শিরোনাম
হাসপাতালে টাকার বিনিময়ে মিলছে সিট
প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০১৯, ১৪:১৭
হাসপাতালে টাকার বিনিময়ে মিলছে সিট
আকরাম হোসেন
প্রিন্ট অ-অ+

সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল অন্যতম। দেশজুড়ে ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন হাসপাতালটির চিকিৎসকসহ কর্মীরা । এ পর্যন্ত ২ হাজার ১৬৫ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করে বাড়ি পাঠিয়েছেন এখানকার চিকিৎসক ও নার্সসহ কর্তৃপক্ষ।


এদিকে ডাক্তার ও নার্সদের বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকলেও রয়েছে হাসপাতালের আয়াদের বিরুদ্ধে। রোগী ও রোগীর স্বজনরা বলছেন, ভর্তির পর সিট পেতে আয়াদের টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে সহজে সিট মেলে না। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, টাকা নেয়ার বিষয়ে প্রমাণ পেলে সাথে সাথেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


মিরপুর ১২ নম্বর থেকে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে এসেছেন সানি। ১৫ আগস্ট ভর্তি হন তিনি। ভর্তির পর তাকে জানানো হয়- কোনো সিট খালি নেই। সিট না পেয়ে তিনি প্রথমে থাকেন ১-নং ওয়ার্ডের ফ্লোরে। পরে এক আয়া এসে তাকে জানান তার কাছে একটা সিট আছে। যদি তাকে টাকা দেয়া হয়, তাহলে সিট দেয়া হবে। মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে সিট পাওয়ার সুযোগটা সানি লুফে নেন সানি। এরপর থেকেই সিটে রয়েছেন তিনি।


অসুস্থ ভাইয়ের ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে অব্স্থান করছেন এক ব্যক্তি। ভর্তি আছেন শিশু ওয়ার্ডে। সিট পেতে তাকে টাকা দিতে হয়েছে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে নাম না প্রকাশের শর্তে তিনি বিবার্তাকে বলেন, আপনার সিট লাগবে নাকি? যদি সিট লাগে তাহলে আয়াদের (পরিচ্ছন্নকর্মী)সাথে যোগাযোগ করেন। কিছু টাকা দিলে তারা সিটের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন।


কত টাকা দিলে সিটের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা তো ২০০ টকা চায়। তবে কমেও সিট পাওয়া যায়। ৫০ বা ১০০ টাকা দিলেই হয়ে যায়। আমাদের কাছে ২০০ টাকা চেয়েছিল। পরে ৫০ টকা দিয়ে সিট নিয়েছি।



নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী বিবার্তাকে জানান, সিট পেতে ২০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। যারা টাকা দিচ্ছে না, তারা হাসপাতালের ফ্লোরে রয়েছেন। আর টাকা দিলে সিট মিলছে। আমার কাছ থেকেও টাকা নিয়েছে তারা।


অসুস্থ ছোট ভাই ইদ্রিস আলীকে নিয়ে হাসপাতালে আছেন ইয়াসিন আলী। তিনি বিবার্তাকে বলেন, হাসপাতালে রোগী আসার সাথে সাথে আয়ারা টলি নিয়ে হাজির হয়ে যান। তবে তারা রোগী নেয়ার পর টাকা চান। টাকা না দিলে জোরাজুরি করেন। অনেকটা জোর করে টাকা নেন। ইয়াসিন আফসোস করে বলেন, আয়াদের তো সরকার টাকা দেয়। তারপরও তারা আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয়।


রোগীর আত্মীয় সেজে সিটের জন্য এক নিরাপত্তাকর্মীর কাছে গেলে তিনি বলেন, আপনার সিট কখন লাগবে। যদি সিট না পান, তাহলে আমার কাছে আইসেন। আমি ব্যবস্থা করে দেব।


বিনিময়ে টাকা দিতে হবে নাকি জানতে চাইলে ওই নিরাপত্তাকর্মী বলেন, খুশি হয়ে যা দেন। একটা সিট দেখিয়ে বলেন, এ রোগীকে আমি সিটে তুলে দিয়েছি। আমাকে ২০০ টাকা দিয়েছে।


সিট নিয়ে এসব অভিযোগের ব্যাপারে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বির্বাতাকে বলেন, কোনো আয়া বা অন্য কেউ যদি সিটসহ অন্যান্য কারণে টাকা চায়, তাহলে এখান থেকে তাকে বদলি করে দেয়া হবে। যদি কেউ প্রমাণ দেখায় বা আপনারা একটু ধরিয়ে দিন। সে যদি আমাদের হাসপাতালের হয়, তাহলে তার চাকরি চলে যাবে। আর যদি আউট-সোর্সিংয়ের কর্মী হয়, তাহলে তার উইনিফর্ম রেখে বের করে দেয়া হবে।



তিনি বলেন, আমাদের এখানে কোনো কর্মকর্তা টাকা নিতে পারবেন না। তবে কোনো রোগী যদি কারো কাজে সন্তুষ্ট হয়ে খুশি মনে বকশিস দেন, তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। তারা তো গরিব মানুষ, বকশিসের টাকা নিতে আমরা নিষেধ করতে পারি না। তবে টাকা আদায়ের জন্য কোনো ধরনের জোর বা চাপ দেয়া নিষেধ।


জানা গেছে, হাসপাতালটিতে মোট ২ হাজার ৪৮৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন। এদের মধ্যে ২ হাজার ১৬৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। ৩১৮ জন বর্তমানে ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে ১১২ জন পুরুষ, ৯৪ জন নারী ও ১১২ জন শিশু রয়েছে।


ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া বির্বাতাকে আরো বলেন, ডেঙ্গু রোগীর প্রকোপ গত কয়েক দিনের থেকে কিছুটা কমে আসছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে এখানে। যা আগের ২৪ ঘণ্টার চেয়ে ১৯ জন কম।


বিবার্তা/আকরাম/উজ্জ্বল/রবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com