শিরোনাম
ভারতে স্কুলে মুসলিম শিশুরা হয়রানির শিকার হচ্ছে
প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০১৮, ১১:৩২
ভারতে স্কুলে মুসলিম শিশুরা হয়রানির শিকার হচ্ছে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

স্কুল ও খেলার মাঠে শিশুরা প্রায়ই চেহারা, গায়ের রং, খাদ্যাভ্যাস, নারী বিদ্বেষ, সমকামিতা ও বর্ণ নিয়ে তাদের সহপাঠীদের কাছে হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। সম্প্রতি প্রকাশিত নতুন এক বইয়ে বলা হয়েছে, ভারতে বিভিন্ন অভিজাত স্কুলেও মুসলিম ছেলেমেয়েরা তাদের ধর্মের কারণে ক্রমবর্ধমান হয়রানির লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে।


ভারত ও সারা বিশ্ব জুড়েই ইসলাম-ভীতি ক্রমণ বাড়তে থাকার পটভূমিতেই এমন ঘটছে বলে মনে করা হচ্ছে।


‘মাদারিং এ মুসলিম’ নামে বইটির লেখক নাজিয়া ইরাম বলেন, পাঁচ বছরের শিশুও এসব হয়রানির লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে। তিনি ভারতের ১২টি শহরের ১৪৫টি পরিবার এবং রাজধানী দিল্লির ২৫টি অভিজাত স্কুলের ১০০ জন ছাত্রছাত্রীর সাথে কথা বলেছেন।


নাজিয়া বলেন, তিনি তার গবেষণায় যা পেয়েছেন তা তাকে স্তম্ভিত করেছে। যখন পাঁচ-ছয় বছরের বাচ্চারা বলে তাদেরকে ‘পাকিস্তানি’ বা ‘সন্ত্রাসী’ বলে ডাকা হয়- আপনি তার কি জবাব দেবেন? সেই স্কুলের কাছেই বা কি অভিযোগ করবেন।


তিনি বলেন, এর অনেকগুলোই হয়তো মজা করে বলা হয়েছে, মনে হতে পারে এটা নির্দোষ ঠাট্টা। কিন্তু আসলে তা নয়, এটা উৎপীড়ন।


তার বইতে নাজিয়া যে সব বাচ্চার সাক্ষাতকার নিয়েছেন, তারা বলেছে এমন কিছু প্রশ্ন বা মন্তব্য আছে যা প্রায়ই তাদের দিকে ছুঁড়ে দেয়া হয়। যেমন:
- তুমি কি একজন মুসলিম? আমি মুসলিমদের ঘৃণা করি।
- তোমার বাবা-মা কি বাড়িতে বোমা বানায়?
- তোমার বাবা কি তালেবানের অংশ?
- সে একজন পাকিস্তানি।
- সে একজন সন্ত্রাসী।
- ওই মেয়েটাকে বিরক্ত করো না, সে তোমাকে বোমা মেরে দেবে।



এই বইটি বের হবার পর থেকেই স্কুলগুলোতে ধর্মীয় ঘৃণা ও বিরূপ ধারণা কতটা আছে তা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে। টুইটারে ‘মাদারিংএমুসলিম’ নামে একটি হ্যাশট্যাগে অনেকেই তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরছেন।


ভারতে জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ হিন্দু এবং ১৪ দশমিক ২ শতাংশ মুসলিম। এই দুই সম্প্রদায় অধিকাংশ সময় শান্তিতে বসবাস করলেও ১৯৪৭’এর ভারত ভাগ এবং ১৯৯০’এর দশকে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর এ পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এ বৈরি মনোভাব আরো বেড়েছে।


নাজিয়া নিজেই বলছেন, তার প্রথম কন্যা সন্তান জন্মের পরই তিনি প্রথম ভয় পেলেন। তিনি তাকে কোনো পরিচিত মুসলিম নাম দেয়া নিয়েও উদ্বিগ্ন ছিলেন। এরপর থেকে তার ‘মুসলিম’ পরিচয় ছাড়া অন্য সব পরিচয়ই যেন গৌণ হয়ে গেছে।


ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু-জাতীয়তাবাদী দল বিজেপি নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই মুসলিমদের আগ্রাসনকারী, জাতীয়তাবিরোধী, এবং জাতীয় নিরাপত্তার হুমকি বলে বর্ণনা করতে থাকে।


টেলিভিশনে নানা তর্কবিতর্কে এই বিভেদ আরো গভীর হয়। আর এখন তা বড়দের থেকে ছোট বাচ্চাদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। নাজিয়া বলেন, স্কুলে, খেলার মাঠে, ক্লাসরুমে, স্কুলবাসে মুসলিম বাচ্চাকে লক্ষ্য করে পাকিস্তানি, আইএস, বাগদাদি ও সন্ত্রাসী বলা হয়।


নাজিয়া বলেন, স্কুলগুলো তাদের ক্যাম্পাসে এরকম ধর্মীয় হয়রানির ঘটনা ঘটার কথা অস্বীকার করেছে। কিন্তু তার মতে এর সমাধান করতে গেলে প্রথম এটা স্বীকার করতে হবে, তা না হলে এই ঘৃণা ছড়াতে ছড়াতে এক সময় আমাদের সবাইকে গিলে ফেলবে। সূত্র: বিবিসি


বিবার্তা/জাকিয়া

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com