শিরোনাম
গ্যাস্ট্রিক কমানোর ওষুধ থেকে হতে পারে মৃত্যু!
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯, ১৩:২১
গ্যাস্ট্রিক কমানোর ওষুধ থেকে হতে পারে মৃত্যু!
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

মাথাব্যথা, জ্বরজ্বর ভাবে কিংবা গ্যাস-অম্বল, এ সব সমস্যার জন্য এখন আর আমরা কেউ বোধহয় চিকিৎসকের পরামর্শ নিই না। মনে ভাবি, এ সব আমার কোনও অসুখ নাকি? একটা বড়ি খেলেই চাঙ্গা। বড়ি মিলে যাবে যে কোনও ওষুধের দোকানে। দোকানে গিয়ে শুধু সমস্যার কথাটা বলতে হবে তারপরেই দোকানি কম পক্ষে পাঁচ থেকে ছ'রকম ওষুধ এনে হাজির করবেন আর আপনি ইচ্ছে মতো একটা ওষুধ কিনে খাবেন। এ আর এমন কী?


তবে জানেন কী দীর্ঘ সময় ধরে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যখনতখন ওষুধের দোকান থেকে ওষুধ কিনে খেলে শরীরের উপর তার একটা দীর্ঘমেয়াদি কুপ্রভাব পড়ে?


ওমিপ্রাজোল গোত্রের ওষুধের ওপরে আমরা নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। যখনই পেটে কোন রকম অস্বস্তি লাগে তখনই গ্যাস্ট্রিকের এই ওষুধটি খেয়ে নেই। এই হার সব রকম মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এর কারণও রয়েছে, এই ওষুধটি অ্যাসিড বেরনোর পথ আটকে দেয় বলে আরাম পাওয়া যায়। কিন্তু এই ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহারের কুফলও রয়েছে।


গ্যাস-অম্বলের সমস্যায় আমরা খুঁজি চটজলদি সমাধান। তারই ফলে এই জাতীয় ওষুধের অপব্যবহার শুরু হয়েছে৷ এর মাশুল গুনতে হচ্ছে আমাদেরই। শরীরে এর প্রভাবে নানা ক্ষতি হতে পারে বলে শঙ্কা চিকিৎসকদেরও।


এই ওষুধ ব্যবহারের হার গ্রাম থেকে শহরে বেশি। বিজ্ঞানীদের মতে স্ট্রেস কম থাকা, কায়িক শ্রম করা ও ওজন কম থাকার কারণে গ্রামের মানুষের গ্যাসট্রিক শহুরে মানুষদের তুলনায় কম হয়৷ শহুরে মানুষও যদি জীবনযাপনের কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন, তবে ওষুধের প্রয়োজনও অনেকটাই কমে যাবে।


কোন কোন ক্ষেত্রে এই ওষুধের অপব্যবহার হচ্ছে-


* ব্যথার ওষুধে অম্বল হলেও ভরা পেটে দু’-চার দিন খেলে কোন সমস্যা হয় না৷ কিন্তু ব্যথার ওষুধের সঙ্গে গ্যাসট্রিক-অম্বলের ওষুধ খাওয়া এখন স্বভাবে দাঁড়িয়েছে৷ গ্যাস-অম্বলের প্রবণতা না থাকলে এই ওষুধ খাওয়া একেবারেই অপ্রয়োজনীয়।


* হঠাৎ অম্বলে সবচেয়ে ভাল কাজ করে লিকুইড জাতীয় ওষুধ৷ কিন্তু মানুষ খায় ট্যাবলেট-ক্যাপসুল৷ সে যতক্ষণে কাজ শুরু করে ততক্ষণে পানিটানি খেলে এমনিতেই অ্যাসিডিটি কমে যায়।


* অধিকাংশ অ্যান্টিবায়োটিকের সঙ্গে এই ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজন হয় না৷ তবুও বাড়তি সতর্কতায় আমরা এটা খেয়ে থাকি। কখনও কখনও চিকিৎসকরাও রোগীকে মানসিক আরাম দিতে এই ওষুধ দিয়ে থাকেন।


* গ্যাস-বদহজমের সঙ্গে অম্বল না থাকলে এর দরকার নেই৷ তাও এই ওষুধটি খাওয়ার চল হয়ে গেছে৷


* আলসার বা রিফ্লাক্স কমাতে ৬-৮ সপ্তাহ এই ওষুধ খাওয়ার নিয়ম৷ কিন্তু শুরু করার পর অনেকেই বছরের পর বছর খেয়ে যান৷ কখনও খান জীবনভর৷


* জীবনযাপনের অনিয়ম, খাবারে অনিয়ম, স্ট্রেস ইত্যাদি কারণে অনেকের অম্বল লেগে থাকে৷ তারা মূল সমস্যার সমাধান না করে এই ওষুধে নির্ভরশীল হয়ে যান৷


গ্যাসট্রিক-অম্বলের ওষুধের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে কি কি কুফল দেখা দিতে পারে তা জানা যাক-


