চাই সচেতনতা, চাই এইডস মুক্ত সুস্থ জীবন
প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:১৬
চাই সচেতনতা, চাই এইডস মুক্ত সুস্থ জীবন
হাবিবুর রহমান রোমেল
প্রিন্ট অ-অ+

এইচআইভি (HIV, Human Immunodeficiency Virus, হিউম্যান ইমিউনোডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস) বা মানব দেহে প্রতিরক্ষা অভাবসৃষ্টিকারী লেন্টিভাইরাস (Lentivirus) গোত্রের অন্তর্গত এক ধরনের ভাইরাস যার সংক্রমণে মানবদেহে এইডস (AIDS, Acquired immunodeficiency syndrome, অ্যাকোয়ার্ড ইমিউনোডেফিশিয়েন্সি সিনড্রোম) বা প্রতিরক্ষা তথা অনাক্রম্যতা হ্রাস করে রোগ সৃষ্টি করে।


১৯৮১ সালে বিশ্বের অন্যতম সেরা নগর আমেরিকার লসএঞ্জেলসে সর্বপ্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয়। ১৯৮৪ সালে এশিয়ায় থাইল্যান্ডে প্রথম এইডস রোগী দেখা যায় এবং মিয়ানমার ও ভারতীয় উপমহাদেশে ১৯৮৬ সালের এই রোগ ছড়াতে থাকে।


বাংলাদেশে সর্বপ্রথম এইডস শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। এরপর প্রতিবছরই শনাক্তের হার বাড়তে থাকে।


জাতিসংঘের এইচআইভি-এইডস বিষয়ক সংস্থা ইউনিএইডস এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে বর্তমানে এইডস আক্রান্তের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ০.১ শতাংশ। যা সংখ্যায় ১৪ হাজারের বেশি। আর চিকিৎসার আওতায় আনা গেছে মাত্র আট হাজার রোগীকে।


এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রথম রোগী মারা যায় ২০০০ সালে। এখন পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ১ হাজার ৫৮৮ জনের।


স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যমতে, নভেম্বর ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ১০০ জন এইচআইভি সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। অধিদফতরের তথ্যে দেখা যাচ্ছে, রোগী শনাক্তের দিক থেকে ঢাকার পরে রয়েছে রাজশাহী। তারপর চট্টগ্রাম বিভাগ। তবে সম্প্রতি সিরাজগঞ্জে অস্বাভাবিক হারে এইডস রোগী শনাক্ত হচ্ছে। গত এক বছরে ওইখানে ১৪৪ এইডস রোগীকে শনাক্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে ৯৮ শতাংশই ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণ করে।


এইডস বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, শনাক্ত হওয়া এইডস আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা না নেওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। এ সমস্যা মোকাবিলায় পরীক্ষা ও চিকিৎসাসেবার পরিধি বাড়াতে হবে।


বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এইচআইভি ছড়ায় পুরুষ ও নারীর শারীরিক সম্পর্কের মধ্য দিয়ে। যৌনকর্মী ছাড়াও বিবাহিতদের মাধ্যমেও এ রোগ ছড়িয়েছে। সংক্রামিতদের বেশিরভাগ যৌনকর্মী, সমকামী, হিজড়া, যক্ষ্মা রোগী, প্রবাসী শ্রমিক, হাসপাতালে প্রসব সেবা নিতে আসা মা ও রোহিঙ্গা শরণার্থী। এখন সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ রোগ শনাক্ত হচ্ছে।


ইউএনএইডস এক প্রতিবেদন বলেছে, সাধারণ মানুষের চেয়ে যৌনকর্মীদের এইচআইভি/এইডসের ঝুঁকি বহুগুণ বেশি। বাংলাদেশে এক লাখের বেশি নারী যৌনকর্মী আছে। তাদের মধ্যে কিশোরীদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। প্রয়োজনের সময় তাদের অনেকে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন।


বাংলাদেশে ১৩ কেন্দ্রে এইচআইভি/এইডসের চিকিৎসার থাকলেও শুধু রোগী ভর্তি করে চিকিৎসা করা হয় রাজধানীর সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে। এই হাসপাতালে জ্বর, মাথাব্যথা, ফুসকুড়ি, গলা ব্যথা ও অন্যান্য জটিল রোগের লক্ষণ নিয়ে আসা ১০ শতাংশের এইচআইভি/এইডস শনাক্ত হয়েছে। এই কেন্দ্রে শনাক্ত হওয়া রোগীদের ৬৬ শতাংশই বিদেশ থেকে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এইডস প্রতিরোধ কর্মসূচির তথ্যমতে, নতুন শনাক্তদের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ অভিবাসী অথবা তাদের পরিবারের সদস্যরা। তবে আক্রান্ত হয়ে দেশে ফিরে আসা এইচআইভি/এইডস শনাক্তে বিমানবন্দরে কোনো ব্যবস্থাই নেই।


২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সংক্রামক ব্যাধি নিয়ে হাসপাতালে আসা ১ হাজার ৫৪২ সন্দেহভাজন ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তাদের মধ্যে ১০ শতাংশের এইচআইভি/এইডস শনাক্ত হয়েছে। ২০২২ সালে আক্রান্তের হার ছিল ৬ শতাংশ।


এইচআইভি/এইডস আক্রান্তদের ৬৬ শতাংশই বিদেশ ফেরত। ২১ শতাংশ সমকামী। ১২ শতাংশ যক্ষ্মার রোগী। ৬ শতাংশ রোহিঙ্গা। ৫ শতাংশ ব্যক্তির মা-বাবা থেকে এইচআইভি হয়েছে। অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের চিকিৎসকরা বলছেন, এইচআইভি পজিটিভ ৯৮ শতাংশ মা ব্যাধিহীন সন্তান জন্ম দিতে পারেন।


তাই মরণব্যাধি এইচআইভি/এইডস সংক্রামন থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে রক্ত গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সুরক্ষামূলক স্বাভাবিক যৌন আচরণ করতে হবে। যৌনকর্মী, সমকামী, হিজড়াদের সাথে যৌন সম্পর্ক থেকে বিরত থাকতে হবে। সকল প্রকার মাদক পরিহার করতে হবে। বিশেষকরে ইনজেকশনের মাধ্যমে শিরায় মাদক গ্রহণ করা থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে। সুস্থ, সুন্দর ও স্বাভাবিক জীবনের জন্য এবং এইচআইভি/এইডস থেকে বাঁচতে ও বাঁচাতে উপরোল্লিখিত কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকুন এবং বিরত রাখুন।


বিবার্তা/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com