শিরোনাম
ডেঙ্গু ছড়াল ৫০ জেলায়, হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত কিট
প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০১৯, ০৮:৪১
ডেঙ্গু ছড়াল ৫০ জেলায়, হাসপাতালে নেই পর্যাপ্ত কিট
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ছে ভয়াবহ এডিস মশাবাহিত ভাইরাস জ্বর ডেঙ্গু।


রবিবার (২৮ জুলাই) সকাল পর্যন্তও দেশের ছয় বিভাগের ২২ জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সোমবার (২৯ জুলাই) সকালে দেশের সাত বিভাগের অন্তত ৫০ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার তথ্য পাওয়া গেছে।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামেও এডিস মশা আছে। সেগুলো ডেঙ্গু ছড়ায় না বললেই চলে। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে মূলত রাজধানীতে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগী গ্রামে যাওয়ায়।


আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড় দেয়ার মাধ্যমে গ্রামের মশার মধ্যে এ ভাইরাস চলে যায় এবং সেই মশা যাকে কামড় দেয়, তিনিও এ রোগে আক্রান্ত হন।


বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত অনেকে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ায় ডেঙ্গুর ভাইরাস গ্রামেও ছড়িয়ে পড়েছে। সঙ্গত কারণেই রাজধানীর কারো গায়ে জ্বর থাকলে গ্রামের বাড়ি না যাওয়াই ভালো। এরপরও যদি যেতে হয়, তাহলে মশারির ভেতরে থাকতে হবে, যেন মশা কামড়াতে না পারে। ডেঙ্গু রোগীরা ঈদের সময় বাড়ি গেলেও একই ঘটনা ঘটবে।


এদিকে রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। সোমবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ দেশের সিভিল সার্জনদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক করে এ নির্দেশনা দেন।


এ ছাড়া জেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষায় যেন ৫০০ টাকার বেশি নেয়া না হয়, তা মনিটরিং করারও নির্দেশ দেন।


জানা গেছে, দেশের অধিকাংশ জেলা-উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটস মজুদ নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জেলা-উপজেলা শহরের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গুজ্বর শনাক্তকরণে বিনামূল্যে যেসব কিটস পাঠানোর কথা, সোমবার পর্যন্ত অনেক হাসপাতালেই তা পৌঁছেনি।


কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু জ্বর শনাক্তকরণ কিট (রিএজেন্ট) নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে কিট পাঠানোর কথা। আমরা তা এখনো পাইনি। তবে সোমবার ভিডিও কনফারেন্সে মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা হয়েছে। এখন আমরা কিটের জন্য চাহিদাপত্র দেব। প্রয়োজনে কিট কিনে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে।


তিনি বলেন, ডেঙ্গুজ্বর মোকাবিলায় প্রস্তুত আমাদের হাসপাতালগুলো। ডেঙ্গু রোগীর জন্য পৃথক শয্যা প্রস্তুত। মশারি রাখা এবং ডেঙ্গুর চিকিৎসা যেন বিনাখরচে প্রদান করা হয়। সংশ্লিষ্টদের সেই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ডেঙ্গু পরীক্ষায় সরকার যে ফি নির্ধারণ করে দিয়েছে, প্রাইভেট হাসপাতালগুলো তা মানছে কিনা, সেটিও আমরা মনিটরিং করছি। পাশাপাশি সচেতনতা বাড়াতে সব উপজেলায় মাইকিং করা হচ্ছে।


চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডা. শাখায়াত উল্লাহ জানিয়েছেন, চাঁদপুরে সোমবার ছয় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। জেলাটিতে এ পর্যন্ত ৮৫ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা প্রদানে তারা ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।


সিভিল সার্জন বলেন, চাঁদপুর সদরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষার পর্যাপ্ত কিট মজুদ আছে। জেলাটির আর কোনো সরকারি হাসপাতালে কিট মজুদ নেই। আমাদের কাছে যেগুলো আছে, সেগুলো অন্য কোনো হাসপাতালে বিতরণের নিয়ম নেই। সরকারিভাবে এখনো কোনো কিট পাঠানো হয়নি।


রাজশাহীর বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের পরিচালক ডা. গোপেন্দ্র নাথ আচার্য জানান, বিভিন্ন জেলায় ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা সার্বিকভাবে প্রস্তুত। অনেক হাসপাতালেই ডেঙ্গু শনাক্তকরণের কিট মজুদ নেই। সরকারের কাছ থেকে কিট পাওয়া মাত্রই সেগুলো সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে পৌঁছে দেয়া হবে।


রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক ও আইসিডিডিআরবির উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, ঢাকার বাইরে আগেও ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যেত। এখন খোঁজাখুঁজি চলছে বলে বেশি সংখ্যায় পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকার বাইরেও যেহেতু এডিস মশা আছে, তাই ডেঙ্গুও ছড়াবে।


তিনি বলেন, এডিস মশাকে আমরা বলি আরবান (শহুরে) মশা। গ্রামেও এক ধরনের এডিস মশা আছে, সেটিও ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। তবে তা একেবারেই কম। কিন্তু এখন জেলা-উপজেলাও আরবান এলাকার রূপ পেয়ে গেছে। ফলে ডেঙ্গু ছড়ানো স্বাভাবিক।


দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করা হয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন ও কন্ট্রোলরুমের মাধ্যমে। ঢাকা শহরের ১২ সরকারি ও ৩৫টি বেসরকারি হাসপাতালসহ মোট ৪৭টি হাসপাতালসহ সারা দেশের জেলা সিভিল সার্জনদের অফিস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।


কন্ট্রোলরুমের তথ্যমতে, সোমবার পর্যন্ত রাজধানীর বাইরে দেশের সাত বিভাগের ৫০ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে। এসব জেলায় ১ হাজার ২৮৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আটজন মারা গেছেন।


বিবার্তা/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com