শিরোনাম
ভারতের প্রতিটি কম্পিউটারে নজরদারি চালাবে গোয়েন্দারা
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০১৮, ১০:৪৩
ভারতের প্রতিটি কম্পিউটারে নজরদারি চালাবে গোয়েন্দারা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতের প্রতিটি কম্পিউটারে নজরদারি চালাতে পারবে দেশটির ১০ গোয়েন্দা ও তদন্ত এজেন্সি। ভারত সরকার বৃহস্পতিবার এ সম্পর্কিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।


গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, কোনো কম্পিউটারে সংরক্ষিত বা কম্পিউটার থেকে আদান প্রদান করা যে কোনো তথ্যের ওপরে নজর রাখতে পারবে ওই ১০টি এজেন্সি।


নির্দেশিকা অনুযায়ী, যে কোনো কম্পিউটারের মালিক বা সার্ভিস প্রোভাইডার তদন্তকারী সংস্থাকে তথ্য দিতে বাধ্য। তদন্তকারী সংস্থার সাথে কোনো ধরনের অসহযোগিত করলে যে কোনো ব্যক্তির জরিমানা বা ৭ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।


যে ১০ এজেন্সিকে এই ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে আরএ ডব্লিউ (র), ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো, সিবিআই, সন্ত্রাসদমন এজেন্সি এনআইএ, নার্কোটিকস কন্ট্রোল ব্যুরো, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ডিরেক্ট ট্যাক্সেস, রেভেনিউ ইন্টেলিজেন্স এবং জম্মু-কাশ্মীর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য ডিরেক্টরেট অফ সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স।


কম্পিউটারে রাখা সব তথ্য, বা সেটি থেকে আদান-প্রদান করা তথ্যগুলোর ওপরে যেমন নজর রাখতে পারবে এই এজেন্সিগুরো, তেমনই ইন্টারসেপ্ট করা অর্থাৎ মাঝপথেই আটকানো এবং ডিক্রিপ্ট করা বা গোপন তথ্য উদ্ধার করারও ক্ষমতাও তাদের দেয়া হয়েছে।


বলা হচ্ছে, তথ্য প্রযুক্তি আইনের কয়েকটি ধারা অনুযায়ীই এজেন্সিগুলোকে ক্ষমতা দেয়া হল। তবে এই প্রজ্ঞাপন জারির পরেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে যে, তাহলে কি দেশের প্রতিটি কম্পিউটারের ওপরে সর্বক্ষণ নজর রাখতে চাইছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার?


কংগ্রেস, সিপিআইএম ও তৃণমূল কংগ্রেস মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের দিকে আঙ্গুল তুলে বলছে, এই নিয়ম জারি করে দেশের সব মানুষের ওপরই নজর রাখতে চাইছে সরকার।


বিরোধীরা বলছেন, ভোটের ঠিক আগে শোওয়ার ঘরেও আড়ি পাতা শুরু করল মোদি সরকার। যা হয়ে থাকে উত্তর কোরিয়ার মতো দেশে। যদিও পাল্টা যুক্তি দিয়ে কেন্দ্র জানিয়েছে, এই আইন নতুন নয়। কোন সংস্থা নজরদারি ও তদন্ত করতে পারবে, মোদি সরকার কেবল তা স্পষ্ট করে দিয়েছে মাত্র।


কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী টুইটারে মোদিকে আক্রমন করে লিখেছেন, ভারতকে পুলিশ নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রে পরিণত করতে চাইছেন মোদিজি। এক বিলিয়ন মানুষের দেশকে তিনি নিজের মনোভাব বুঝিয়ে দেবেন। প্রধানমন্ত্রী আসলে যে ভীত একনায়ক, তা দেশের মানুষের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল।


এদিকে রাহুলকে আক্রমণ শানিয়ে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ বলেছেন, মানুষকে ভয় দেখিয়ে জাতীয় সুরক্ষা নিয়ে ফের একবার রাজনীতি করছেন রাহুল।


নতুন করে কেন এই নিয়ম করতে হল সেটা খুব স্পষ্ট নয় বলছেন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাইবার ক্রাইম সংক্রান্ত স্পেশ্যাল পাবলিক প্রসেকিউটর বিভাস চ্যাটার্জি।


তিনি বলেন, যে আইন আমাদের রয়েছে, তাই দিয়ে নিয়মিতই তদন্তের প্রয়োজনে কম্পিউটারে রাখা তথ্য বা আদান প্রদান হওয়া তথ্য উদ্ধার করা হয়ে থাকে। সেগুলো আদালতে প্রমাণ হিসাবে পেশও করা হয়। তাহলে নতুন করে কেন এই নিয়ম করতে হল সেটা খুব স্পষ্ট নয়।


তবে তার বক্তব্য মূল যে তথ্য প্রযুক্তি আইন কার্যকর রয়েছে ২০০০ সাল থেকে, সেই আইনে যেসব বিধান রয়েছে ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যেসব বিধিনিষেধ রয়েছে এ ধরনের নজরদারির ওপরে, সেগুলো আইনত ভাঙ্গা যাবে না, যতই নতুন নিয়ম করা হোক না কেন।


ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নয় সদস্যের একটি বেঞ্চ ইতোমধ্যেই ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারকে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিয়েছে। কম্পিউটারের ওপরে নজরদারির এই নিয়ম কি ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকারকে খর্ব করতে পারে?


এ বিষয়ে বিভাস আরো বলেন, আইন অনুযায়ী নজরদারির যা ব্যবস্থা রয়েছে, তার বাইরে এজেন্সিগুলো যেতে পারবে না ঠিকই, কিন্তু যে ক্ষমতা তাদের দেয়া হল, তা যে অপব্যবহার করা হবে না, সেটা কি বলা যায়? ব্যক্তির গোপনীয়তার অধিকার খর্ব হওয়ার আশঙ্কা তাই থাকছেই।


এই নিয়মের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরাও।


সরকারের কয়েকটি সূত্র উদ্ধৃত করে এনডিটিভি বলছে, দেশের স্বার্থ সুরক্ষিত রাখতেই এই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। আগে শুধুমাত্র আদান প্রদান হওয়া তথ্যের ওপরেই নজর রাখা যেত, কিন্তু এখন এজেন্সিগুলো কম্পিউটারে তৈরি করা অথবা স্টোর করে রাখা তথ্যের দিকেও নজর দিতে পারবে, প্রয়োজনে কম্পিউটার বাজেয়াপ্ত করতে পারবে।


রাজ্যসভায় সম্মিলিত বিরোধী আক্রমণের মুখে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সাফাই, এটি কোনো নতুন সিদ্ধান্ত নয়। ২০০৯ সালে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের সিদ্ধান্ত এটি। কারা নজরদারি করবে, আমরা কেবল সেটি চিহ্নিত করে দিয়েছি।


মন্ত্রী মুখে ওই দাবি করলেও, সরকারি নির্দেশ কিন্তু তা বলছে না। ইউপিএ জমানায় কারো উপরে নজরদারি করার প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রসচিব বা নিদেনপক্ষে যুগ্ম সচিব বা আইজি পর্যায়ের অফিসারের অনুমতি লাগত। কিন্তু গত কালের জারি হওয়া বিজ্ঞপ্তিতে এ নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি।


বিরোধীদের বক্তব্য, এর সুযোগে সন্দেহ হলেই যে কোনো ব্যক্তির মোবাইল বা কম্পিউটারে নজরদারি করতে পারবে সরকার। কারো অনুমতির প্রয়োজন হবে না। সূত্র: বিবিসি, এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকা


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com