্রা বা সোনা কিনছে। এর ফলে ইরানি রিয়ালের আরও দরপতন হতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল করেন। এরপর বিশ্ববাজারে ইরানের তেল রপ্তানি এবং বৈদেশিক মুদ্রায় দেশটির প্রবেশগম্যতা অনেকটাই সীমিত হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে পশ্চিম এশিয়ার এই দেশটির অর্থনীতি।
এছাড়া গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিনিময়ে তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি রোধে ইরান এবং বিশ্বশক্তির মধ্যকার পরমাণু আলোচনা স্থবির হয়ে আছে; যা ইরানের ভবিষ্যতের জন্য অর্থনৈতিক প্রত্যাশার আরও অবনতি ঘটিয়েছে। বনবাস্ট ডট কমের মতে, গত ছয় মাসে ইরানের মুদ্রার মূল্য প্রায় ৬০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
এদিকে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ সহজ করতে এবং দাপ্তরিক লেনদেনের পরিমাণ বাড়াতে তারা নতুন একটি ফরেইন এক্সচেঞ্জ কেন্দ্র খুলছে।
এর আগে গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে মার্কিন ডলারের বিপরীতে রিয়ালের দ্রুত অবমূল্যায়নের পর ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সেই সময়কার গভর্নর আলী সালেহাবাদিকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। এরপরও গত জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে ইরানের খোলা বাজারে প্রথমবারের মতো ৪ লাখ ৫০ হাজার রিয়ালের মাইলফলক অতিক্রম করে মার্কিন ডলার।
সংবাদমাধ্যম বলছে, গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর হিজাব পরাকে কেন্দ্র করে ইরানে পুলিশের হেফাজতে ২২ বছর বয়সী কুর্দি তরুণী মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর দেশটিতে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ইরানি রিয়ালের বেশ বড় দরপতন হয়েছে।
এর পাশাপাশি ইরানের বিরুদ্ধে বিদ্যমান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাকে রিয়ালের রেকর্ড দরপতনের অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে দেশটির বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি তেহরানের বিরুদ্ধে ইইউয়ের নানা বিধিনিষেধকে রিয়ালের দরপতনের অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিবার্তা/এমএ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]