দরকার নেই। তবু ভারতের পার্লামেন্টের ক্যান্টিনে ভর্তুকিতে বিক্রি হয় খাবার। অথচ পার্লামেন্টের চৌহদ্দি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে অনাহারে মারা যায় তিন শিশুকন্যা! শুধু দিল্লি নয়, সাম্প্রতিক সময়ে অনাহারে মৃত্যু ঘটেছে ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগঢ় ও মধ্যপ্রদেশেও।
উন্নয়নের নামে ঢাকঢোল পেটানো হচ্ছে প্রচুর। কিন্তু যাবতীয় চাকচিক্যের আড়ালে ভারতের আসল ছবিটি একেবারেই অন্য কথা বলছে। ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গ্লোবাল হাঙ্গার ইন্ডেক্স তথা বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতের অর্ধেকের বেশি শিশু অপুষ্টির শিকার। প্রতি রাতে তারা আধপেটা খেয়ে বা খালি পেটে শুতে যাচ্ছে।
এই রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে চীন ২৯ নম্বরে আর ভারত ১০০-য়। ভারতের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ (৮৮) ও মিয়ানমার (৭৭)। দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক আর্থিক নিষেধাজ্ঞার জালে আটক থাকা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়া এগিয়ে ভারতের চেয়ে। প্রতিবেশীদের মধ্যে ভারতের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে পাকিস্তান (১০৬)।
গত ১৮ বছরে ভারতে অনাহার কমেছে ১৮ শতাংশ হারে। এই সময়ে গোটা বিশ্বে ক্ষুধার্তের সংখ্যা কমেছে ২৭ শতাংশ হারে। অপুষ্টি, বয়সের সাথে বৃদ্ধির মতো বিষয় নিয়ে সমীক্ষায় স্পষ্ট, ভারতে ৫ বছরের নীচে প্রতি পাঁচটি শিশুর মধ্যে একটির উচ্চতা বয়সের তুলনায় কম। প্রতি তিনজনে একজন বয়সের তুলনায় খর্বকায়।
জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষাও বলছে, দেশে পাঁচ বছরের নীচে থাকা প্রায় ৫৮ শতাংশ, অর্থাৎ প্রায় সাড়ে সাত কোটি শিশু রক্তাল্পতায় ভোগে। বয়সের তুলনায় ওজন কম সাড়ে চার কোটি শিশুর। যার মূল কারণ অপুষ্টি। হিমোগ্লোবিনের অভাবে এই শিশুরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে সহজে, রোগের শিকার হয়। অপুষ্টির কারণে এদের মস্তিষ্কেরও পূর্ণ বিকাশ ঘটে না।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাব্লিউএইচও) মতে, অসচ্ছল আর্থ-সামাজিক কারণ এর জন্য দায়ী। বিশ্ব ব্যাঙ্কের ২০১৬ সালের তথ্য অনুযায়ী ভারতের ২৭ কোটি মানুষ এখনো দারিদ্রসীমার নীচে বাস করে। পরিবারের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ওই শিশুরা এক দিকে যেমন পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বড় হওয়ায় প্রায়ই এরা রোগের শিকার হয়।
কিন্তু ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের হিসেব, ভারতে যেখানে প্রতি বছর ২২.৫-২৩ কোটি টন খাদ্যশস্যের প্রয়োজন হয়, সেখানে ২০১৬-১৭ সালে দেশে উৎপাদিত খাদ্যশস্যের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৭.৩ কোটি টন। অর্থাৎ উৎপাদন হচ্ছে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের মতে, সামাজিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট নজর না দেওয়াই এ দেশের পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ।
কংগ্রেস জোট জামানায় খাদ্যমন্ত্রী শরদ পাওয়ার পার্লামেন্টে জানিয়েছিলেন, মজুত খাদ্যশস্যের প্রায় ৪০ শতাংশই পচে নষ্ট হয়। এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জামানায়, দিল্লিতে তিনটি শিশুর পেটে এক কণা খাবারও পাওয়া যায় না ময়নাতদন্তে! সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]