ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ঢাকার দুই মেয়র ব্যর্থ: ড্যাব
প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৩, ১৫:৪০
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ঢাকার দুই মেয়র ব্যর্থ: ড্যাব
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ঢাকার দুই সিটির মেয়র ব্যর্থ বলে মনে করে চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। সেইসঙ্গে তাদের পদত্যাগ করা উচিত বলেও মনে করে সংগঠনটি। এ অবস্থায় ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে সারাদেশে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ এবং আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে চিকিৎসক সংগঠনটি।


১৩ জুলাই, বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সরকারে অব্যবস্থাপনা এবং করণীয় শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনটির নেতারা।


লিখিত বক্তব্যে ড্যাবের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুস সালাম বলেন, ডেঙ্গু নতুন রোগ নয়। এটা প্রতিকারে সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। তারা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় সরকার ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দিক থেকে তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে ডেঙ্গু পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে।


সমন্বয়হীনতার অভিযোগ তুলে বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা, যথাযথ পরিকল্পনা, পূর্বপ্রস্তুতি ও কার্যকর বাস্তবায়নে ঘাটতির কারণে সারাদেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। বড় সিটি করপোরেশনগুলোর কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং বিক্ষিপ্তভাবে অকার্যকর কার্যক্রমে ডেঙ্গু প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।


ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কর্মকাণ্ডের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, সিটি করপোরেশনের জরুরি বৈঠক থেকে জানা যায়, গত ৬ জুলাই পর্যন্ত এক মাসে মাত্র ১ হাজার ২৯০টি জায়গায় মশার ওষুধ ছিটানো হয়েছে। এডিস মশা যে শুধু মানুষের ঘরের ফুলের টবে কিংবা ছাদে জমে থাকা পরিষ্কার পানিতেই হয়, তা নয়। বিভিন্ন পাবলিক প্লেস এবং বিশেষত সরকারি-বেসরকারি নির্মাণাধীন ভবন ও স্থাপনায় পড়ে থাকা বোতল, প্যাকেট, ডাবের খোসা, কনটেইনার, ড্রাম, ব্যারেল, পরিত্যক্ত টায়ার ও ইটের গর্ত ইত্যাদিতে জমে থাকা পানিতেও জন্মাতে পারে।


ড্যাবের সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার জ্যেষ্ঠ কীটতত্ত্ববিদ বি এন নাগপাল ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে জানিয়েছেন, নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলো এডিস মশার অন্যতম বড় উৎস। মশা উৎপাদনের এসব ক্ষেত্র ধ্বংস করতে পারলে ডেঙ্গুর প্রকোপ ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব। নাগপালের সূত্রধরে ড্যাব জানিয়েছে, পরিত্যক্ত টায়ার কিংবা নির্মাণ প্রকল্পে যেন এডিস মশা জন্মাতে না পারে, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব কিন্তু সিটি করপোরেশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরের।


জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু প্রতিরোধে উদ্যোগ না থাকার অভিযোগ করে অধ্যাপক সালাম বলেন, সরকারি হিসাবেই ৫৮ জেলায় ডেঙ্গু ছড়িয়েছে। এরপরও ১২টি সিটি করপোরেশন এলাকা ছাড়া জেলা- উপজেলা শহর ও গ্রামে মশকনিধন কার্যক্রম খুব একটা চোখে পড়ছে না। সিটি করপোরেশন এলাকায় মশা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা হলেও জনবল ও যন্ত্রপাতির অনেক ঘাটতি রয়েছে। তবে পৌর এলাকার পরিস্থিতি অনেকটাই নাজুক। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে মশক নিয়ন্ত্রণের কোনো কার্যক্রমই নেই। কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া সব ইউনিয়ন পরিষদই মশা নিয়ন্ত্রণের যন্ত্র, ওষুধ ও জনবলশূন্য।


সংবাদ সম্মেলনে ড্যাব সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রাশিদ বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাসজনিত রোগ। সরাসরি এর কোনো চিকিৎসা নেই। ভাইরাসজনিত রোগের সিমটমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ধরনের রোগে প্রতিরোধই সবচেয়ে উত্তম প্রক্রিয়া। তাই সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে কাজ করতে হবে। দুঃখজনকভাবে আমরা সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ দেখছি না। বরং তাদের সমন্বয়হীনতা ও অবহেলায় সারাদেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।


ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ড্যাবের পরামর্শ


ডেঙ্গু সব জায়গায় একবারে ছড়ায় না, কোনো কোনো অঞ্চলে প্রাদুর্ভাব বেশি থাকে। সময়মতো শুরুর ক্লাস্টারগুলোতে ডেঙ্গু দমনের যথাযথ পদক্ষেপ নিলে সারাদেশে সহজে ছড়াতে পারে না। তাই নিয়মিত কাজের পাশাপাশি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর ঠিকানার মাধ্যমে এ ধরনের ক্লাসটারগুলোকে শনাক্ত করে বাড়তি গুরুত্ব দেয়া জরুরি।


অবিলম্বে সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎসক-নার্স সংকট মোকাবেলার জন্য নার্সিং ইনস্টিটিউট ও মেডিকেল কলেজগুলোর শিক্ষার্থীদের কাজে লাগানো যেতে পারে।


ডেঙ্গুতে শিশুদের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি অল্পতেই মারাত্মক আকার ধারণ করে, তাই তাদের জন্য সরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এর জন্য ঢাকা শহরে কয়েকটি ফিল্ড হাসপাতাল তৈরি করা যেতে পারে।


অগস্ট সেপ্টেম্বরে পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। বাস্তবতা বিবেচনায় এখন থেকেই সারাদেশে এডিস মশার লার্ভা শনাক্ত এবং ধ্বংসের উদ্যোগ নিতে হবে।


ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করে সারাদেশে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ এবং আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবায় প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে।


পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশবিদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি করতে হবে। তারপর তাদের পরামর্শ নিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে।


সম্ভাব্য সংকট মোকাবেলায় চিকিৎসা অবকাঠামো প্রস্তুত এবং ২৪ ঘণ্টা ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য মনিটরিং সেল গঠন করতে হবে।


বিবার্তা/রিয়াদ/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com