শিরোনাম
১৯ সালে আলোচিত নাম ডেঙ্গু
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৭:৩৪
১৯ সালে আলোচিত নাম ডেঙ্গু
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

চলতি বছরে স্বাস্থ্যখাতে সবচেয়ে আলোচিত-সমালোচিত বিষয় ছিল ডেঙ্গু। ২০১৯ সালে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা করছে বাংলাদেশ। চলতি বছরের এপ্রিল থেকে দেখা দেয়া ডেঙ্গু জুলাই, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে মহামারী রূপ ধারণ করে।


ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা সরকারি হিসাবে এক লাখে পৌঁছেছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ১২১ জন। যদিও এপ্রিলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর বেসরকারি হিসেবে সারা দেশে এ পর্যন্ত লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদের মধ্যে তিন শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।


তবে, সরকারি হোক আর বেসরকারি, এটাই এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর আগে বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মৌসুমে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এত রোগী কখনই হাসপাতালে ভর্তি হয়নি। আর সারা দেশেও ছড়িয়ে পড়েনি।এমনকি এই সংখ্যা গত ১৯ বছরে দেশে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত সংখ্যার দ্বিগুণেরও বেশি।


স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য মতে, ২০১৮ সালে দেশে সর্বোচ্চ ১০ হাজার ১৪৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। গত ১৯ বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া মোট রোগী ৫০ হাজার ১৭৬ জন।


২০০২ সালে দেশে প্রথম ব্যাপকভাবে ডেঙ্গু রোগী দেখা যায়। সে সময় ৫ হাজার ৫১১ রোগী ভর্তি হয়েছিল। ২০০১ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমলেও ২০০২ সালে রোগীর সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে।


১০ ডিসেম্বর সংবাদপত্রে প্রকাশিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপরেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে এক লাখ ৭৪২ জন। এর মধ্যে ছাড়পত্র পেয়েছেন এক লাখ ১৭৭ জন।


আইইডিসিআরের তথ্য মতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। তবে জুলাই-আগস্ট পর্যন্ত পরিস্থিতি বেশি খারাপ থাকে।


স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানান, অন্যান্য বছরগুলিতে জুন-জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু মৌসুম ধরা হলেও চলতি বছর ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে। এখনো ঢাকা ও রাজধানীর বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে তিনশ’র বেশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন।


চিকিৎসকরা জানান, এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার প্রচলিত ধরনও বদলে গেছে। আগে ডেঙ্গু হলে প্রথমে উচ্চমাত্রার জ্বর, প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা ও গায়ে র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি হতো। পরবর্তীতে চার থেকে সাতদিনের মধ্যে ডেঙ্গু হেমোরেজিকের নানা লক্ষণ (প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা কমে যাওয়া, দাঁতের মাড়ি, নাক, মুখ ও পায়ুপথে রক্তপাত) প্রকাশ পেতো। কিন্তু ২০১৯ সালে জ্বর ওঠার দু-একদিনের মধ্যে ডেঙ্গু হেমোরেজিকের লক্ষণসহ রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে দেখা গেছে। এমনকি স্বল্প সময়ে রোগী ‘শক সিনড্রোমে’ আক্রান্ত হয়ে হার্ট, কিডনি, লাংসহ বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাচ্ছে। আইসিইউ-তে ভর্তি করার পরও রোগীর মৃত্যু হতে দেখা গেছে।


রাজধানীর বাইরে দেশের অন্যান্য জনপদেও ডেঙ্গু আক্রান্তে মানুষ মারা গেছে। এ বছর সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ারও রেকর্ড হয়েছে। গত বছর পর্যন্ত চট্টগ্রাম ও বরিশালসহ দু’তিনটি জেলায় সীমিত সংখ্যক ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেলেও এবারই প্রথম দেশের সব জেলায় ডেঙ্গু রোগী মিলেছে। জেলাগুলোতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস ইজিপ্টের পাশাপাশি এডিস এলবোপিক্টাস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে।


আইইডিসিআর জানিয়েছে, এ বছর ডেঙ্গুতে পুরুষের আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। পুরুষ রোগীদের মধ্যে চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি। এদের মধ্যে বেশিরভাগই তরুণ ও শিশু। এবার অন্য বছরের তুলনায় গৃহিণীদের ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা কম।


অন্যদিকে ডেঙ্গুতে পুরুষরা বেশি আক্রান্ত হলেও বেশি মৃত্যু হয়েছে নারী ও শিশুর।


সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী। হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি।


ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার অভিযোগের আঙ্গুল প্রধানত ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এবং সরকারের দিকে। বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে যথাসময়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলেই এই পরিস্থিতি হয়েছে। রাজধানী দুই সিটি করপোরেশনের মশা মারার ওষুধের কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।


আগস্টে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন দেখে অসন্তোষ জানিয়েছেন হাইকোর্ট। বলেছেন, ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ব্যর্থতার কারণেই সারাদেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। কর্তৃপক্ষের দক্ষতা ও মানসিকতার অভাবেই পরিস্থিতি এমন হয়েছে। মশার স্প্রে বা কয়েল প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো মশা নির্মূল চায় না বলেও মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। এছাড়া মৃতের সংখ্যা নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি হিসাবের ফারাক প্রসঙ্গেও প্রশ্ন তোলেন আদালত।


ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণে সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদফতরে এক সভায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। সিদ্ধান্তগুলো হল : বিভাগীয়, জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত চিকিৎসক ও নার্সদের ডেঙ্গুবিষয়ক প্রশিক্ষণের রোডম্যাপ প্রণয়ন, রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে সারা দেশে চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশিক্ষণ প্রদান, ডেঙ্গু প্রতিরোধে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্থানীয় সরকার ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় সাধন।


বিবার্তা/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com