শিরোনাম
অবহেলায় বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, নেই জোরাল কার্যক্রম
প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০১৯, ০৯:০৫
অবহেলায় বেড়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ, নেই জোরাল কার্যক্রম
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীতে মশা নিধনের কার্যক্রম কখনোই জোরদার ছিল না। পরিস্থিতি জটিল হতে শুরু করলেও কর্তৃপক্ষ সজাগ হয়নি। এখনো মশা নিধনে শক্ত কোনো কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। বর্তমানে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। এতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতালগুলো। বিশেষজ্ঞরা ডেঙ্গু নিয়ে এমন সব মন্তব্য করেছেন।


প্রথমে রাজধানীকেন্দ্রিক হলেও খুব দ্রুত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ৬২ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে অর্ধশতাধিক প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে।


গত ১ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত এক মাসে ১৪ হাজার ৯৯৬ রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। আর মঙ্গলবার থেকে বুধবার ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৪৭৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের ৭ মাসে ১৭ হাজার ১৮৩ জন। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৪ জনের। তবে বেসরকারি হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে।


বুধবার দুপুর সোয়া ১২টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাপসপাতালের জরুরি বিভাগে রবিউল ইসলাম নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পুলিশের এসআই কোহিনুর আক্তার নীলা মারা যান। তিনি পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) কর্মরত ছিলেন। মুগদা জেনারেল হাসপাতালে আতিক (১১) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দিবাগত রাতে এক পুলিশ সদস্যের স্ত্রী মারা যান ঢাকা মেডিকেলে।


এদিকে অনেক দেরিতে হলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নানা কার্যক্রম গ্রহণ করছে। তবে তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন নগরবাসী।


দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা কাজ করে যাচ্ছে। তাদের কাজে কোনো গাফিলতি নেই। স্থানীয় সরকার বিভাগও বলছে, সিটি করপোরেশনের কাজে তারা গাফিলতি দেখছে না। অবস্থা পর্যালোচনা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু মহামারীতে রূপ নিয়েছে।


আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগাতে হবে। স্কুল-কজেল বন্ধ ঘোষণা করতে হবে।


ডেঙ্গু মহামারী আকার ধারণ করেছে মন্তব্য করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, সরকার এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও দুই মেয়রের ভূমিকা নিন্দনীয় বলেও মনে করেন তিনি। পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিদ্যমান বিপর্যয়কে জাতীয় সংকট ঘোষণা করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব।


আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে উঠে এসেছে বাংলাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির কথা।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঈদের সময় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। কারণ কয়েক দিনের মধ্যে ঈদ করতে নগরবাসী ঢাকা ছাড়তে শুরু করবে। তাদের অনেকেই হয়ত ডেঙ্গু ভাইরাস নিয়ে ঢাকা ছাড়বেন। আগস্টে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনাও প্রবল। ফলে সপ্তাহ দুয়েক পর ডেঙ্গু ব্যাপক বিস্তার হতে পারে, যা জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে বলে।


কীটতত্ত্ববিদ, চিকিৎসক ও নগর বিশারদরা বলছেন, প্রথমত এই সংকটের দায় ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশনের। ফেব্রুয়ারি মাসে বৃষ্টিপাতের পর তাদের সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু তারা আমলে নেয়নি। সমস্যার শুরু সেখান থেকেই। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অনিয়মিত ও অপর্যাপ্ত মশক নিধন কার্যক্রম। ছিটানো ওষুধও ছিল মানহীন।


তাদের আশঙ্কা, আগস্ট মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে। কারণ এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টির আভাস রয়েছে। অতীত রেকর্ড বলছে- এডিস মশার বংশ বিস্তার এ মাসে বেশি হয়ে থাকে।


অবশ্য ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে মানুষকে বাঁচাতে ইতোমধ্যে চিকিৎসক-নার্সদের পকেটবুক আকারে জাতীয় চিকিৎসা গাইডলাইন দেয়া হয়েছে। ডেঙ্গু পরীক্ষায় ফি বেঁধে দেয়া হয়েছে। লন্ডন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছেন।


বিবার্তা/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com