ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে এক গ্রামে অজ্ঞাত রোগে একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যু নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণে হয়েছে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) রবিবার পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
ওই এলাকায় গবেষক দলের সরেজমিন তদন্ত এবং রোগের নমুনা পরীক্ষার পর এ তথ্য জানালেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইইডিসিআর, আইসিডিডিআর,বি ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ উদ্যোগে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পরিচালিত ডিজিজ সার্ভিল্যান্স ২৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুর ঘটনায় অনুসন্ধান করেছে। এই তদন্ত দল ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতাল, রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় তদন্তকাজ পরিচালনা করে।
এ সময়ে তদন্ত দলটি হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী ও মৃত ব্যক্তিদের পরিবারবর্গ, প্রতিবেশী, গ্রামবাসীদের কাছ থেকে তথ্য উপাত্ত ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নমুনা সংগ্রহ করে।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে বালিয়াডাঙ্গীর মরিচপাড়া গ্রামে আবু তাহের (৫৫), তার জামাতা হাবিবুর রহমান (৩৫), স্ত্রী হোসনে আরা (৪৫), দুই ছেলে ইউসুফ আলী (৩০) ও মেহেদী হাসানের (২৭) মৃত্যু হলে দেখা দেয় আতঙ্ক। মৃতদের বাড়ি থেকে আশপাশের এক কিলোমিটারে জনসাধারণের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করে উপজেলা প্রশাসন; অজ্ঞাত রোগের আতঙ্কে বন্ধ করে দেয়া হয় দুটি বিদ্যালয়ও।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রোগের কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, মৃত ব্যক্তিদের সকলের জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি ও মস্তিষ্কে ইনফেকশনের (এনসেফালাইটিস) উপসর্গ ছিল। মৃত ব্যক্তিদের মধ্যে হতে একজনের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় এবং উক্ত নমুনায় নিপা ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়।
আইইডিসিআর বলেছে, উপরোক্ত আউটব্রেক ইনভেস্টিগেশনে প্রথম মৃত ব্যক্তির খেঁজুরের কাঁচা রস পান করার সুনির্দিষ্ট ইতিহাস না পাওয়া গেলেও অন্যান্য মৃত ব্যক্তিগণ প্রথম মৃত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে আক্রান্ত হয়েছিল বলে আইইডিসিআর ধারণা করছে।
জীবিত সন্দেহাভাজন রোগীদের রক্তে নিপা ভাইরাসের উপস্থিতি না পেলেও বিভিন্ন সময়ে মৃত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করে তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর।
বিজ্ঞপ্তির বক্তব্য অনুযায়ী, সাধারণত বাদুর নিপাহ ভাইরাসের বাহক। এই প্রাণী খেজুরের কাঁচা রসপান করার মাধ্যমে সেখানে নিপাহ ভাইরাস ছড়ায়। এতে খেজুরের কাঁচা রস সংক্রমিত হয়ে যায়। এই কাঁচা রস কেউ পান করলে তিনি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হন। এরপর এই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়ায়।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আইইডিসিআর সর্বসাধারণকে খেজুরের কাঁচারস পানে বিরত থাকার পরামর্শ দিচ্ছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মী ও পরিবারের সদস্যদেরও নিপাহ সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা যেমন মাস্ক ও গ্লাভস পরিধান করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সেবাদানের পরামর্শ দিয়েছে।
এছাড়াও আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পর হাত সাবান ও পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা ও এ রকম রোগের ক্ষেত্রে রোগীদের সম্পূর্ণ পৃথক স্থানে রাখা ও পৃথক স্থানে সেবা দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছে।
আইইডিসিআর বলেছে, মৃতরোগীর লালা/রক্ত/মল/মূত্রের সরাসরি সংস্পর্শে অন্য কেউ যেন না আসে। মাস্ক ও গ্লাভস পরে মৃতদেহ গোসল করাতে হবে। যিনি/ যারা গোসল করাবেন, তিনি/তারা মৃতদেহ গোসল করাবার পরে নিজে/তারা সাবান দিয়ে গোসল করে ধোয়া কাপড় পরবেন।
বিবার্তা/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]