শিরোনাম
শিশুর পেটে গ্যাস হলে করণীয়
প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১৪:০৯
শিশুর পেটে গ্যাস হলে করণীয়
মডেল: সাবিলা সারলিজ সাজ্জাদ
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বড়দের তুলনায় শিশুদের শরীর অনেকটাই সংবেদনশীল। বাচ্চাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বড়দের তুলনায় কম হয়। তাই তাদের খুব সহজেই নানা রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। জীবাণুর সংক্রমণ ছাড়াও খাবার, পরিবেশ ইত্যাদি নানা কারণে এসব রোগব্যাধি হতে পারে। যার কারণে খুব দ্রুততারা জীবাণু, ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। শিশুদের সাধারণ ঠাণ্ডা, জ্বর, কাশি হলে সহজে বোঝা যায়।


কিন্তু বদহজম হলে তা বোঝা কিছুটা কষ্টকর। বড়দের মত শিশুরা তাদের শারীরিক সমস্যার কথা ভাষা প্রকাশ করতে পারে না। পা টান টান করে কান্না করা, পেট শক্ত হয়ে যাওয়া, খাওয়ার পর কান্না করা, অতিরিক্ত নড়াচড়া ইত্যাদি লক্ষণ শিশুরা প্রকাশ করে থাকে।


ছোট্ট শিশুরা পেটে গ্যাসের সমস্যায় ভোগে বেশি। শিশুরা মায়ের দুধ বা ফিডারের দুধ খাওয়ার সময়, এমনকি অতিরিক্ত কান্না করার সময় তাদের পেটে প্রচুর বাতাসও চলে যায়। আর তাই শিশুর পেটে গ্যাস হয় অনেক। নবজাতক শিশুদের দিনে ১৩-২১ বার পেট থেকে গ্যাস নির্গত হওয়াটা বেশ স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এই অতিরিক্ত গ্যাস পেটে থাকার কারণে তা শিশুর শরীরে বেশ পীড়াদায়ক হয়ে উঠে। গ্যাসের সমস্যার কারণে শিশু অনবরত কাঁদে। এছাড়া তার পেটে শূল বেদনার আশঙ্কাও থাকে তখন।


গ্যাসজনিত ব্যাথা


শিশুদের নানা রকমের খাবার খাওয়ানো শুরু করলে গ্যাসজনিত ব্যাথা একটা বেশ প্রচলিত সমস্যা হিসেবে দেখা দেয়। এছাড়া পাকস্থলীর পরিপাকনালীতে গাট মাইক্রোবায়োম নামক ব্যাক্টেরিয়াল কলোনি গড়ে উঠা সম্পূর্ণ হবার আগে (ভয় পাবেন না, এরা উপকারী ব্যাকটেরিয়া) এ সমস্যা দেখা দিতে পারে যা গাট ইমম্যাচিউরিটি নামে পরিচিত।


এ ধরনের ব্যাথার ক্ষেত্রে শিশুর বুকে ও পিঠে হাত দিয়ে মালিশ করলে, তলপেটের দিকে চেপে ধরলে আরামবোধ হয়। তবে ব্যাথা প্রকট হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দিতে হবে।


কিভাবে বুঝবেন শিশুর পেটে গ্যাস আছে


যখন শিশুর পেটে গ্যাস আটকে থাকে, তখন কয়েকটি উপসর্গ দেখা দেয় তার শরীরে, যা দেখে বুঝতে পারবেন তার পেটে গ্যাস আছে-
* ঢেকুর দিলে
* অস্থিরতা দেখা দিলে
* তার পেট ফোলা থাকলে
* শিশু কান্না করতে থাকলে
* বায়ু ত্যাগ করলে
* তলপেট শক্ত হয়ে থাকলে
* শিশু তার দুই পা উপরের দিকে তুলে রাখলে


