শিরোনাম
হৃদরোগী কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে কী করবেন?
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০১৯, ১৯:২৭
হৃদরোগী কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে কী করবেন?
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ডেঙ্গু জ্বরের ব্যাপকতা বেড়ে যাওয়ার কারণে হৃদরোগীদের নিয়ে বাড়তি সতর্কতার প্রয়োজন বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। দেশে বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গুজ্বর। প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেক মানুষ।


ডেঙ্গুর প্রকৃতি ও পরিণতি সবার ক্ষেত্রে এক রকম হয় না। কারো কারো ক্ষেত্রে পরিস্থিতি দ্রুত খারাপের দিকে মোড় নিতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষরা উচ্চ ঝুঁকিতে পড়ে যেতে পারে। আবার বয়স্ক রোগীদের মধ্যে যারা হৃদ্‌রোগ, কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, ব্রংকাইটিস, স্ট্রোক ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত, তাঁদের ঝুঁকি সর্বাধিক।


জ্বরের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে সিবিসি এবং ডেঙ্গু এনএস১ পরীক্ষা করালেই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়ে। জ্বরের পঞ্চম দিন থেকে সিবিসি, ডেঙ্গু আইজিএম, আইজিজি, এসজিপিটি পরীক্ষা করতে হবে। হৃদরোগীদের কারো ডেঙ্গু হলে বিশেষ সতর্ক হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।


করণীয়


আতঙ্কিত হবেন না। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।


জ্বর কমাতে শুধু প্যারাসিটামল ওষুধ সেবন করুন। জ্বর বা শরীর ব্যথার জন্য ব্যথানাশক ওষুধ (যেমন—ক্লোফেনাক, ডাইক্লোফেন, আলট্রাফেন, ভল্টালিন, ভল্টারেন, আইবুপ্রোফেন, ব্রুফেন, ইনফ্লাম, নেপ্রোক্সেন, ইনডোমেট, ইটোরিক্স, কক্সিব, ডিসপ্রিন ইত্যাদি)—তা মুখে হোক বা মলদ্বারে হোক দেওয়া যাবে না।


রক্তের কাউন্ট স্বাভাবিক থাকলে বাড়িতে বিশ্রাম নিন।


শরীরের পানিশূন্যতা রোধে প্রচুর তরল খাদ্য গ্রহণ করুন।


ব্যথানাশক কেন নয়?


ডেঙ্গুতে রক্তের জমাট বাঁধার প্রধান উপাদান অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট কমে যেতে পারে। এই প্লাটিলেট দেহের স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহে একটি নিখুঁত ভারসাম্য রক্ষা করে। ডেঙ্গুতে সেই ভারসাম্য ভেঙে পড়তে পারে। প্রায় সব ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ এই অণুচক্রিকার বিরুদ্ধে কাজ করে। ফলে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো কমতে থাকা অণুচক্রিকা ব্যথানাশকের আক্রমণে দ্রুত অকার্যকর হয়ে রোগীকে রক্তক্ষরণের ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে।


হাসপাতালে কখন ভর্তি?


ডেঙ্গু শনাক্তের পর থেকে প্রতিদিন রক্তের সিবিসি পরীক্ষা করাতে হবে। যদি দেখা যায়, অণুচক্রিকা স্থিতিশীল রয়েছে, রোগী মুখে পর্যাপ্ত খেতে পারছে, তাহলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বাড়িতে বসেই চিকিৎসা নিতে পারবে। যদি অণুচক্রিকা দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে এবং রোগীর রক্তচাপ কমতে থাকে, নাড়ির গতি বাড়তে থাকে, মুখে পর্যাপ্ত খেতে পারে না, তাহলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। আর যদি দেখা যায়, অণুচক্রিকা ধীরগতিতে কমছে, তাহলে বাড়িতে বসে প্রতিদিন সিবিসি করাতে হবে। অণুচক্রিকা একবার বাড়তে শুরু করলে আর ভয় নেই। ধীরে ধীরে রোগী ভালো হয়ে যাবে।


হৃদরোগীদের করণীয়


যাঁরা হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত, তাদের অনির্দিষ্টকালের জন্য রক্ত পাতলা করার ওষুধ (যেমন—এসপিরিন, ইকোসপ্রিন, কার্ভা, ইরাসপ্রিন, ডিসপ্রিন, ক্লপিড, লোপিরেল, ওডরেল, প্লাডেক্স, ক্লনটাস, ক্লগনিল, এনক্লগ, রিপলেট, পপ্লাভিক্স, ক্লোরেল, প্রাসুরেল ইত্যাদি) খেতে হয়। এই ওষুধগুলো রক্তের অণুচক্রিকার বিরুদ্ধে কাজ করে এর কার্যক্ষমতাকে হ্রাস করে দেয়।
হৃদরোগীদের জন্য এটি দরকার হয় রক্তনালির ভেতর অনাকাঙ্ক্ষিত রক্ত যাতে জমাট বাঁধতে না পারে। কিন্তু ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে এরই মধ্যে কমতে থাকা প্লাটিলেট যেখানে রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, সেখানে এজাতীয় রক্ত পাতলা করার ওষুধ রক্তক্ষরণের আশঙ্কাকে অনেক গুণ বৃদ্ধি করে।


তাই হৃদ্‌রোগীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পাতলা করার সব ওষুধ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে হবে। চিকিৎসকের নির্দেশমতো চলতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যখনই রক্তের প্লাটিলেট স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরে আসবে, তখন চিকিৎসকই সব দিক বিবেচনা করে আবার রক্ত পাতলা করার ওষুধ খাওয়া (এসপিরিন, ক্লপিডোগরেল, প্রাসুগরেল ইত্যাদি) শুরু করার পরামর্শ দেবেন।


আরো কিছু ওষুধ


প্রায়ই দেখা যায়, হৃদ্‌রোগীদের অনেকেরই হৃদ্‌রোগ ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ ও হার্ট ফেইলিওরের ওষুধ খেতে হয়। এসব ওষুধ রক্তচাপকে আরো কমিয়ে দিতে পারে। তাই এসব ওষুধ চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সাময়িক বন্ধ রাখতে হবে।


ডেঙ্গু রোগে অনেক ক্ষেত্রে লিভার আক্রান্ত হয়। এসজিপিটি ও বিলিরুবিন বেড়ে যেতে পারে। তাই যারা কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ খান, তাদের সাময়িকভাবে এসব ওষুধও বন্ধ রাখতে হবে।


যাদের ডায়াবেটিস আছে, ডেঙ্গুতে তাদের রক্তের সুগার ওঠানামা করতে পারে। তাই ডায়াবেটিসের ওষুধ বা ইনসুলিন নেয়ার আগে ঘন ঘন রক্তের সুগার পরীক্ষা করে ওষুধের মাত্রা সমন্বয় করে নিতে হবে।


ডেঙ্গু নিরাময়যোগ্য


আগেই বলা হয়েছে, ডেঙ্গু নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। তা ছাড়া যত ব্যাপকতা নিয়েই ডেঙ্গু আক্রমণ করুক না কেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এটি নিরাময়যোগ্য রোগ। রক্তের প্লাটিলেট একবার বাড়তে শুরু করলে আর ভয় নেই। মূল চিকিৎসা হলো সেবা। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও খাদ্য গ্রহণ করলে এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যেই হৃদ্‌রোগীরা সুস্থ হতে পারবে। যাদের হৃদরোগের বিভিন্ন ওষুধ বন্ধ রাখতে হয়েছে, তাদের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসক দেখিয়ে আগের ওষুধগুলো আবার শুরু করা।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com