পাকিস্তানে মসজিদে আত্মঘাতী হামলা: নিহত বেড়ে ৫৯, আহত ১৫৭
প্রকাশ : ৩১ জানুয়ারি ২০২৩, ০২:৩৯
পাকিস্তানে মসজিদে আত্মঘাতী হামলা: নিহত বেড়ে ৫৯, আহত ১৫৭
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পাকিস্তানের পেশোয়ারে পুলিশ লাইনস এলাকার একটি মসজিদে আত্মঘাতী বোমা হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৯ জনে। এ ঘটনায় আরও ১৫৭ জন আহত হয়েছেন।


গতকাল সোমবার জোহরের নামাজের সময় এ বিস্ফোরণ ঘটান একজন আত্মঘাতী হামলাকারী। তখন মসজিদে নামাজ আদায় করছিলেন কয়েক শ মুসল্লি।


পেশোয়ার শহরের পুলিশ লাইনস এলাকায় মসজিদটির অবস্থান। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই পুলিশের সদস্য। হামলার সময় মসজিদটি মুসল্লিতে পূর্ণ ছিল। বিস্ফোরণে মসজিদ ভবনের একাংশ ধসে পড়েছে। অনেকের মৃত্যু হয় ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে। হাসপাতালে ভর্তি অনেকের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।


হতাহতের এই সংখ্যা নিশ্চিত করেছেন লেডি রিডিং হাসপাতালের (এলআরএইচ) মুখপাত্র মোহাম্মদ আসিম।


স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৪০ মিনিটের দিকে এ হামলা হয়। মসজিদে বিস্ফোরণের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সেনাবাহিনী, জরুরি সেবা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বোমা নিষ্ক্রিয়কারী দলের সদস্যরা। এ সময় ঘটনাস্থলে নিহত ও আহত ব্যক্তিদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিতে দেখা যায়।


হামলার সময় মসজিদে ছিলেন শহীদ আলী (৪৭)। ইমাম নামাজ শুরু করার কয়েক সেকেন্ড পরই বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানান এই পুলিশ সদস্য। তিনি বলেন, ‘নামাজ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ হয়। বিকট শব্দের সঙ্গে কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় চারপাশ। এটা দেখে আমি দৌড়াতে শুরু করি। এ সময় মানুষ চিৎকার ও ছোটাছুটি শুরু করেন। সাহায্য চেয়ে অসংখ্য মানুষের সেই চিৎকার এখনো আমার কানে বাজছে।’


পেশোয়ারের কমিশনার রিয়াজ মেহসুদ বলেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু লোক চাপা পড়ায় মসজিদের ভেতরে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। শহরের বিভিন্ন হাসপাতালে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে এবং আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।


এ হামলার দায় স্বীকার করেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তান (টিটিপি)।


পেশোয়ার ক্যাপিটাল সিটি পুলিশ অফিসার (সিসিপিও) মুহম্মদ ইজাজ খান সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণের পর মসজিদের ছাদ ধসে পড়ে। অনেক জওয়ান এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে এবং উদ্ধারকারীরা তাদের বের করার চেষ্টা করছে।


তিনি বলেন, মসজিদের মূল হলটির ধারণক্ষমতা ২৫০ থেকে ৩০০ জন ছিল, যা ধসে পড়েছে। তবে ভবনটির বাকি অংশ এখনও অক্ষত রয়েছে।


সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিসিপিও বলেন, ঘটনাস্থলে এক ধরনের বিস্ফোরকের ঘ্রাণ পাওয়া গেছে। তবে হামলায় কী ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে এখনই বলা যাচ্ছে না।


মুহম্মদ ইজাজ খান বলেন, বিস্ফোরণের সময় ওই এলাকায় ৩০০ থেকে ৪০০ পুলিশ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এটি স্পষ্ট যে, নিরাপত্তাজনিত ত্রুটি ছিল।


মৃতদেহ ও আহতদের উদ্ধার করে এলআরএইচে স্থানান্তর করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নামাজ শুরুর কিছুক্ষণ পর এক ব্যক্তি তাঁর শরীরে বেঁধে রাখা বোমার বিস্ফোরণ ঘটান। তবে হামলায় কারা জড়িত, তা জানা যায়নি। এদিকে পাকিস্তানের গোয়েন্দারা বলছে, হামলাকারী আফগানিস্তানের নাগরিক। তিনি অন্য দেশে ছিলেন। হামলার জন্য প্রশিক্ষণ দিতে দেশে ফিরেছিলেন।


এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ। এটিকে সন্ত্রাসী হামলা আখ্যা দিয়ে এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘পাকিস্তানকে রক্ষা করার দায়িত্ব যারা পালন করছে, তাদের ওপর হামলা চালিয়ে আতঙ্ক তৈরি করতে চাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। যারা এ ঘটনার পেছনে রয়েছে, ইসলামের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে পুরো জাতি এখন ঐক্যবদ্ধ। যারা পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়ছে তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হবে।’


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com