শিরোনাম
খুনই হয়েছে ওই ১১ জন, দাবি আত্মীয়দের
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০১৮, ১৩:৪৩
খুনই হয়েছে ওই ১১ জন, দাবি আত্মীয়দের
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতের দিল্লির বুরারিতে একই পরিবারের ১১ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনাকে পরিবারের স্বজনেরা হত্যা বলে মনে করছেন। এদিকে বুরারির ঘটনায় প্রাথমিক তদন্ত গুপ্ত সাধনার প্রভাবে আত্মহত্যার ইঙ্গিত দিলেও রহস্য উদ্‌ঘাটনে পুরোদমে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।


কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে জানেগড়ি বাবা নামে এক তান্ত্রিকের খোঁজে অভিযান শুরু করেছে দিল্লি পুলিশ। ভাটিয়া পরিবারের লোকেদের মোবাইলের কললিস্ট ঘেঁটে এই জানেগড়ি বাবার সন্ধান পেয়েছে দিল্লি পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চ।


বুরারির ভাটিয়া পরিবারের আত্মীয়েরা কেউই বিশ্বাস করতে রাজি নন, ওই পরিবারের আত্মীয়েরা কোনো তান্ত্রিকের খপ্পরে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন। সন্তনগরের বাড়ির গৃহকর্ত্রী নারায়ণী দেবীর তিন ছেলে, দুই মেয়ে। নারায়ণী দেবী, তার দুই ছেলে ভবনেশ, ললিত, মেয়ে প্রতিভাসহ পরিবারের ১১ জনের মৃতদেহ রবিবার সকালে উদ্ধার করা হয়েছে। ফলে ভাইবোনদের মধ্যে বেঁচে রয়েছেন একমাত্র ছোট বোন সুজাতা ও বড় ভাই দীনেশ।


বাড়ির সামনে রাস্তায় বসে সুজাতা বলেন, আমার মা, দুই ভাই, বোন, তাদের ছেলেমেয়েদের কেউ খুন করেছে। আর পুলিশ তন্ত্রমন্ত্রের গল্প বানাচ্ছে।


তার দাবি, বাড়িতে সাধারণ গৃহস্থ পরিবারের মতোই পুজো হতো। কিন্তু তার ভাইয়েরা কেউ তন্ত্রমন্ত্র বা গুপ্তসাধনায় জড়িত ছিলেন না। তা হলে তিনি তা টের পেতেন। একই মত সুজাতার দাদা, রাজস্থানের কোটার বাসিন্দা দীনেশেরও।


ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ১১টি লাশের মধ্যে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে ঝুলন্ত অবস্থাতেই। ওই সাতজনের শরীরের কোথাও কোনো ধস্তাধস্তির চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। যা থেকে অনুমান, কেউ জোর করে তাঁদের গলায় ফাঁস দেয়নি।


এছাড়া ৭৭ বছর বয়সী বৃদ্ধা নারায়ণী দেবীর শরীরেও কোনো আঘাতের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাকে অবশ্য ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়া যায়নি। কিন্তু তার গলায় কালো ছাপ খুঁজে পাওয়া গেছে। যা থেকে তদন্তকারীদের সন্দেহ হয় নারায়ণী দেবীকে গলা টিপে খুন করা হয়েছে।


প্রথমে অনুমান করা হয়েছিল, এই ১১ জন একসঙ্গে আত্মহত্যা করেছেন। ময়নাতদন্তের রিপোর্টের পর জট খোলার বদলে আরো জটিল হয়ে গেছে৷



কয়েকটি বিষয়ে ধন্দ কাটেনি পুলিশেরও। প্রথম প্রশ্ন, গোটা পরিবার অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাস করে মৃত্যুর পথে হাঁটার কথা ভাবলে আত্মীয়রা কেউ তা টের পেতেন। দ্বিতীয় প্রশ্ন, রবিবার সকালে দেখা যায় ভাটিয়াদের বাড়ির প্রধান ফটক খোলা ছিল। শনিবার রাতে সপরিবার আত্মহত্যার পরিকল্পনা করলে তারা দরজা খুলে রাখবেন কেন? তৃতীয় প্রশ্ন, তা হলে কি বাইরে থেকে কেউ এসে দরজা খুলে বেরিয়ে গিয়েছিল? সে কি বাড়ির লোকেদের পরিচিত? না হলে বাড়িতে কুকুর থাকা সত্ত্বেও ডাকল না কেন?


চতুর্থ প্রশ্ন আরো গুরুত্বপূর্ণ। তা হল, নারায়ণী দেবীর বয়স ৭৭ বছর। তার ছেলে, পুত্রবধূদের বয়স ৪০ থেকে ৫০-এর কোঠায়। তারা গুপ্ত সাধনায় বিশ্বাস করলেও করতে পারেন। কিন্তু নাতি-নাতনিদের বয়স, ১৫, ২৩, ২৫ বা ৩৩ বছর। এরা কী করে তন্ত্রে বা গুপ্তসাধনায় বিশ্বাস করে ফেলল?


পঞ্চম প্রশ্ন, সকলে মিলে মৃত্যুর পরিকল্পনা করলে তারা বাড়ির মেয়ে প্রিয়াঙ্কার বিয়ের বন্দোবস্ত করছিলেন কেন? কেনই বা ১৪ দিন আগেও ঘটা করে আশীর্বাদের আয়োজন হয়েছিল?


মৃতদেহের সঙ্গে এক রহস্যময় ডায়েরিও উদ্ধার হয়েছে। যা দেখে পুলিশেরও ধারণা, শেষ মুহূর্তে কোনো ঐশ্বরিক শক্তিতে তারা বেঁচে যাবেন বা তাদের পুনর্জন্ম ঘটবে, এমন কুসংস্কারই ভাটিয়া পরিবারে তৈরি হয়েছিল। এছাড়া ওই বাড়িতে ১১টি পাইপ রয়েছে। অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাস অনুযায়ী ১১ জনের আত্মার মুক্তির জন্যই ১১টি পাইপ কি না, সেই প্রশ্নও উঠছে।


এখানেই কোনো তান্ত্রিকের ভূমিকা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তদন্তকারীদের মতে, কোনো তান্ত্রিক ভাটিয়াদের এই পথে যেতে চাপ দিয়ে থাকতে পারে। তার নির্দেশ মতোই ডায়েরিতে আত্মহত্যার প্রক্রিয়া লিখে রাখা ছিল। সেই হাতের লেখা কার, তারও তদন্ত হচ্ছে। কোনো তান্ত্রিক আত্মহত্যায় মদত দিয়ে থাকলে তার পিছনে সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্য ছিল কি না, তাও দেখা হবে। সম্পত্তি সংক্রান্ত বিবাদ বা ব্যক্তিগত শত্রুতার ইতিহাসও খোঁজা হচ্ছে।


পরিবারটি একটি মুদি দোকান ও কাঠের দোকান চালাত। প্রতিবেশীরা জানান, খুবই শান্ত ও হাসিখুশি একটি পরিবার ছিল। কাউকে কখনো ঝগড়া-বিবাদ করতে দেখেননি তাঁরা। আর্থিকভাবেও সচ্ছল ছিল পরিবারটি। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com