জটিল রোগের ক্ষেত্রে আস্থার সংকটে রোগীরা বিদেশমুখী: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৩, ১৬:১৩
জটিল রোগের ক্ষেত্রে আস্থার সংকটে রোগীরা বিদেশমুখী: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে প্রতি মাসে দুই থেকে আড়াই কোটি মানুষ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। বছরে তা প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি। এরপরেও অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যায়। জটিল রোগের ক্ষেত্রে আস্থার সংকটের কারণে এসব রোগী বিদেশমুখী হয়।


২৭ অক্টোবর, শুক্রবার রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে ১৭তম আন্তর্জাতিক সার্জিক্যাল কংগ্রেস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।


স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতি মাসে প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি মানুষ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। বছরে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি মানুষ সেবা নেয়। করোনাকালে সব মানুষ দেশেই চিকিৎসা নিয়েছে। তখন তো কেউ বাইরে যেতে পারেনি। তবু ঘুরেফিরে রোগীদের বিদেশ যাওয়া প্রসঙ্গ সামনে আসে। তারা শুধু শপিং করতে যায় না, চিকিৎসা নিতেও যায়। আমাদের দেশে ক্যানসার, কিডনি, হার্টের মতো জটিল রোগে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। আমাদের স্বীকার করতে হবে, এ রোগগুলো চিকিৎসায় এখনো পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা আমাদের দেশে তৈরি হয়নি। আমরা যদি এসব রোগ চিকিৎসার জন্য আধুনিক সুযোগ তৈরি না করি, তাহলে রোগীদের বিদেশ যাত্রা থামানো যাবে না।


আস্থার সংকট রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের রোগীদের আস্থার সংকট রয়েছে। আমাদের আস্থার পরিবেশটি তৈরি করতে হবে। এটি তৈরি করতে পারলে রোগীরা তাদের জীবন ও শরীর আমাদের হাতে তুলে দেবে। তারা তাদের শরীর কাটাছেঁড়া করার জন্য আমাদের কাছে আসবে। তারা যদি ভয় পায়, তাহলে দেশে চিকিৎসা করবে না। মানুষ চিকিৎসার জন্য সবকিছু করতে রাজি থাকে। আস্থার সংকট থাকলে কারও যদি সামর্থ্য থাকে, তাহলে সে দেশের বাইরে যাবেই।


তবে এ আস্থার পরিবেশে তৈরিতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চান। তিনি করোনাকালে সম্মিলিতভাবে কাজ করা ও রোগীদের সব রোগের সেবা দেওয়ার কথা স্মরণ করেন। মন্ত্রী বলেন, গড় আয়ুতে আমরা ভারতকে পেছনে ফেলেছি। আমেরিকাকে ছুঁই ছুঁই অবস্থা। এটা তো এমনিতে হয়ে যায়নি। খাদ্যসহ সবখাতে উন্নয়ন ও কাজের মাধ্যমেই এটি সম্ভব হয়েছে। স্বাধীনতার পর আমাদের দেশে খুবই অল্পসংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী ছিল। দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। বর্তমানে দেশে প্রায় এক লাখ ২০ হাজারের মতো চিকিৎসক রয়েছে। নার্সের সংখ্যাও বেড়ে প্রায় ২০ গুণ। এক সময় কোনো ওষুধ দেশে উৎপাদন হতো না। এখন শতকরা ৯৯ শতাংশ নিজেরাই জোগান দিচ্ছি। এমনকি বাইরে রফতানি করছি।


জাহিদ মালেক বলেন, আমরা প্রাইমারি হেলথ কেয়ারে উন্নয়ন সাধন করেছি। ১৪ হাজার কমিউনিটি কিনিক এবং আরও চার হাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। সব উপজেলা হাসপাতাল ৫০ বেড হয়েছে। এখন আমরা ১০০ বেডের করার কাজ করছি। বেশিরভাগ জেলা হাসপাতালে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে আমাদের সব ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জাম রয়েছে। তবে এসব চালানোর জন্য পর্যাপ্ত লোকবল নেই। তা তৈরি করতে হবে। আমরা আরও উন্নত করতে চাই। একইসঙ্গে দক্ষ জনবল তৈরি করতে চাই।


চিকিৎসকদের বিদেশ ভ্রমণ সহজ করার দাবি প্রসঙ্গে জাহিদ মালেক বলেন, করোনাকালের পর বৈদেশিক মুদ্রার কথা বিবেচনা করে, বাইরে যাওয়ার বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। প্রয়োজনের বাইরে যাওয়া বিষয়ে সরকারের কোনো বাধা নেই। আমরা চিকিৎসা ও ট্রেনিংয়ের জন্য যেতে দিই। শিক্ষাখাতে কখনো বাধা দেওয়া হয় না। কিন্তু ব্যক্তিগত ছুটি বা বেড়ানোর বিষয়ে অনুমতি কিছুটা কম দিই।


এসময় চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ বা কনফারেন্সের উদ্দেশে যাবেন তখন তৃতীয় পক্ষের থেকে অর্থ ব্যবস্থা না করে আয়োজকদের থেকে তা ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।


বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ২৫ বছর আগে বিএসএমএমইউ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে সকল ধরনের সার্জারি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। একইসঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও তৈরি করা হচ্ছে। তারপরেও কিছু মানুষ দেশের বাইরে যাচ্ছে। এরা হচ্ছে সেই জনগোষ্ঠী যারা বিবাহবার্ষিকীর গিফট কিনতেও দেশের বাইরে যায়। তাদের আটকানো সম্ভব না৷


সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশেই সব চিকিৎসা নিশ্চিতে আমরা সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতাল চালু করেছি। কোরিয়ান সরকারের সহযোগিতায় স্থাপিত এই হাসপাতালে সেবা কার্যক্রম চলমান আছে। তবে জনবল সংকটের কারণে আমরা সকল সেবা চালু করতে পারছি না। অর্থ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ আটকে যাওয়ায় আমরা জনবল নিয়োগ করতে পারছি না।


অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মুহাম্মদ খুরশীদ আলম বাংলাদেশে সার্জিক্যাল সেবায় অবদান রাখা চিকিৎসকদের স্মরণ করেন। একইসঙ্গে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশের সার্জারি খাত অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি সদ্য প্রয়াত মেডিসিনের কিংবদন্তি চিকিৎসক ও গবেষক অধ্যাপক ডা. রিদওয়ান আহমেদের অবদান স্মরণ করেন এবং রুহের মাগফেরাত কামনা করেন।


বিবার্তা/রিয়াদ/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com