এই আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসের ঝমঝম বৃষ্টিতে মাধবীলতার ফুলে ফুলে ভরে থাকা বাড়ির গেটের ওপর লতিয়ে ওঠা দোল খাওয়া ফুল আর পাতার কী যে অপূর্ব শোভা! বর্ষার সবুজ গাঢ় শ্যামল সৌন্দর্যে মনপ্রাণ ভরে ওঠে। কত কবি যে বর্ষার রূপে মুগ্ধ হয়ে কবিতা লিখেছেন।
ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। আষাঢ়-শ্রাবণ বর্ষাকাল। গ্রীষ্মের তাপদাহর পরে আসে বর্ষা। আষাঢ় মাস চলছে। কিন্তু গরম কমছে না। মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে তবুও তাপমাত্রা কমছে না।
বৃষ্টিস্নাত দিনে বাড়ির বাইরের পরিবেশ বেশ কর্দমাক্ত তখন ঘরের ভিতরটা অবশ্যই শুকনো হওয়া উচিত। তবে এই মৌসুমে থাকা যাবে সুস্থ।
বর্ষা মৌসুমে আবহাওয়ার বৈচিত্রে স্বাস্থ্যগত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। গরম ও ঠাণ্ডার এই সময়টাতেই রোগবালাই বেশি দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশুরা আক্রান্ত হয় বেশি। আবহাওয়ার এই বৈচিত্রে সংক্রামক ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস খুব সহজেই রোগ ছড়াতে পারে।
সর্দি-কাশির সঙ্গে নানা রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। বর্ষাকালে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় সর্দি-কাশির সঙ্গে ডেঙ্গু জ্বর, ডায়রিয়া, ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস জাতীয় নানা রোগ। তাই এই সমস্যা এড়াতে আমাদের বাড়তি সচেতনতা প্রয়োজন।
রোগ নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে সচেতন হতে হবে। তবে রোগে আক্রান্ত হয়ে গেলে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া এবং মেনে চলা অতি জরুরি। এছাড়া কিছু পদক্ষেপ তো আছেই।
জেনে নিন কি কি পদক্ষেপ নিবেন-
১. ঘরের কাছাকাছি পানির ট্যাব, ফুলের টব, কুলার ইত্যাদি পানি নিঃসরণ প্রতিরোধ করুন। কূপ এবং স্টোরেজ ট্যাংকের পানির উৎসগুলো আচ্ছাদিত করা উচিত। মশার প্রজনন প্রতিরোধ এবং মশারি ব্যবহার করে রোগ প্রতিরোধ করা করুন। মশা-মাছি থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্কতা গ্রহণ করুন।
২. বাড়ি থেকে বের হলে অবশ্যই ছাতা এবং রেইনকোট সঙ্গে নিয়ে বের হবেন।
৩. বাইরে বের হলে ব্যাগে আর একটি শুকনো পোশাক রাখুন। ভেজা পোশাক খুলে রেখে শুকনো পোশাক ব্যবহার করুন।
৪. ঘর মোছার সময় ক্লিনার বা ফিনাইল ব্যবহার করুন। এতে ঘরের মেঝে জীবাণুমুক্ত থাকবে। ঘরে মুখবন্ধ ডাস্টবিন ব্যবহার করুন। কারণ ময়লার গন্ধে শুধু ঘরের পরিবেশই নষ্ট হয় না, পোকামাকড়ও আসে।
৫. এ সময় শাক সবজি ভালো করে শুকিয়ে পরিষ্কার করুন, যা জীবাণু পরিত্রাণ করবে। প্রায় ১০ মিনিটের জন্য লবণের পানিতে সবুজ শাক ভিজিয়ে নিন। এ দ্রবণ জীবাণু অপসারণ করতে সাহায্য করে এবং পরে সেগুলো রান্না করা ভাল।
৬. বর্ষার সময় পায়ের পাতায় আটকানো পানিতে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। তাই পায়ের পাতা বা স্যান্ডেল যেন ভেজা না থাকে সেদিকে বিশেষ মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন।
৭. চামড়া বা নখের ফুসকুড়ি সংক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য লম্বা পোশাক পরবেন না।
৮. খাবার খাওয়ার আগে ও পরে এবং টয়লেট করার পর হাত ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
৯. যদি সম্ভব হয় তাহলে বৃষ্টির মধ্যে মোটরবাইক এবং বাইসাইকেল এড়িয়ে চলুন।
১০. বৃষ্টি-বাদলার দিনে শারীরিক ইমিউনিটি কমে যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ খাবার খান।
১১. বৃষ্টিতে ভিজলে বাড়ি ফিরে অবশ্যই গোসল করে নেবেন।
১২. গরম খাবার-দাবার খাবেন।
১৩. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুন। বর্ষায় পরিষ্কার থাকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এতে শরীরে ভাইরাস বাসা বাঁধতে পারবে না।
১৪. বিশুদ্ধ পানি পান করুন। বর্ষায় পানি পানের ইচ্ছে কম থাকলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বেশি করে পানি পান করা উচিত।
১৫. পুষ্টিসমৃদ্ধ বাড়ির খাবার খান। তেল-মশলাদার খাবার বেশি না খাওয়াই ভাল। এতে সুস্থতা নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ফ্লু থেকেও বাঁচবেন।
১৬. বর্ষার সময় বৃষ্টির জন্য সব দরজা-জানালা বন্ধ রাখলেও রান্নাঘর ও বাথরুমে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে নির্গমন ফ্যান ব্যবহার করা যেতে পারে।
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]