* এই ওষুধটি বেশি পরিমাণে খেলে অপুষ্টি, রক্তাল্পতা, ভিটামিন বি১২–র ঘাটতি হতে পারে।


* কম বয়সে ডিমেনসিয়া বা চিন্তাভাবনার অসঙ্গতির সমস্যা দেখা দিচ্ছে আজকাল৷


* প্রকোপ বাড়ে অস্টিওপোরোসিস, ব্যথা-বেদনা ও হাড়গোড় ভাঙারও।


* নিয়মিত খেলে পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ কমে ক্ষতিকর জীবাণু সৃষ্টি হতে পারে। ডায়রিয়ার প্রকোপ বাড়ে। শয্যাশায়ী বয়স্ক মানুষের নিউমোনিয়ার আশঙ্কা বাড়েও।


চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ও চটজলদি স্বস্তি পেতে আমরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া আমরা যে সব ওষুধ খাই সেগুলো হল মাথা ব্যথার ওষুধ, জ্বরের ওষুধ, বিভিন্ন ব্যথার ওষুধ, গ্যাস-অম্বলের ওষুধ, আমাশয়ের ওষুধ, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হলে তার ওষুধ প্রভৃতি।


এ ছাড়াও দেখা গেছে, যে দোকানি হয়তো একটু হালকা ধরণের ওষুধ দিয়েছেন কিন্তু তাতে সমস্যার উপশম হচ্ছে না তাই দোকান থেকে কেউ আরো কড়া ওষুধ কিনে খাচ্ছেন।


আমরা অনেকেই হয়তো জ্বর কমাবার জন্য বিভিন্ন ওষুধের দোকান থেকে নিমেসুলিড বা নিমুলিড (Nimesulide) নামে ওষুধটি অনেকবার কিনে খেয়েছি। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এই ওষুধটি শিশুদের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। শুধুমাত্র চিকিৎসকের নির্দেশ অনুসারে এই ওষুধটা শিশুদের দেয়া যায়।


জ্বরের ওষুধ বেশি খেলে বিভিন্ন রক্তের সমস্যা বা পেটের সমস্যাও দেখা দেয়।


বেশিরভাগ মানুষ মাথাব্যথা বা শরীরের ব্যথার জন্য ব্যথা কমানোর ওষুধ বা পেনকিলার খান তাঁরা বুঝতে পারেন না যে ব্যথা যতক্ষণ সাহায্য করা সম্ভব ততক্ষণ সহ্য করাই ভালো। কারণ মুড়িমুড়কির মতো ব্যথা কমানোর ওষুধ খেলে যেমন সেই ওষুধের উপর একটা নির্ভরশীলতা আসে তেমনই এটা অভ্যাসে পরিণত হলে ভবিষ্যতে কিডনির সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যকৃতের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।


আমাদের এই ব্যস্ত জীবনে ইচ্ছে না থাকলেও শরীরের দিকে আমরা তেমন নজর দিতে পারি না বিভিন্ন অনিয়ম হয়। খাওয়া-ঘুম কিছুই সময় মতো বা পর্যাপ্ত হয় না বললেই চলে তাই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা লেগেই থাকে। আধুনিক জীবনযাপনের অনিয়মের একটা খুব সাধারণ শারীরিক সমস্যা যেটা দেখা যায় সেটা হল গ্যাস-অম্বলের সমস্যা। বাজারে তাই ঢালাও বিক্রি চলে অম্বলের ওষুধ।


গ্যাস-অম্বলের চিকিৎসায় এখানে এমন ১২টি সহজলভ্য উপাদানের উল্লেখ করা হল যেগুলো হয়তো আপনার রান্নাঘরে বা ফ্রিজেই থাকে-


১. তুলসী পাতা


এর শীতল এবং বায়ুনাশকারী উপাদান আপনাকে তাৎক্ষণিকভাবেই গ্যাস-অম্বল থেকে মুক্তি দেবে। সুতরাং গ্যাস-অম্বলের কোনো লক্ষণ দেখা গেলেই কয়েকটি তুলসী পাতা খেয়ে নিন। অথবা ৩-৪টি তুলসী পাতা সেদ্ধ করে এক কাপ গরম পানিতে কয়েক মিনিট রেখে দিন। এরপর তা পান করুন।


২. ফিনেল বা মৌরি


খাবার পর ফিনেল বা মৌরি গাছের পাতা চিবিয়ে খেতে পারেন গ্যাস-অম্বল ঠেকানোর জন্য। ফিনেল চা পান করার রয়েছে বহুমুখী উপকারিতা। পরিপাক নালীকে সুস্থ্য ও সুখী রাখতে ফিনেল চা বেশ সহায়ক। এই চা সবচেয়ে বেশি কার্যকর বদহজম এবং পেট ফাঁপার চিকিৎসায়। ফিনলে বীজের মধ্যে যে তেল রয়েছে তা এই দুটি সমস্যার সমাধানে বেশ কাজে লাগে।