শিশুর পেটে গ্যাস হওয়ার আরো কারণ


মায়ের দুধ বা ফর্মুলার দুধের মাধ্যমে বাই প্রডাক্ট হিসেবেই শিশুর পেটে গ্যাস চলে যায়। তবে এরই মধ্যে বাইরে থেকে আরো গ্যাস পেটে জমা হলে তা শিশুর পেটে ব্যথা সৃষ্টি করে। আর সমস্যাটা যেহেতু বুঝাতে পারে না, তাই সেসময় অনবরত কান্না করে শিশু। যেসব কারণে শিশুর পেটে গ্যাস জমা হয়-


* শিশু মায়ের স্তনে বা দুধের বোতলে সঠিকভাবে মুখ দিয়ে দুধ পান করতে না পারলে তার পেটে অতিরিক্ত বাতাস ঢুকে পড়ে।


* যদি শিশু প্রচুর কান্না করে, তাহলে তার পেটে আরো গ্যাস ঢুকে পড়ে। আর এভাবে শিশু যতো কান্না করে তার পেটে চক্রাকারে ততো গ্যাস জমা হয়।


* শিশুর মা যেসব খাবার খায়, তাতে গ্যাস উৎপাদনের উপাদান থাকলে তা শিশুর পেটে গ্যাস তৈরি করে।


* অতিরিক্ত দুধ পান করানোর কারণেও শিশুর পেটে গ্যাস জমা হয়।


* এছাড়া হরমোনজনিত সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, কার্বোহাইড্রেট খাওয়া এসব কারণেও শিশুর পেটে গ্যাস হয়।


শিশুর মায়ের যেসব খাবার খাওয়া উচিৎ না


নবজাত শিশু বা দুধ পান করানো শিশুর মায়েদের উচিৎ তাদের খাওয়া কোনো খাবার যেন শিশুর পেটে গ্যাস জমা না করে, সে দিকে খেয়াল রাখা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ক্ষতির কারণ হতে পারে দুধ ও দুধজাত সব খাবার। তাই মায়েদের উচিৎ দুধ, পনির, দই, পুডিং, আইসক্রিম, মাখন, ঘি সহ দুধ থেকে তৈরি খাবার বর্জন করা। এছাড়া ডিম, মাছ, গম, শিম, ফুলকপি, ব্রকোলি, মসলাদার মাংস, চিংড়ি, বাদাম এসব খাবারও শিশুর পেটে গ্যাস তৈরি করতে পারে। তাই এসব খাবার না খাওয়া ভালো।


শিশুর পেটের গ্যাস দূর করার উপায়


গ্যাসের কারণে শিশুর পেটের ব্যথা দূর করে স্বস্তি দিতে হলে কিছু উপায় অবলম্বন করতে হবে। যেমন-


* দুধ পানের পদ্ধতি সঠিক রাখা


শিশুকে মায়ের দুধ বা ফিডারে দুধ পান করানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন শিশুর মাথা তার পেটের চেয়ে কিছুটা উপরের দিকে থাকে। এতে করে দুধ সহজে শিশুর পেটে যায় ও পেট থেকে বাতাস বের হয়ে যায়।


* পিঠে চাপড় দেয়া


শিশুর পেট থেকে গ্যাস বের করার সহজ একটি উপায় হলো দুধ পান করানোর সময় ও দুধ পান শেষে তার পিঠে আলতো করে চাপড় দিতে থাকা। এতে করে শিশু ঢেকুর দিলে তার পেট থেকে গ্যাস বের হয়ে যাবে। শিশু ঢেকুর না দিলে তাকে চিৎ করে কয়েক মিনিট শুইয়ে রাখার পর আবারো পিঠে আলতো চাপড় দিয়ে তাকে ঢেকুর দেয়ার চেষ্টা করাতে হবে।


* পেটে ম্যাসাজ করা


শিশুর পেট আলতো করে ম্যাসাজ করা হলে তার পেট থেকে গ্যাস বের হওয়া ত্বরান্বিত হবে। শিশুর শরীর কুসুম গরম সরিষার তেল দিয়ে ম্যাসাজ করা ও কুসুম গরম পানিতে তাকে গোসল করানো হলেও তার গ্যাসের সমস্যা কমবে।


* বাইসাইকেল চিকিৎসা


শিশুকে চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় তার দুই পা ধরে বাইসাইলে চালানোর ভঙ্গিতে নাড়াচাড়া করতে হবে। এতে তার পেট থেকে গ্যাস দূর হওয়ার সুযোগ পাবে।


