শিরোনাম
ইনসুলিন নিলেও কিভাবে চলবেন?
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০১৯, ১৬:০৩
ইনসুলিন নিলেও কিভাবে চলবেন?
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ডায়াবেটিস এমন একটি শারীরিক অবস্থা যা সারা জীবনের জন্যে বয়ে বেড়াতে হয় এবং সারা বিশ্বে এর কারণে প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ডায়াবেটিস বাড়ছে তবে প্রতিরোধযোগ্য রোগও বটে। আবার ডায়াবেটিস হবার আগের অবস্থাও যে আজকাল বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে তাও ঠিক।


শরীর যখন রক্তের সব চিনিকে (গ্লুকোজ) ভাঙতে ব্যর্থ হয়, তখনই ডায়াবেটিস হয়। এই জটিলতার কারণে মানুষের হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক হতে পারে। এছাড়াও ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে, নষ্ট হয়ে যেতে পারে কিডনি এবং অনেক সময় শরীরের নিম্নাঙ্গ কেটেও ফেলতে হতে পারে।


সারা বিশ্বেই এই সমস্যা বেড়ে চলেছে। বর্তমানে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪২ কোটিরও বেশি। ৩০ বছর আগের তুলনায় এই সংখ্যা এখন চার গুণ বেশি এই হিসেব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার।


চিকিৎকরা বলেছেন, ডায়াবেটিসের এতো ঝুঁকি থাকার পরেও যতো মানুষ এই রোগে আক্রান্ত তাদের অর্ধেকেরও বেশি এই রোগটি সম্পর্কে সচেতন নয়। তবে জীবন যাপনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম নীতি মেনে চললে অনেক ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।


ডায়াবিটিসে আক্রান্ত হলে নিয়ম মানার সতর্কতা তো রয়েছেই, তার সঙ্গে রয়েছে ইনসুলিনের খামখেয়ালিপনা নিয়েও চিন্তা। টাইপ ১ ডায়াবিটিসে ভুগলে ভয়–ভীতি করে কোনো লাভ নেই, কারণ তাদের শরীরে ইনসুলিন তৈরি হয় না বলে গোড়া থেকেই ইনজেকশন নিতে হয়৷ তবে এ তো মাত্র ৫–১০ শতাংশ রোগীর গল্প৷ ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে ৯০–৯৫ শতাংশেরও বেশি ভোগেন টাইপ ২ বা অ্যাডাল্ট অনসেট ডায়াবিটিসে৷


মধ্য বয়সের আগে–পরে রোগ হলে রোগের পর্যায়ের উপর নির্ভর করে প্রথম দু’–এক বছর ডায়েট–লাইফস্টাইল মেনে তাকে ভাল ভাবে বশে রাখা যায়। তারপর ওষুধ খেতে হয়৷ তার ৫–১০ বা ১৫ বছর পরে আসরে নামে ইনসুলিন। এখানে কারও কিছু করার নেই৷ চিন্তারও কিছু নেই৷ কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বোঝেন না। তারা ভাবেন ইনসুলিন শুরু হয়েছে মানেই ডায়াবিটিস খারাপ পর্যায়ে চলে গেছে। কেউ ভাবেন এতে আসক্তি হয়। কারো ভয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার। কেউ আবার ইনসুলিন নিচ্ছেন বলে নিয়ম–কানুন ভুলে সব কিছু খেতে শুরু করেন। কারণ তাদের ধারণা ইনসুলিন শুরু হয়ে গেলে আর খাবারের নিয়ম মানার দরকার নেই। এ সবই ভ্রান্ত ধারণা৷


ডায়েট, ব্যায়াম ও ওষুধের নিয়ম মানার পরও যখন আর প্যানক্রিয়াস থেকে পর্যাপ্ত ইনসুলিন বেরয় না, তখন বাইরে থেকে ইনসুলিন দিয়ে রক্তে সুগারের মাত্রা কমাতে হয়৷