৩. দারুচিনি


এটি প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড হিসেবে কাজ করে। ফলে এটি আপনার হজম ও শোষণ ক্ষমতার উন্নতি ঘটিয়ে আপনার পাকস্থলির অবস্থা আরো ভালো করতে পারে। অন্ত্রের সংক্রমণ প্রতিরোধে দারুচিনি চা পান করুন।


৪. ঘোল


ঘোলে থাকা ল্যাকটিক এসিড পাকস্থলিতে গ্যাস-অম্বলের সমস্যা দূর করতে বেশ কার্যকর। আরো ভালো ফল পাওয়ার জন্য এক গ্লাস ঘোলের সঙ্গে গোল মরিচ বা এক চা চামচ স্থল ধনে পাতা মিশিয়ে নিন।


৫. গুড়


গুড়ে রয়েছে উচ্চমাত্রার ম্যাগনেশিয়াম উপাদান। যা অন্ত্রের শক্তি বাড়াতে বেশ কার্যকর। এটি হজমে সহায়ক এবং আপনার হজম প্রক্রিয়াকে আরো ক্ষারীয় করে তুলবে ফলে গ্যাস কমবে। খাবার খাওয়ার পর ছোট্ট এক টুকরো গুড় খেয়ে নিন। গুড় দেহের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে এবং পেট ঠাণ্ডা করতেও বেশ কার্য়কর। আর একারণেই গ্রীষ্ম কালে গুড়ের সরবত খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।


৬. লবঙ্গ


ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা পদ্ধতি ও ভারতীয় আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রে হজমের সমস্যা দূরীকরণে লবঙ্গের জনপ্রিয়তা বহু পুরোনো। লবঙ্গ স্বভাবগতভাবে বায়ুনাশকারী। ফলে এটি খেলে পরিপাক নালীতে গ্যাস নির্গমণ হয় না। শিম ও কলাই রান্না করার সময় সঙ্গে লবঙ্গ মিশিয়ে নিন। এছাড়া গুঁড়ো লবঙ্গ এবং এলাচও খেতে পারেন। যা গ্যাস-অম্বলের সমস্যা দূর করে দুর্গন্ধযুক্ত নিঃশ্বাস বের হওয়া থেকে বাঁচাবে।


৭. জিরাপানি


গ্যাস নিষ্ক্রিয়করণ, হজমে সহায়তা এবং পেটের ব্যথা দূর করতে বেশ কার্যকর জিরা বীজ। ভাজা জিরা বীজ গুঁড়ো করে এক গ্লাস হালাক গরম পানিতে মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন। প্রতিবেলা খাবারের পর এই পানীয়টি খান।


৮. আদা


আদায় রয়েছে অসাধারণ হজম সহায়ক এবং প্রদাহরোধী উপাদান। খাবার খাওয়ার পর এক টুকরো আদা চিবিয়ে খান অথবা প্রতিদিন দুই থেকে তিনবার এক চামচ করে আদার রস পান করুন। অথবা এক কাপ গরম পানিতে আদা মিশিয়ে রস বের করে তা পান করুন।


৯. ঠাণ্ডা দুধ


দুধ পাকস্থলির গ্যাস্ট্রিক এসিডগুলো স্থিতিশীল করতে সহায়ক। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম যা পাকস্থলিতে এসিড নিঃসরণে বাধা দেয়। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো গ্যাস-অম্বলের সমস্যা দেখা দিলেই এক গ্লাস ঠাণ্ডা দুধ খেয়ে নিতে হবে।


১০. আপেল সিডার ভিনেগার


হালকা গ্যাস-অম্বলের সমস্যা হলে এর চিকিৎসায় প্রতিদিন এক বা দুইবার ১-২ চা চামচ আপেল সিডার ভিনেগার এক কাপ পানিতে মিশিয়ে পান করুন। অথবা এক গ্লাস পানিতে এক টেবিল চামচ আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করুন।


১১. নারকেল পানি


নারকেলের পানি পান করলে দেহের পিএইচ এসিডের মাত্রা আরো ক্ষারীয় হয়ে ওঠে। এ ছাড়া এটি পাকস্থলিতে শ্লেষ্মা উৎপাদনেও সহায়ক। যা পাকস্থলিকে অতিরিক্ত এসিড নিঃসরণের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। আর এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ ফলে তা হজমে সহায়তা করে পুনরায় গ্যাস-অম্বলের সমস্যা তৈরিতে বাধা দেয়।


১২. কলা
কলায় আছে প্রাকৃতিক অ্যান্টাসিড যা এসিড রিফ্লাক্সের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। গ্যাস-অম্বল থেকে রেহাই পেতে এটাই সবচেয়ে সহজ ঘরোয়া চিকিৎসা। প্রতিদিন একটি করে কলা খান তাহলেই গ্যাস-অম্বলের সমস্যা থেকে মুক্ত থাকবেন।


তাই গ্যাসট্রিক-অম্বলের ওষুধটি বুঝেশুনে খাওয়া উচিত। চিকিৎসকের পরামর্শের বাইরে এটি গ্রহণ না করাই ভাল।


বিবার্তা/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com