* কান্না থামাতে হবে


শিশু যতো কাঁদবে, তার মুখ দিয়ে পেটে ততোই গ্যাস ঢুকে যাবে। তাই শিশুর কান্না দ্রুত থামানোর চেষ্টা করতে হবে খেলনা দেখিয়ে বা শব্দ করে।


* প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয়া


চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শিশুর পেটের গ্যাস কমাতে ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) জাতীয় কিছু ওষুধ সেবন করাতে পারেন শিশুকে।


মনে রাখতে হবে
* শিশুর চার মাস বয়স পর্যন্ত তার শূল বেদনা থাকতে পারে। আর তাই এ সময় শিশু বেশি বাতাস পেটে নেয় বলে তার গ্যাসের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
* শিশুর পায়খানা না হলে, পায়খানার সঙ্গে রক্ত দেখা দিলে, বমি হলে তাকে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।
* শিশু যদি বেশি অস্থিরতা করে, তাকে থামাতে কষ্ট হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিৎ।
* শিশুর গায়ে ১০০ ডিগ্রির বেশি জ্বর থাকলে, তার বয়স ৩ মাসের কম হলে ধরে নিতে হবে তার শরীরে ইনফেকশন আছে। তাই তাকে চিকিৎসকের কাছে নেয়া জরুরি।


এছাড়াও


কোষ্ঠকাঠিন্য


যেসব শিশু মাতৃদুগ্ধের পাশাপাশি সদ্য অন্য কঠিন খাবার খেতে শুরু করেছে তাদের পেটে ব্যাথার অন্যতম কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য। দুই কিংবা তিনদিন ধরে ঠিকমত পায়খানা না হলে তা পেটের ভেতর জমে থেকে ব্যথার সৃষ্টি করে। এজন্য শিশুকে নরম খাবার দিতে হবে। অবস্থা জটিল হলে শক্ত খাবারের পরিবর্তে তরলজাতীয় খাবার যেমন সাগুদানা, মাতৃদুগ্ধ বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। এছাড়া কিছু ব্যায়াম করানো যেতে পারে যেমন সাইকেলের মত শিশুর পা দুটোকে চালনা করা।


খাবার কিংবা দুধে অ্যালার্জি


শিশুর কোন খাবারে অ্যালার্জি থাকলে তা খাওয়ানোর ফলে পেট ব্যাথা, ডায়রিয়া, বমি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে গরুর দুধ বা গুড়োদুধের ল্যাক্টজেনের প্রতি অ্যালার্জি থেকে থাকে। অ্যালার্জি আছে বিষয়টা সন্দেহ হলে বা নিশ্চিত হলে তা খাওয়ানো বন্ধ করে দেয়া উচিত।


এধরনের জটিলতায় ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত অবশ্যই।


ইনফেকশন


পাকস্থলীতে নানা ধরনের ব্যাক্টেরিয়া বা ভাইরাসজনিত কারণে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। এগুলোর মধ্যে আছে রোটাভাইরাস যা পেটব্যাথার সাথে ডায়রিয়ার কারণ। এছাড়া স্ট্রেস্পটোকক্কাসনামক ব্যাকটেরিয়া, অ্যাডেনোভাইরাস, বটুলিজম এসবের দ্বারাও শিশু পেটব্যাথা ও পেটের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। ইনফেকশনজনিত সমস্যায় বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসায় এসব ইনফেকশন পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়।


মোশন সিকনেস বা ভ্রমণজনিত অসুস্থতা


অনেক শিশুর মাঝেই ভ্রমণের ফলে খাওয়ায় অরুচি, বমিভাব, পেটেব্যাথা এসব লক্ষণ দেখা দেয়। এধরনের সমস্যায় শিশুকে ভ্রমণের চাপ কাটিয়ে উঠার জন্য সময় দিতে হবে, এছাড়া খেয়াল রাখতে হবে যাতে একেবারে খালি পেটে কোথাও ভ্রমণ করা না হয়।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com