
শিশুদের নিয়ে বরাবরই মা-বাবাদের অনেক চিন্তা থাকে। তারপরও অনেকে বিনা কারণেই চিকিৎসকদের কাছে একটু বেশেই দৌড় ঝাঁপ করেন। তা না করে এমন যে কোনো পরিস্থিতিতে আতক্ঙিত হবার কিছুই নেই। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চললে যে কোনো রোগ থেকে ভালো হয়ে উঠা সম্ভব। কিন্তু চিকিৎসা নিয়ে অনেকে হেলাফেলা করেন। যা করা একেবারেই ঠিক নয়। বিশেষ করে শিশুর জন্য তো নয়ই।
সিজন চেঞ্জের সময় ঠাণ্ডা লাগা, একটু ধুলোবালি লাগলেই শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমা হল না তো? এমনটা হলে অভিভাবকদের পড়তে হয় দুশ্চিন্তায়। সত্যি বলতে কি, ইদানীং পাঁচ বছরের কম বয়সী অনেক শিশুরই অসুস্থতার একটি বড় কারণ অ্যাজমা বা হাঁপানি। তাই এই বিষয়ে প্রত্যেক বাবা-মায়ের সচেতন হওয়া জরুরী।
শিশুরর সারাবছর ঠাণ্ডা কাশি লেগেই থাকছে? খেয়াল করুন শিশু কতবার অসুস্থ হচ্ছে, এবং কতদিন লাগছে সারতে। সাধারণ কাশির সিরাপে ভালো হচ্ছে কি? যদি না হয়, এবং ঋতু পরিবর্তনের পুরোটা সময় জুড়ে শিশু শ্বাসকষ্টে ভুগে, তবে এটি অ্যাজমা হবার সম্ভাবনাই বেশী। অ্যাজমা আক্রান্ত শিশুর ফুলের রেণু, ঠাণ্ডা বাতাস, শারীরিক পরিশ্রম ইত্যাদি কারণে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। এছাড়া পরিবারে আর কোন হাঁপানি রোগী থাকলেও শিশুর শ্বাসপ্রশ্বাসের সমস্যা হবার প্রবণতা বেশী থাকে।
অ্যাজমার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে কাশি (বিশেষ করে রাতের বেলা), শ্বাস ফেলার সময় বাঁশির মত আওয়াজ, শ্বাসকষ্ট এবং ঘন ঘন ঠান্ডা লাগা, যা প্রায়ই বুকে বসে যায়। ধোঁয়া, ধুলোবালি, ফুলের রেণু বা পোকামাকড়ের উপস্থিতিতে এ সমস্যাগুলো আরও বাড়তে পারে।
শিশুর মধ্যে এসব লক্ষণ দেখতে পেলে দেরী না করে শিশু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। অ্যাজমা সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য পরিবারের আর কারো এধরনের অসুবিধা আছে কিনা সেসব তথ্য বিশদে জানা প্রয়োজন। এছাড়া বুকের এক্স-রে, রক্ত পরীক্ষা এবং এলার্জি সেন্সিটিভিটি টেস্ট করা লাগতে পারে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগের লক্ষণ বিশ্লেষণ করে অ্যাজমার তীব্রতা কতটা তা নির্ধারণ করে থাকেন এবং এর ভিত্তিতেই ঔষধ দেন। সাধারণত চার সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যবেক্ষণের পর পরবর্তী চিকিৎসা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ঘন ঘন বা খুব মারাত্মক হাঁপানির ক্ষেত্রে চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী হতে পারে।
শিশুদের অ্যাজমা কেন হয়?
আমাদের দেশে একটি ধারণা যে শিশুদের অ্যাজমা হবে না। এটি একটি ভুল ধারণা। এই সমস্যা নিয়ে যারা আসে তখন তাদের ইতিহাস জানার প্রয়োজন থাকে। এই যেমন মা-বাবার অ্যাজমা রয়েছে কি না। মানে হলো পারিবারিক ইতিহাস জানার প্রয়োজন থাকে। কারণ রোগ বালাইয়ের ক্ষেত্রে এই একটি বড়ো ব্যাপার। মা-বাবার যদি শ্বাসকষ্ট থাকে তাহলে শিশুটি হয়তো বার বার কাশি- ঠাণ্ডা নিয়ে আসছে। প্রাথমিক অবস্থায় তাকে অ্যাজমা বলা হয় না। ব্রঙ্কলাইটিস বলা হয়। বারবার যখন এটি হতে থাকে, ১৮ মাসের ওপর একটি শিশুর যখন এটি হচ্ছে, তার অব্স্থা বুঝে, পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে আমরা ধারণা করি শিশুটির অ্যাজমা হতে পারে।
চিকিৎসার পাশাপাশি অ্যাজমা আক্রান্ত শিশুকে ভালো রাখার জন্য পদক্ষেপ শুরু হবে ঘর থেকেই। কিসে বাচ্চার এলার্জির সমস্যা হয় ও শ্বাসকষ্ট বাড়ে তা চিহ্নিত করুন ও সেগুলো এড়িয়ে চলুন। বৃষ্টি, বাতাস বা ঠান্ডা কুয়াশার দিনে বেরোতে দেবেন না। ঘরের ভেতর যেখানে ধুলোবালি, ছত্রাক বা স্যাঁতস্যাঁতে ভাব বেশী সেখান থেকে শিশুকে দূরে রাখুন। তারপরও শ্বাসকষ্ট বেশী হলে দিনে দু’বার নেবুলাইজ করুন। এছাড়া বংশগত হাঁপানি বা ঠান্ডা কাশির প্রবণতা বেশী থাকলে প্রতি মৌসুমে ইনফ্লুয়েঞ্জার ভ্যাক্সিন নিতে পারেন।
শিশুর অ্যাজমা হলে ভয়ের কিছু নেই। আপনার সতর্ক দৃষ্টি ও সাবধানতাই আপনার সন্তানকে দিতে পারে এক নির্বিঘ্ন হাসিখুশী শৈশব।
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]