ইনসুলিনে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না৷ প্রয়োজন সত্ত্বেও না নিলে বরং আয়ু কমে, প্রেশার–কোলেস্টেরল বাড়তে পারে, হার্ট, কিডনি থেকে শরীরের সব প্রত্যঙ্গই খারাপ হতে শুরু করে৷ অতএব, ডাক্তার বললে, নির্দ্বিধায় শুরু করুন৷


ইনসুলিন নিলেও খাবারে নিয়ন্ত্রণ রাখা দরকার। কারণ ইনসুলিনে সুগার কমে, ওজন তো আর কমে না ডায়াবেটিস থাকলে এমনিতেই হাই প্রেশার–কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের চান্স থাকে। ওজন বাড়লে সে চান্স আরও বেড়ে যায়। বেশি প্রোটিন খেলে কিডনি খারাপ হয় দ্রুত। অতএব ইনসুলিন নিন বা ওষুধ খান, খেতে হবে লো–ক্যালোরির সুষম ও ফাইবারযুক্ত খাবার।


ইনসুলিন নিলে দু’–এক কেজি ওজন বাড়ে। শুয়েবসে থাকলে তা আরও বেড়ে যায়৷ তার হাত ধরে বাড়ে রোগের জটিলতা। কাজেই নিয়মিত ব্যায়াম করে শরীর একেবারে ছিপছিপে রাখা দরকার।


অনেক সময় পর্যাপ্ত ইনসুলিন নেওয়া সত্ত্বেও সুগার ঠিক ভাবে কমে না, অর্থাৎ ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয়। তখন ভাল করে ব্যায়াম করলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ম্যাজিকের মতো কাজ হয়।


ইনসুলিন নিলেও নিয়মে শিথিল হবেন না।


ইনসুলিন শুরু করলে আর বন্ধ করা যায় না, এমন নয় সব সময়৷ ডায়াবেটিক রোগী হঠাৎ বড় অসুখে পড়লে বা গর্ভাবস্থায় যত দিন না সমস্যা মিটছে তত দিন ইনসুলিন লাগে। তার পর সচরাচর লাগে না। বাকি ক্ষেত্রে সত্যিই এটা সারা জীবনের বিষয়৷ তবে তা রোগীর ভাল থাকার স্বার্থেই।


বাড়িতে ফ্রিজ না থাকলেও ক্ষতি নেই। গরমকালে মাটির পাত্রে জল নিয়ে তার মধ্যে ইনসুলিনের বাক্স রাখুন। শীতে তাও লাগবে না। ঘরের তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রির কম হলে ২৫–৩০ দিন এমনিই তা ভাল থাকবে। ইনসুলিন ডিপ ফ্রিজে রাখা উচিত নয়।


টাইপ ১ ও জেস্টেশনাল ডায়াবিটিসে (গর্ভাবস্থায় যে ধরনের ডায়াবিটিস হয়) সুগার ওঠা–নামা করতে পারে বলে ঘরে গ্লুকোমিটার রাখা দরকার। টাইপ ২–র ক্ষেত্রে সব সময় তা লাগে না।


ইনসুলিন দেওয়ার সূচ চোখে প্রায় দেখাই যায় না। পেটে বা থাইতে ইনজেকশন দেয়ার সময়ও কিছু বোঝা যায় না। অতএব ভয়ের কিছু নেই।


নিয়ম মেনে ইনসুলিন নিলে আচমকা সুগার খুব কমে যায় না। কমলেও তা খুবই ক্ষণস্থায়ী৷ ৩–৪ চামচ গ্লুকোজ বা ২–৩টি লজেন্স খেলেই ঠিক হয়ে যায়৷ তবে চকোলেট জাতীয় কিছু এ সময় না খাওয়াই ভাল। কারণ চকোলেটে প্রচুর ফ্যাট থাকে বলে গ্লুকোজ রক্তে মিশতে একটু বেশি সময় নেয়, যা এই সময় হওয়া উচিত নয়। সূত্র: আনন্দবাজার


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com